পোস্টস

পোস্ট

যাপনের দুঃখসংক্রান্তি

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মুয়ায আবদুল্লাহ

মূল লেখক মুয়ায আবদুল্লাহ

আকাশটা জ্বলে আছে রোদে। তাপে পুড়ছে শহুরে ফুটপাত, সার বাধা গাড়ির কোলাহল। দীর্ঘ জ্যাম ঠেলে কোন সে দুঃখবোধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি? ভাবনারা খেই হারিয়ে ফেললে প্রবল নিঃস্বতায় লীন হয়ে যেতে থাকি। যেন আমার কোনো জীবনবোধ নেই, কোনো প্রশ্ন নেই। শুধুই ঘড়ির কাঁটা বেয়ে সময়ের আয়ু কমা দেখি—কাতর সুন্দর। 

২.
যে চলে যাওয়ার, সে যেকোনো উপায়ে চলেই যাবে। তাকে বেঁধে রাখবার যে প্রাণান্ত চেষ্টা—আসলেই কি তা আবেগের বশে করা? যে যায় সে যে তার সবটা নিঃস্ব করে থাকতে চেয়েছিলো, তা আর বোঝা যায় কই! একটা গোলাপের আড়ালে কি করে জমে থাকে ধূসর অভিশাপ! সেই অভিশাপ গায়ে মেখে কৃত্রিম সুখের সাগরে ভাসি, ডুবি। অথচ গত হওয়া দিনটার ভাঁজে অদৃশ্য আততায়ী শান দিচ্ছে বিষের নগ্ন ফলায়। ভয় হয় খুব। আত্মা-হত্যার ভয়।  

৩.
স্থিত হওয়ার মতো আমার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। উদ্ভ্রান্ত বাতাসের জোয়ার কোত্থেকে কোথায় যে ভাসিয়ে নিয়ে যায়—জানা হয় না। ক্লান্তিতে ভীষণ নুয়ে পড়া জীবন থেকে পালাতে গিয়ে ফিরে আসি চিরচেনা ঘরে। অথচ এখানে আসার কথা ছিলো না আমার। যেখানে প্রবেশের মুখে জর্জরিত হই অযাচিত বিষবাণে। প্রগাঢ় দুঃখরা বড়ো প্রতাপ নিয়ে আমার অধিকার নিতে চায় তখন—করুণ হেসে এড়িয়ে যাই তাদের ব্যথাতুর আলিঙ্গন।

৪.
কেমন একটা বোধশূন্য সময় পার করছি। বুকের ভেতর এমন উচাটন হাহাকার আর কখনো আসে নাই তো! আসে নাই বেমক্কা বিষাদের হাওয়া। আকাশ বৃষ্টি ঝরায় না কতদিন! একটু ভিজতে পারলে বোধয় স্থির কিছু ভাবনার কথা বলা যেতো। এখন কেবল খটোমটো বাতচিত নিজের সাথে নিজের। দূরাগত দুঃখরা আকাশ ভারী করে রেখেছে ভীষণ, পরিচিত মেঘেরা আর আসছে না এদিকটায়। একটা বার আসলে—একজোড়া কালো কাঁচের চুড়ির খোঁজ নিতাম, যে আমার কৃষ্ণচূড়ার বিকেল হারিয়ে ফেলার দুঃখে আত্মগোপন করেছে কোনো দিকশূন্যপুরে।

৫.
লেকের সবুজ জল ছুঁয়ে আসা গভীর বাতাসে উড়ে আসে প্রাচীন দহন। ছড়িয়ে যায় সমগ্র সত্ত্বায়, একান্তে। এতো এতো দুঃখ নিয়ে আপনার মুখোমুখি হতে কুন্ঠা হয় খুব! তবু ছুটে আসি—আড়াইশো কিলোর দূরত্ব ভেঙে, নিয়তই। গোপনের যত চাপা নিনাদ আপনাকে ঘিরে—ঝরে যায় সহস্রধারায়। দূরত্বের অজুহাতে চোখের আর্দ্রতা কি আদৌ আড়াল করা গেলো? না কি সংযমের নোনা বাঁধ ভেঙে তুমুল কান্না হয়ে ভাসিয়ে গেলো অভিমানের গহীন কোনো পাহাড়!

৬.
আমাকে ভালোবাসেনি কেউ কোনো দিন। যা পেয়েছি—তা কেবল ছাইরঙা বিষণ্নতা। এই 'মন' না পাওয়ার অবসরতায় ভেবে আকুল হই—দূর সূত্রে কাছে পাওয়া একজন মায়াময় মানুষ আলো ফুরিয়ে আসা এই বিকেলে আমার অপেক্ষায় আছেন। আবোল তাবোল যা-ই বলি, তিনি মন দিয়ে শুনেন। এই-ই আমার নিঃস্ব মনের সুখ। অটোগ্রাফের নাম করে যখন লিখে দেন ভালোবাসা—তখন আমার মনে হতে থাকে; এ জীবন বড়ো মনোহর। এইটুকুন প্রাপ্তির জন্য হলেও বেঁচে থাকা যায়।

৭.
বৃষ্টি হয় কি হয় না আজকাল, বাতাসে ভেসে থাকে অতলান্তিক বিষাদের খুশবু।