নীল বরণ ভালোবাসা
রাত তখন গভীর। আকাশে একফালি চাঁদ, তারার আলো ম্লান। গ্রামের সেই পুরনো বাঁশবাগানের পাশ দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে চলেছে নীলয়। তার চোখে গভীর এক ভাবনা—জীবন, ভবিষ্যৎ আর… নিরা।
কতদিন হয়ে গেল! শেষবার দেখা হয়েছিল বটগাছের ছায়ায়, ঠিক চার মাস আগে। নিরার চোখে ছিল অভিমান, ঠোঁটে ছিল নীরবতা।
— "তুমি কি কখনোই ফিরবে না?" নিরার সে দিনের প্রশ্ন এখনো কানে বাজে।
— "আমি ফিরব, নিরা। একদিন নিশ্চয়ই ফিরব।"
কিন্তু বাস্তবতা বড় নির্মম! বাবা-মা নেই, একমাত্র ছোট বোন মায়াকে পড়াতে হবে। শহরে গিয়ে কাজ না করলে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যাবে। নীলয় ভালোবাসলেও, দায়িত্বকে এড়িয়ে যেতে পারেনি।
কিন্তু আজ এতদিন পর গ্রামে ফিরে মনে হচ্ছে, সবকিছু বদলে গেছে। বাতাসেও এক অজানা শূন্যতা। নিরার খোঁজ নিতে হবে!
সকাল হতে না হতেই নীলয় চলে গেল নিরাদের বাড়ি। উঠোনে বসে আছে নিরার মা, রুক্ষ চেহারায় কেমন যেন এক কঠোরতা।
— "চাচি, নিরা কই?"
মহিলা তাকালেন, দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
— "তুই এখন এলি? এত দেরি করলি যে সবকিছু শেষ হয়ে গেল!"
নীলয়ের বুকের ভেতর ধক করে উঠল।
— "মানে?"
— "নিরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আগামী শুক্রবার চলে যাবে শ্বশুরবাড়ি।"
মাটির নিচে যেন পা নেই নীলয়ের। এতদিন ধরে যে স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে ছিল, তা ভেঙে গেল নিমেষে।
তবে কি সত্যিই সব শেষ?
বিয়ে ঠিক হয়ে গেলেও নিরার মন যেন কোথাও বেঁধে আছে। সে জানে, নীলয় একদিন ফিরবেই। কিন্তু সে দিন কি খুব দেরি হয়ে গেল?
শেষ রাতের চিঠির মতো, নিরা এক সন্ধ্যায় নীলয়কে খুঁজতে গেল। বাঁশবাগানের পথে দু'জন মুখোমুখি হলো।
— "তুমি ফিরেছ?" নিরার গলা কাঁপছে।
— "হ্যাঁ, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে, তাই না?"
নিরার চোখে জল, তবু হাসল।
— "ভালোবাসা কি কখনো দেরি করে?"
নীলয় কিছু বলল না। হাত বাড়িয়ে দিল। নিরা তার হাতে হাত রাখল।
বাতাসে এক টুকরো নীল বরণ আলো ছড়িয়ে পড়ল। হয়তো এটাই ভালোবাসার সত্য—সময় যতই কাটুক, যারা সত্যিকারের ভালোবাসে, তারা ফিরে আসে... ঠিক নীল আকাশের মতো, নিরবধি।