
প্রথম দেখা
সন্ধ্যার আলো তখন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে। চারপাশে ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলো, আর তার মাঝে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে আবির। তার হাতে ধরা একটা বিবর্ণ ছবি, যেখানে হাসছে সে আর তৃষা—তার জীবনের একমাত্র ভালোবাসা।
তৃষার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল একটি বইমেলায়। ছিমছাম মেয়েটির হাসি ছিল কেমন যেন আত্মার গভীরে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। আবির প্রথম দেখাতেই বুঝে গিয়েছিল, এ মেয়ে তার জীবনের অংশ হয়ে যাবে। আর ঠিক তাই-ই হয়েছিল। তাদের প্রেমটা ছিল বইয়ের গল্পের মতো, অথচ বাস্তব জীবনের গল্পগুলো কি কখনও নিখুঁত হয়?
ভালবাসার দিনগুলি
তৃষা আর আবিরের দিনগুলো ছিল স্বপ্নের মতো। নির্জন রাস্তার ধারে কফির কাপ হাতে গভীর আলাপে মগ্ন হওয়া, কিংবা একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজে বাচ্চাদের মতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা। দুজনেই স্বপ্ন দেখেছিল—একসঙ্গে একটা ছোট্ট বাড়ি হবে, যেখানে সকাল শুরু হবে ভালোবাসার উষ্ণতায়।
কিন্তু সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই না?
বিচ্ছেদ
এক সন্ধ্যায় তৃষার পরিবার জানিয়ে দিল, তাদের ভালোবাসা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সমাজের কিছু বাঁধাধরা নিয়ম, পারিবারিক মান-অভিমান—এসবের কাছে ভালোবাসা যেন তুচ্ছ। তৃষাকে বাধ্য করা হয় বিয়ের জন্য, আর আবির পড়ে থাকে একা, ভালোবাসার দগদগে ক্ষত বুকে নিয়ে।
সেই রাতেই বৃষ্টি হচ্ছিল প্রচণ্ড। আবির সেই চিরচেনা বেঞ্চিতে বসে ছিল, যেখানে একদিন তৃষা বলেছিল, “আমরা কখনও আলাদা হবো না।” কিন্তু বাস্তবতা বড় নিষ্ঠুর।
শেষ প্রতীক্ষা
আজও আবির সেই ছবিটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির মধ্যে, চোখের জল মিশে যাচ্ছে বৃষ্টির ফোঁটায়। তার সামনে দিয়ে অনেক মানুষ হেঁটে যাচ্ছে, কিন্তু তার পৃথিবী থমকে গেছে সেই সন্ধ্যাতেই। ভালোবাসার কোনো মৃত্যু নেই, কিন্তু বিচ্ছেদের ব্যথা মানুষকে মেরে ফেলে একটু একটু করে।
তৃষা সুখে আছে কিনা, আবির জানে না। শুধু জানে, ভালোবাসার মানুষকে কাছে না পাওয়ার কষ্টটাই সবচেয়ে বড় কষ্ট। আর এই কষ্ট নিয়েই সে কাটিয়ে দিচ্ছে একের পর এক নিঃসঙ্গ রাত।
একদিন যদি তৃষা ফিরে আসে? না, কেউ ফিরে আসে না।
শেষ লাইন:
বৃষ্টি পড়ছে। আবিরের হাতে ধরা ছবিটা ভিজে গেছে। হয়তো এভাবেই একদিন তার সব স্মৃতি মুছে যাবে, কিন্তু বুকের গভীরে থেকে যাবে একটা না বলা দীর্ঘশ্বাস।