Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব -০৪)

March 13, 2025

Boros Marika

116
View


তৃষ্ণা কখনও ভাবেনি যে, সে আরিয়ান ছাড়া থাকতে পারবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আরিয়ান তার জীবনের এত গভীরে ঢুকে গেছে যে, ওকে ছাড়া কিছুই কল্পনা করা সম্ভব নয়।

স্কুল শেষের দিকে চলে এসেছে, আর এক মাস পরই সে ঢাকায় চলে যাবে। কিন্তু কাউকে সেটা ঠিকভাবে বলতে পারছে না।

একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দুজন পাশাপাশি হাঁটছিল। সন্ধ্যার নরম আলো রাস্তার ধারে ঝরে পড়ছিল, বাতাসে কেমন একটা বিষণ্ণতা লেগে ছিল।

"তোমার মন খারাপ?" আরিয়ান জিজ্ঞেস করল।

তৃষ্ণা মাথা নাড়ল, "না তো।"

"মিথ্যে বলছো। আমি বুঝতে পারছি।"

তৃষ্ণা গভীরভাবে তাকাল। এই ছেলেটা তার মনের কথা না শুনলেও বুঝে ফেলে, এটাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর।

হঠাৎ সে থেমে গেল। "আরিয়ান, যদি আমি দূরে চলে যাই, তুমি কী করবে?"**

আরিয়ান একটু অবাক হলো, তারপর হাসল। "তুমি যেখানেই যাও, আমি তোমার পাশে থাকব।"

তৃষ্ণার বুকটা ধক করে উঠল। সে নিচে তাকিয়ে বলল, "যদি তা সম্ভব না হয়?"

আরিয়ান এবার গম্ভীর হয়ে গেল। "তখন অপেক্ষা করব, যতদিন না তুমি ফিরে আসো।"

তৃষ্ণা চুপ করে থাকল। কিন্তু তার চোখে কেমন যেন একটা অদ্ভুত দৃষ্টি ফুটে উঠল। সে বুঝতে পারছিল, এই অনুভূতিটা বন্ধুত্বের চেয়ে অনেক গভীর।


---

একদিন তৃষ্ণার হাত কেটে গেল। স্কুলে ড্রয়িং ক্লাসে কাঁচ ভাঙার সময় অসাবধানে তার আঙুলে গভীর একটা কাট লেগে গেল।

সে ব্যথায় হাত টিপে ধরে বসে ছিল, কিন্তু হঠাৎ বুঝতে পারল, তার সামনে আরিয়ান হাঁটু গেড়ে বসেছে।

"হাত দাও," আরিয়ান নরম স্বরে বলল।

তৃষ্ণা কিছু বলতে চাইল, কিন্তু বলার আগেই আরিয়ান তার হাতটা আলতো করে ধরে তুলল। তার হাতের স্পর্শে এক মুহূর্তের জন্য তৃষ্ণার পুরো শরীরে কেমন যেন শিহরণ খেলে গেল।

আরিয়ান নিজের রুমাল বের করে তৃষ্ণার আঙুলে চেপে ধরল।

"এভাবে রক্ত পড়তে দিলে হবে?"

তৃষ্ণা তাকিয়ে দেখল, আরিয়ান খুব মনোযোগ দিয়ে তার ক্ষতটা পরিষ্কার করছে। সে এতটা সিরিয়াস হয়ে গেছে যে, কোনো কথা বলছে না।

তৃষ্ণার বুকটা একটু কেঁপে উঠল। এত যত্ন নিয়ে কেউ তাকে কখনও স্পর্শ করেনি।

তার মনে হলো, যদি এই মুহূর্তটা চিরদিনের জন্য থেমে যেত, তাহলে মন্দ হতো না।


--

একদিন স্কুলে একটা অনুষ্ঠান ছিল। তৃষ্ণা একটু দেরি করে পৌঁছেছিল, আর গিয়ে দেখল, আরিয়ান মঞ্চের পেছনে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে কথা বলছে।

সে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসছিল। মেয়েটার নাম ছিল মায়া। সে আরিয়ানের খুব ভালো বন্ধু, আর তৃষ্ণা জানত, মেয়েটা আরিয়ানকে পছন্দ করে।

তৃষ্ণা জানত, এটা কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু কেন যেন বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠল।

আরিয়ান তখনও কথা বলছিল, কিন্তু হঠাৎ তার চোখ তৃষ্ণার চোখের সঙ্গে আটকে গেল।

একটা সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, তিন সেকেন্ড…

তারপর আরিয়ান হালকা হাসল। "তৃষ্ণা, তুমি কখন এলে?"

তৃষ্ণা ঠান্ডা গলায় বলল, "অনেকক্ষণ হলো। তুমি তো বেশ ব্যস্ত ছিলে।"

আরিয়ান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল, তারপর মেয়েটাকে বিদায় জানিয়ে তৃষ্ণার দিকে এগিয়ে এল।

"তোমার কী হয়েছে?"

"কিছু না।"

"তোমার গলার স্বর বলে দিচ্ছে, কিছু একটা হয়েছে।"

তৃষ্ণা কিছু বলল না। তার শুধু মনে হচ্ছিল, কেন সে এতটা অস্থির হয়ে পড়ছে? কেন এই অদ্ভুত অনুভূতিটা হচ্ছে?

আরিয়ান হঠাৎ হাসল, "তুমি কি রাগ করেছো?"

"আমি কেন রাগ করব?" তৃষ্ণা গম্ভীর স্বরে বলল।

আরিয়ান একদম কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, "তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে, তুমি হিংসেয় জ্বলছো।"

তৃষ্ণা মুহূর্তের মধ্যে লাল হয়ে গেল। "নাহ, তুমি ভুল ভাবছো!"

কিন্তু আরিয়ান আর কিছু বলল না। শুধু একটু হেসে তাকিয়ে থাকল। সেই হাসির মধ্যে কী ছিল, তা হয়তো সে নিজেও বুঝতে পারেনি।

কিন্তু ওই দিনই প্রথমবার, তৃষ্ণা স্বীকার করল— সে আরিয়ানকে অন্য কারও সঙ্গে সহ্য করতে পারে না।


---

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kazi Eshita 3 months ago

    ৩ কোথায় গেলো? ভালো লাগলো পড়ে