স্কুলের শেষের দিকে এসে তৃষ্ণা আর আরিয়ানের সম্পর্কটা যেন একটু অন্যরকম হয়ে উঠেছিল। আগের মতোই বন্ধুত্ব, আগের মতোই খুনসুটি—কিন্তু কোথাও একটা পরিবর্তন ছিল।
তৃষ্ণা নিজেও জানত না, কেন আরিয়ান চোখে চোখ রেখে কথা বললে তার বুক কেঁপে ওঠে। কেন আরিয়ান কাছে এলে তার মনে হয়, সময়টা একটু থেমে যাক।
আরিয়ানও টের পেত। তৃষ্ণার একটু মন খারাপ থাকলেই সে বুঝতে পারত, তৃষ্ণা কিছু না বললেও সে বুঝে নিতো।
একদিন সন্ধ্যায় স্কুল থেকে ফেরার পথে হঠাৎ বৃষ্টি নামল। চারপাশ ভিজে একরকম স্বপ্নিল হয়ে গেল।
তৃষ্ণা মাথার ওপর হাত রেখে দৌড় দিতে চাইল, কিন্তু আরিয়ান হাত টেনে ধরল, "বৃষ্টিতে ভিজবে না?"
তৃষ্ণা অবাক হয়ে বলল, "ভিজে লাভ কী?"
আরিয়ান হাসল, "লাভ কিছু নেই, কিন্তু অনুভূতি আছে। একবার দাঁড়াও, দেখো কেমন লাগে।"
তৃষ্ণা একটু দ্বিধা করল, তারপর চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তার গাল বেয়ে নামছিল, হাতের তালুর ওপর ঠান্ডা জল জমছিল।
আরিয়ান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকল।
"তোমাকে এত সুন্দর লাগে কেন?"****—এই কথাটা তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে আসতেই সে নিজেকে আটকাল।
তৃষ্ণা চোখ তুলে তাকাল, "কিছু বললে?"
আরিয়ান দ্রুত মুখ ফিরিয়ে নিল, "না… কিছু না।"
কিন্তু সেই মুহূর্তটা ছিল নিঃশব্দে একটা স্বীকারোক্তি।
---
তৃষ্ণার জন্মদিনে আরিয়ান প্রথমবারের মতো ওকে একটা উপহার দিল—একটা ছোট্ট রুপোর চেইন, যার মাথায় ছোট্ট একটা নীল পাথর বাঁধানো।
"এটা কেন দিলে?" তৃষ্ণা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
"কারণ এটা তোমার চোখের রঙের মতো।"
তৃষ্ণা কিছু বলল না। নীল পাথরটা হাতে নিয়ে দেখল। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর ধীরে বলল, "তুমি কি মনে করো, আমরা বড় হয়েও একসঙ্গে থাকব?"
আরিয়ান নিশ্চয়তার সাথে বলল, "অবশ্যই।"
"যদি না পারি?"
"তাহলে অপেক্ষা করব, যতদিন না এক হতে পারি।"
তৃষ্ণার বুকের ভেতর একটা আশ্চর্য অনুভূতি জাগল। হয়তো এটাকেই ভালোবাসা বলে।
কিন্তু জীবন কি কখনো এত সহজ হয়?
চলবে…….