Posts

কবিতা

এলিজি ফর আছিয়া!

March 13, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

150
View

আছিয়া ধুঁকেছে, আছিয়া কেঁদেছে,
আছিয়া মরেছে —তবু তোমাদের চোখে জল ঝরেনি!
তোমাদের হৃদয় কাঁপেনি!
তোমাদের বিবেকের দরজা খুলেনি!
শোনো পুরুষ, আছিয়া মরে গেছে।
তোমাদের হাতে গড়া সমাজের শ্বাসরোধী দেয়ালে,
তোমাদের নখের দাগ লেগে থাকা বিচারহীনতার ফাঁদে, তোমাদের চোখের সামনেই মরে গেছে আছিয়া।
তার আর্তনাদ বাতাসে জমা থেকেছে,
তার রক্ত মাটির গভীরে ইতিহাস লিখেছে—
কিন্তু তোমরা নীরব!

তোমাদের কি লজ্জা নেই? তোমাদের কি ভয় নেই?
এই সমাজের আঁচলে লুকানো সকল কুৎসিত দাগে
তবে তোমাদেরই শরীরের নিকৃষ্ট আস্ফালন?
এই মসজিদের মিনার, এই মন্দিরের শিখা,
এই আদালতের কাঠগড়া, এই ঈশ্বরের দণ্ড—
সবকিছুই তাহলে পুরুষের?

অতঃপর আছিয়া কাঁদতেও পারেনি, পারেনি চিৎকার করতে, কারণ সে জানত —এখানে ন্যায়বিচার নেই, এখানে সত্যকে চাপা দেওয়ার জন্য ধর্মের বর্ম আছে, এখানে নির্বিচারে লাশ হয়ে যাওয়ার নাম ‘সমাজ’।

শোনো পুরুষ, তোমাদের শিরদাঁড়া কাঁপে না?
তোমাদের মায়েরা কি এক ফোঁটা চোখের জল ফেলবে না? তোমাদের বোনেরা কি আরেকবার ভয় পাবে না? তোমাদের স্ত্রীরা কি রাতে তোমাদের থেকে সরে যাবে না? শোনো, আজ এক আছিয়া মরে গেছে,
কাল আরেকটি কালো চাঁদ উঠবে, আবারও একজন আছিয়া মরে যাবে! কিন্তু তোমরা থাকো নীরব, তোমরা থাকো শক্ত, তোমরা থাকো বিচারহীন পুরুষের দম্ভ নিয়ে! কিন্তু মনে রেখো—
আছিয়ার রক্ত চুপ করে থাকবে না। তার কান্না বাতাসে জমে থাকবে। তার দগ্ধ আত্মা রাত্রির নিস্তব্ধতায় ডাক দেবে —তার শরীর ছিঁড়ে খাওয়ার বিচার একদিন হবেই!

আর তখন…
তখন এক আছিয়া উঠে দাঁড়াবে, তার পোড়া শরীরের ভস্ম নিয়ে, তার নখের নিচে জমে থাকা ন্যায় নিয়ে,
তার ঠোঁটে জমে থাকা আগুন নিয়ে। সে দাবানলের মতো ধেয়ে আসবে —এই সমাজের শিরদাঁড়া পুড়িয়ে দিতে! এই বিচারহীনতার অট্টালিকা ধ্বংস করতে!

আজ আছিয়া নেই।
সে শুয়ে আছে নিথর, শীতল,
তার চোখে ভয়, তার ঠোঁটে চাপা কান্নার দাগ এখনো অম্লান। সে চিৎকার করতে পারেনি,
কারণ জানত —এই সমাজে চিৎকার হারিয়ে যায়
ধর্মের শ্লোকে, বিচারের কালো গর্তে।

তার শরীর ছিল নরম, তাই ছিঁড়ে খেয়েছে নরপিশাচ।
তার আত্মা ছিল পবিত্র, তাই এখনো বাতাসে ভাসে।
পুরুষেরা চুপ। মোল্লারা নীরব। বিচারকরা অন্ধ।
আছিয়া একদম কাঁদে না, সে মৃতদেরও ওপারে নীরব নিস্তব্ধ। যেন প্রশ্ন করে —আমার মৃত্যুর দায় কার?

জালালউদ্দিন রুমি বলেন,
"দুঃখ যদি তোমাকে নিজের গভীরে টেনে নেয়,
জেনো, সেই গহ্বরই একদিন আলোয় ভরে উঠবে।"
আছিয়া আর নেই। সে পড়ে আছে নীরবে,
যেন এক নিঃসঙ্গ নক্ষত্র —আলোহীন, দিকহীন।
তার চোখে যে ভয় ছিল, তা ছিল না কেবল ধর্ষকের জন্য, ছিল সমাজের জন্য, ছিল ন্যায়বিচারের শূন্যতার জন্য।

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বলেন—
"যেখানে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হয়,
সেখানে প্রতিটি নীরব মানুষই অপরাধী।"
ওই তো তার মৌন আত্মা চারিধারে ভেসে বেড়ায়,
ওই নীরবতা একদিন বজ্র হবে, তার ছিন্নপ্রায় অস্তিত্ব একদিন জাগ্রত হবে। তখন বিচারহীন সমাজের আয়নায় নিজেদের পিশাচ মুখ কেমনে চিনবে কাপুরুষ?

পুরুষেরা এখনো চুপ, ধর্ম এখনো নীরব,
বিচার এখনো ঘণ কুয়াশায় ঢাকা। আছিয়ার পবিত্র দেহটি হিম হয়ে আছে মৃত্তিকায়। কিন্তু আঙুল উঁচিয়ে ধরা তার কঠিন কঠোর প্রশ্ন বাতাসে বারুদ হয়ে জ্বলছে —"আমি কি কেবল শরীর ছিলাম?"

লেখক: সাংবাদিক 
১৩ মার্চ ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login