Posts

গল্প

অপেক্ষার শেষ প্রহর

March 12, 2025

Ajharul islam anik

135
View

অপেক্ষার শেষ প্রহর

রাতের আকাশটা আজ একটু বেশিই নীল। জোছনার আলো জানালার পর্দা গলে রুমের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়েছে। রাহাত বিছানায় শুয়ে আছে, কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। বারবার ফোনের স্ক্রিনটা দেখে। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মেসেজটা আসছে না।

রাহাতের মনে পড়ে, ঠিক এক বছর আগে এই রাতেই তিশার সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয়েছিল। ভার্সিটির লাইব্রেরিতে বই খুঁজতে গিয়ে আচমকা ধাক্কা লেগেছিল মেয়েটার সাথে। তিশা তখন একটা মোটা বই পড়ছিল, আর রাহাত খুঁজছিল একই বই। ধাক্কার পর বইটা পড়ে গেল, দু’জনেই একসঙ্গে তুলতে গিয়ে হাত ছুঁয়ে গেল একে অপরের।

— “সরি!”

— “না, আপনাকেই দরকার ছিল।”

তিশা প্রথমে অবাক হয়েছিল, তারপর মুচকি হেসে বলেছিল, “মানে?”

রাহাত বলেছিল, “বইটার দরকার ছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, বইয়ের চেয়েও আলাপটা বেশি জরুরি।”

সেদিনের পর থেকে দু’জনের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপ নিল। রাহাত বুঝতে পারছিল, তিশাকে ছাড়া তার জীবন অপূর্ণ।

কিন্তু গত এক মাস ধরে তিশা কেমন যেন দূরে সরে যাচ্ছে। মেসেজের রিপ্লাই দিতেও দেরি করে, কল করলে ব্যস্ত বলে কেটে দেয়। রাহাত জানে, কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু সে বোঝার আগেই তিশা বলল, “আমাদের আর কথা বলা উচিত না, রাহাত।”

রাহাত কিছুই বুঝতে পারছিল না। সে বহুবার জানতে চেয়েছে, কিন্তু তিশা বলেছে, “আমি ভালো নেই, প্লিজ আমাকে বোঝার চেষ্টা করো।”

আজ সেই বিশেষ রাত, যে রাতে প্রথমবার তাদের দেখা হয়েছিল। রাহাত অপেক্ষা করছে, যদি তিশা কোনোভাবে ফিরে আসে!

রাত বাড়তে থাকে, ফোনের স্ক্রিন ফ্যাকাশে হয়ে আসে। হঠাৎ একটা মেসেজ আসে—

"বাইরে এসো।"

রাহাত দেরি না করে ছুটে বেরিয়ে যায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তিশা, চোখে জল, মুখে একরাশ ক্লান্তি।

— “তিশা! তুমি...!”

— “রাহাত, আমি চলে যাচ্ছি। বিদেশে, হয়তো অনেকদিনের জন্য।”

রাহাত বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।

— “কিন্তু কেন?”

তিশা বলে, “বাবার চাকরির কারণে। আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারিনি। চেয়েছিলাম ভুলে যেতে, কিন্তু পারিনি।”

রাহাত ধীরে তিশার হাত ধরে, “তাহলে থেকো! আমাদের গল্পটা শেষ হতে দিও না।”

তিশা চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর বলে, “সব গল্পের শেষ একরকম হয় না, রাহাত। আমাদের গল্প হয়তো দূরত্বের হবে, কিন্তু শেষ হবে না।”

তারপর ধীরে ধীরে রাতের আঁধারে তিশা হারিয়ে যায়, আর রাহাত চেয়ে থাকে সেই দিকে, যেখানে অপেক্ষার শেষ প্রহর শেষ হয়ে নতুন এক সকাল অপেক্ষা করছে।

Comments

    Please login to post comment. Login