Posts

চিন্তা

যেখানে আনন্দ হাসে

March 12, 2025

তৌকির আজাদ

165
View

সময় কখনো থেমে থাকে না, থেমে থাকা সময়ের আদিখ্যেতাকে উপেক্ষা করে এই আমাদের বেঁচে থাকার জীবনের ফাঁকে ফাঁকে কিঞ্চিৎ হাসিঠাট্টার আনন্দের আদলে বদলাতে থাকা নতুনত্বের নিত্য দৈনন্দিন মুহূর্তের উৎকণ্ঠা কে যদি আর ভালো না লাগে তবে সেটা সময়ের অপচয়ের অনধিকার চর্চা । পৃথিবীতে  যথার্থ যে আসলে কোনটা সেটার ছোঁয়া মেলে ঘটতে থাকা ঘটনার স্থিতির চাঞ্চল্যের আবহের আড়ালে।

আমি উপন। অন্য বাকি ৮/১০ টা মানুষের থেকে আলাদা ভাবতে থাকাদের একজন। যদিও, এই  ভাবতে থাকাতে সন্দেহের যে কোনো অনুপস্থিতি নেই সেটা ভাবনার স্বভাবের সংশয়। 

প্রতিবছরের মতই রোজার মাস এসেছে, ধর্ম প্রাণ মানুষ তাঁদের নিজ নিজ সাধ্যমতো সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য বা তাঁর সান্নিধ্যের তাগিদে সাওম পালন করছেন।

কথাটা দৃষ্টিকটু হলেও  এটা সত্য যে আমাদের দেশের সামগ্রিক আত্মসামাজিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের ভঙ্গুর অবস্থার জন্যেই মূলত মানুষ নিজস্ব ধর্ম পালনে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রথমত উপার্জনের বা কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততা ও তার সীমাবদ্ধতা এবং দ্বিতীয়ত নিজেকে বা নিজস্ব আমিত্বকে পেলে পুষে সাজাতে গড়তে গড়তে মনুষ্যত্বকে ভুলে থাকার অবস্থাতে অভ্যস্ত হয়ে। আমি হয়ত নিজেও এর বাইরের কেউ না।  

তবুও আমি কাজের ফাঁকে ফাঁকে বা জীবনের বাঁকে বাঁকে সত্য খুঁজে বেড়াই। নিজ জীবন বৃত্তান্ত এখানে উহ্য থাক। 

 সন্ধ্যায় ইফতারি শেষে প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্যে আমি বাইরে বেরুই এক কাপ চা একটা সিগারেট সাথে একশ টাকা কাউকে দিবো, দিয়ে দেখবো সে যেই প্রার্থনা করে বা যেটুকু  আনন্দে আনন্দিত হয় সেটা কেমন। বৈজ্ঞানিক ভাষায় এটাকে পিপলস প্লেজার বা এ ধরনের কিছু বলা যেতে পারে।

সে যাইহোক, আমার দেশের মানুষের অতটুকু জ্ঞান, বিদ্যা, শিক্ষার সুযোগ যদি থাকতোই তবে পথে ঘাটে বাজারে মসজিদ প্রাঙ্গণে ছিন্নমূল দরিদ্র মানুষ গুলির দেখা মিলত না যেভাবে সত্য ঠিক একই ভাবে আমাদের ভেতরের চেতনার ঘুণে ধরা মনুষ্যত্বে মানবিক সহজতা পুনরায় জাগ্রত করার জন্য বিধাতা নিশ্চয়ই ওই মানুষ গুলির ভাগ্য ভিন্ন ভাবে সাজাতেন। আমরা শিক্ষিত মানুষেরা বলে বেড়াই, 'আমরা সবাই একই মানুষ, কেউ আলাদা বা অভিন্ন না, সমাজের সবাই সমান অধিকারের দাবিদার' কিন্তু আদতে  শ্রেণিবিভক্ত সমাজ চরিত্রের এই বিভক্তি আমরা এড়িয়ে চলতে থাকার ভণ্ডামির বন্ধুত্বে মশগুল হয়ে আদৌ কি পেরেছি নিজেকে চিন্তে পারতে ?

উত্তর সম্ভবত সবাই জানেন, শুধু মানবেন না।  

মোটরসাইকেল তখন চৌরাস্তার কাছাকাছি, একটা ভ্যান গাড়ি লক্ষ করলাম। পেছনে একটা ৮/১০ বছরের ছেলে খালি পায়ে ভ্যানগাড়ির পেছন পেছন ছুটছে আর ধাক্কা দিচ্ছে, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর কালো টিশার্ট পরিধিতো ছেলেটাকে দেখে মায়া লাগলো। তখনই ঠিক করলাম আজ ওর জন্য সামান্য হলেও কিছু করবো।

 মটরসাইকেল ভ্যান পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে দেখলাম চালকের সাথে আরো একটা ছেলে আছে পাশ থেকে গাড়ি ঠেলছে। আমি ওদের একটু আগে গিয়ে থামলাম। আমার কাছাকাছি আসতেই আমি চালককে একটু দাঁড়াতে বললাম, উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে মাথা উঁচিয়ে কি বা কেনো এরকম প্রশ্নের ভঙ্গি করলো ততক্ষণে সেই অল্পবয়সের ছেলেটা আমার পাশাপাশি চলে আসতেই আমি তার হাতে টাকাটা দিয়ে দিলাম। সে টাকা নিতে একটুও দেড়ি করলো না। চলন্ত ভ্যানগাড়ি চলতে থাকলো। পাশের ছেলেটা ছোট ছেলেকে কি যেন প্রশ্ন করতেই ছেলেটা বুকপকেটের দিকে ইঙ্গিত করে দেখাল। দেখাতে দেখাতে তিড়িংবিড়িং করে একটা আনন্দের ছন্দে নেচে উঠলো, তখন হয়ত অবাক বিস্ময়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলেন ধরণি, বিশ্ব, পৃথিবী, প্রকৃতি ও তাঁর সৃষ্টি  - এটুকু মুহূর্তই  বেঁচে থাকা, থেকে থেকে আনন্দ দেখার পরম পাওয়া।

হয়ত, আজ রাতের খাবারের জোগান একটু ভালো হবে হয়তবা অন্য কোনো বড় ভাই ছিনিয়ে নিয়ে পলিথিনের আঠা কিনবে হয়তবা অন্য কিছু …  

সাময়িক আনন্দের সমঝোতার অসংগতি যারা মেটাতে পারেন তাঁরা বরাবরই নিশ্চুপ নীরবতার সঙ্গী স্বার্থের সন্ধানে ব্যস্ত শহর বন্দর নগরী …    

Comments

    Please login to post comment. Login