Posts

সমালোচনা

ট্রাম্প কি চীনের দুঃস্বপ্ন না স্বপ্ন?

March 15, 2025

এম আর লিটন

Original Author স্টিভ সাং

38
View

ডোনাল্ড ট্রাম্প কি চীনের জন্য সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন, না কি স্বপ্নের মতো কিছু? তিনি আসলে উভয়ই, তবে সমানভাবে নয়। স্বল্প-মেয়াদে, তার ট্যারিফভিত্তিক বাণিজ্যনীতি বেইজিংয়ের জন্য সমস্যা তৈরি করবে। তবে মাত্র কয়েক সপ্তাহেই তিনি যে পরিমাণ ক্ষতি করেছেন, তা ঠেকাতে চীন সম্ভবত সারা শীতযুদ্ধকালেও এতটা চেষ্টা করেনি। এর প্রভাব শুধু চীনের জন্যই নয়, বরং পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ঐক্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থানেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এটি চীনের নেতাদের স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু।

যে ট্যারিফগুলো ইতোমধ্যেই আরোপিত হয়েছে। তা যথেষ্ট গুরুতর ও বেইজিং এটি ভবিষ্যতের আরও কঠোর পদক্ষেপের পূর্বাভাস হিসেবে দেখতে বাধ্য। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের মতো পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু এবার তিনি যে হুমকি দেন, তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। চীনের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই সংকটপূর্ণ। বাড়তি বাণিজ্যযুদ্ধ তার জন্য একেবারেই প্রয়োজনীয় নয়। যদিও চীনের কূটনীতিকরা তা মুখে কিছুটা উল্লাসের সঙ্গে প্রকাশ করেন।

তবে ট্যারিফ ও বাণিজ্যযুদ্ধ এমনকি যদি বাড়েও, তা দীর্ঘমেয়াদী বা অল্প কিছু সময়ের সমস্যা হতে পারে। শি জিনপিং চীনা জনগণকে স্থির থাকতে নির্দেশ দেবেন এবং তারা তা পালন করবে। মূল্য অবশ্যই অনেক হবে। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি লাভ হবে। যেটা ট্রাম্প অজান্তে শি জিনপিংকে উপহার দিয়েছেন, বিশেষত দীর্ঘমেয়াদে।

ইউক্রেনের শান্তি প্রস্তাব, যেটা মূলত রুশ শর্তে এবং কানাডা ও গ্রিনল্যান্ড নিয়ে তার অপ্রতিরোধ্য পরিকল্পনাগুলো চীনের জন্য বিরাট মূল্যবান। তিনি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নষ্ট করেছেন। আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলো প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার থেকে পিছু হটতে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যেমন ইউএসএআইডি, জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এটি বেইজিংয়ের কাছে কেন মূল্যবান? কারণ চীন একটি বৈশ্বিক কৌশল তৈরি করেছে। যেটা শি জিনপিং চিন্তাধারার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে। এর লক্ষ্য হল ২০৪৯ সালের মধ্যে জাতীয় পুনর্জাগরণের চীনা স্বপ্ন পূর্ণ করা। যেটা পিপলস রিপাবলিকের প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী। ট্রাম্প শি জিনপিংয়ের এই স্বপ্নকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছেন।

সাধারণ ভাষায় শি জিনপিংয়ের কৌশল হলো চীনকে আবার তার নিজস্ব শর্তে মহৎ বানানো। এর মাধ্যমে তিনি চীনের প্রাচীন গৌরবের পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য রাখেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, চীন একটি বৈশ্বিক নেতা হয়ে উঠবে। বিশ্বের ভাগ্য নির্মাণে নেতৃত্ব দেবে। যেটি শি জিনপিংয়ের তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগের মাধ্যমে হবে — উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও সভ্যতা।

এটি নতুন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা নির্মাণের ব্যাপারে নয়। বরং বর্তমান ব্যবস্থাকে চীনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায়। যেটা গ্লোবাল সাউথের সমর্থন লাভ করবে। এর মানে হলো, জাতিসংঘে চীনের স্বার্থকে পশ্চিমা দেশগুলোর স্বার্থের চেয়ে প্রাধান্য দেওয়া।

শি জিনপিংয়ের কৌশল, যদিও গ্লোবাল সাউথের কাছে কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। কিন্তু তা ধনী গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। আট দশক ধরে, গণতান্ত্রিক দেশগুলো প্রায়শই যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, কখনও কখনও বড় বড় বিরোধ থাকা সত্ত্বেও। গণতান্ত্রিক পশ্চিমা দেশগুলোর ঐক্যই তাদের শীতযুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল। ট্রাম্প প্রথম ইউক্রেন প্রস্তাব দিয়েই ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করেছেন। যেটা চীনা কূটনীতি অর্জন করতে পারেনি।

যতটুকু চীন চেষ্টা করেছিল, ট্রাম্প সে কাজটি একেবারে ত্বরান্বিত করেছেন। তিনি এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যেখানে ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনায় বসানো, ইউরোপীয় দেশগুলোকে তুচ্ছভাবে পাশ কাটানো। রাশিয়ার শর্তে যুদ্ধের শেষ করতে দেওয়া—এগুলো চীনের কূটনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়েছে। 

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি চীনের পক্ষে কাজ করেছে। চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের অস্পষ্টতা ও প্রতারণার ব্যাখ্যা দিতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা আর বিশ্বাসী নয়। এর ফলে, চীন এখন বিশ্বকে দেখাতে পারছে। এটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করার সময় এসে গেছে। ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডই ওই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে।

মোটের ওপর, ট্রাম্প তার নিজের স্বার্থে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পন্থা অনুসরণ করে শি জিনপিংয়ের চীনা স্বপ্নকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

  • স্টিভ সাং, হংকং-এ জন্মগ্রহণকারী রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ।
  • দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জাপানের ওসাকায় ২০১৯ সালের ২৯ জুন জি২০ সম্মেলনের পাশে এক বৈঠকের সময় শি জিনপিংয়ের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। ফটোগ্রাফ: সুসান ওয়ালশ/এপি

Comments

    Please login to post comment. Login