
শীতের এক সন্ধ্যা। কুয়াশা ঢেকে রেখেছে পুরো শহরটাকে। রোদেলা বসে আছে জানালার পাশে, হাতে একটা চিঠি। চিঠিটা লিখেছে তানভীর—তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, যাকে ছাড়া সে কখনও নিজের অস্তিত্ব কল্পনাও করেনি। কিন্তু আজ তানভীর নেই। সে চলে গেছে চিরতরে, রেখে গেছে শুধুই স্মৃতি আর কিছু অপ্রকাশিত কথা।
তানভীর আর রোদেলার প্রেমটা ছিল একদম সিনেমার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনেই দেখা, তারপর এক অদ্ভুত সংযোগ। তারা একে অপরের প্রেমে পড়েছিল এতটাই গভীরভাবে যে মনে হতো, এ ভালোবাসা কোনোদিন ভাঙবে না।
কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস তাদের একসঙ্গে থাকতে দিল না। রোদেলার পরিবার কখনও মেনে নেবে না তানভীরকে—এই বাস্তবতা ছিল তাদের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় বাধা। তানভীর মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, আর রোদেলা ধনী ব্যবসায়ীর কন্যা। সমাজের চোখে তারা অসম।
অনেক লড়াই করেছিল তানভীর, রোদেলাকে পাওয়ার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রোদেলার বাবা জোর করে তার বিয়ে ঠিক করে দিল। যেদিন বিয়ের দিন ধার্য হলো, সেদিন তানভীর অনেক কেঁদেছিল। সে চেয়েছিল রোদেলা একবার শুধু তার হাতটা ধরে বলুক—"আমার সঙ্গে চলো, সব ছেড়ে দেবো।"
কিন্তু রোদেলা পারেনি। পরিবারের ভালোবাসা, দায়িত্ব আর সমাজের চোখের সামনে সে ভেঙে পড়েছিল। তার ভেতরে এক যুদ্ধ চলছিল—তানভীরের ভালোবাসা বনাম বাস্তবতা।
তানভীর সেদিন চলে গিয়েছিল চিরদিনের মতো, রেখে গিয়েছিল এই শেষ চিঠিটা—
"রোদেলা,
তুমি জানো, আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি। কিন্তু ভালোবাসা শুধু পাওয়ার জন্য নয়, ত্যাগের জন্যও হয়। আমি চলে যাচ্ছি, কারণ আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও। হয়তো একদিন আমাদের গল্পটা পুরনো হয়ে যাবে, কিন্তু আমার হৃদয়ে তুমি চিরকাল থাকবে। যদি কোনো একদিন এই চিঠিটা পড়ো, তাহলে শুধু একবার জানবে—তোমার তানভীর কখনো তোমাকে দোষ দেয়নি, কখনো তোমাকে ভুলতে পারেনি।"
চোখের জলে চিঠিটা ভিজে গেল। রোদেলা জানে, এই ভালোবাসার কোনো শেষ নেই। হয়তো তারা একসঙ্গে থাকতে পারেনি, কিন্তু হৃদয়ের এক কোণে তারা আজও একে অপরের।
বাইরে কুয়াশার আড়ালে হারিয়ে যেতে যেতে, রোদেলা অনুভব করল—ভালোবাসা কখনও মরে না, শুধু সময়ের সঙ্গে তার রূপ বদলে যায়।