Posts

গল্প

নরওয়ের ড্রাউগর: সমুদ্রের অভিশপ্ত (পর্ব-১)

March 19, 2025

Sherin Armana

Original Author শিরিন

Translated by শিরিন

101
View
নরওয়ের ড্রাউগর: সমুদ্রের অভিশপ্ত  (পর্ব-১)

সমুদ্রের ডাক

সমুদ্রের গর্জন যেন আকাশকে বিদীর্ণ করে দিচ্ছিল। অন্ধকার মেঘে ঢাকা আকাশে চাঁদ মাঝেমাঝেই মেঘের ফাঁক থেকে উঁকি দিচ্ছিল, যেন রহস্যময় এক দৃশ্যের সাক্ষী হতে চাইছে। এরিক তার ক্ষুদ্র নৌকার হাল ধরে বসে ছিল, তার হাত কাঁপছিল ঠান্ডা বাতাসে। সমুদ্রের গন্ধ, লবণের স্বাদ, এবং গর্জন—সব মিলিয়ে যেন তাকে স্বাগত জানাচ্ছিল এক অজানা যাত্রায়।

এরিকের চোখে তার পিতামহের ছবি ভেসে উঠল। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত নাবিক, যার নাম শুনলেই সমুদ্রপাড়ের মানুষজন ভয়ে কেঁপে উঠত। কিন্তু এক রহস্যময় রাতে, তিনি এবং তার জাহাজ সমুদ্রে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। এরিক শৈশব থেকে শুনে এসেছে, তার পিতামহ ড্রাউগরের শিকার হয়েছিলেন—সমুদ্রের অভিশপ্ত প্রাণী, যে মৃত নাবিকদের আত্মাকে শাস্তি দেয়।

"এবার আমি সত্যি জানব," এরিক নিজেকে বলল। তার হাতে ছিল একটি পুরানো মানচিত্র, যেটি সে তার পিতামহের পুরনো সিন্দুক থেকে পেয়েছে। মানচিত্রে একটি রহস্যময় দ্বীপের অবস্থান চিহ্নিত ছিল, যার নাম লেখা ছিল "ক্র্যাকেন'স আইল্যান্ড"। স্থানীয়রা এই দ্বীপকে অভিশপ্ত বলে ডাকত, এবং কেউই সেখানে যেতে সাহস করত না। কিন্তু এরিকের মনে ছিল একটাই প্রশ্ন—এই দ্বীপের সাথে তার পিতামহের নিখোঁজ হওয়ার কী সম্পর্ক?

নৌকা এগিয়ে চলল। হঠাৎ, সমুদ্রের গর্জন থেমে গেল, যেন সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেছে। এরিকের চারপাশে শুধু অন্ধকার এবং নিস্তব্ধতা। তারপর, দূর থেকে একটি অদ্ভুত আলো দেখা গেল। আলোটি যেন পানির নিচ থেকে উঠে আসছিল, এবং ধীরে ধীরে এরিকের দিকে এগিয়ে আসছিল।

"এটা কী?" এরিকের কণ্ঠে ভয় মিশ্রিত কৌতূহল।

হঠাৎ, নৌকাটি একটি শক্তিশালী ঢেউয়ে আঘাত খেল। এরিক নৌকার হাল শক্ত করে ধরে রইল, কিন্তু তারপরই সে একটি ভয়ঙ্কর শব্দ শুনতে পেল—যেন কেউ গভীর থেকে ডাকছে। শব্দটি এতটাই ভয়ানক ছিল যে এরিকের হৃদয় কেঁপে উঠল।

"কে там?" এরিক চিৎকার করে বলল।

কিন্তু উত্তর আসল না। শুধু সমুদ্রের গর্জন আবার শুরু হলো, এবং এরিকের নৌকার চারপাশে পানি যেন ফুটতে শুরু করল। তারপর, সে দেখল—একটি বিশাল, অন্ধকার ছায়া পানির নিচ থেকে উঠে আসছে। ছায়াটি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠল, এবং এরিক বুঝতে পারল—এটি ড্রাউগর।

ড্রাউগরের চোখ জ্বলজ্বল করছিল, যেন দুটি আগুনের গোলক। তার দেহ ছিল পচা মাছের মতো গন্ধে ভরা, এবং তার হাত—না, সেগুলো হাত নয়, বরং বিশাল আঁশযুক্ত পাখনা, যেগুলো দিয়ে সে পানিকে বিদীর্ণ করে এগিয়ে আসছিল।

এরিকের নৌকা আবারও একটি ঢেউয়ে আঘাত খেল, এবং এবার নৌকাটি সম্পূর্ণভাবে উল্টে গেল। এরিক পানিতে পড়ে গেল, এবং ঠান্ডা পানি তাকে গ্রাস করতে শুরু করল। সে হাতপা ছুড়তে লাগল, কিন্তু ড্রাউগর ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছিল।

তারপর, একটি রহস্যময় কণ্ঠস্বর শোনা গেল, যেন সমুদ্রের গভীর থেকে উঠে আসছে:


"তুমি এখানে কেন এসেছ?"

এরিকের চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে এল। সে বুঝতে পারল না, সে বেঁচে আছে নাকি মৃত। শুধু সেই কণ্ঠস্বর তার কানে বাজতে লাগল, আর ড্রাউগরের জ্বলজ্বলে চোখ তার মনে গেঁথে গেল।

ক্লিফহ্যাঙ্গার:
এরিক কি বেঁচে থাকবে? ড্রাউগর কেন তাকে ডাকল? এবং এই রহস্যময় দ্বীপের রহস্য কী? পরবর্তী পর্বে জানতে থাকুন!

Comments

    Please login to post comment. Login