Posts

পোস্ট

আমাদের কফি হাউজে ফেরা

March 29, 2025

সাজিদ রহমান

25
View

গতকাল বিকেলে সাফিনকে নিয়ে হাজির হয়েছিলাম আমার শৈশবে। শৈশব কৈশোরের একটা দীর্ঘ সময়-বিশেষ করে হাজারও বিকেল কেটেছে, ঘন্টার পর ঘন্টা ফুটবল খেলেছি-সেই রহমতনগর কলোনী মাঠে। সেখানে একটা মজার ঘটনা ঘটে। সেটা বলবো, তার আগে ঐ সময় মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছিলো, সেটা বলি।

২০১৮ সালের নভেম্বর মাস। কলকাতা শহর। একটা রিকশা নিয়ে হাজির হই কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজে। রিকশাওয়ালার সাথে এক হুলস্থুল কান্ড ঘটে। ঘটনার ফোকাস সেদিকে নয় বলে বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছি।  মান্নাদের বিখ্যাত 'কফি হাউজের আড্ডাটা আজ নেই' এর সেই কফি হাউজ দেখতে। যদিও পরে জেনেছিলাম, মান্না দে নিজে কোন দিন সেই কফি হাউজে আড্ডা দেননি।

একটা বেশ পুরাতন ভবন। ভিতরের সাজ সজ্জা আরও পুরনো ধাচের। দেয়াল, সিড়ি, বসার ব্যবস্থা, প্রায় সবকিছুতে পুরাতনের ছোঁয়া।  দেয়ালে কিছু ছবি দেখে অবশ্য সে খেদ থাকলো না। অনেক অনেক বিখ্যাত লোক এখানে আড্ডা দিয়েছেন (এখনও দেন নিশ্চয়)।  অনেক বিখ্যাত গান, গল্প, কবিতা, আন্দোলনের আঁতুড়ঘর এই  কফি হাউজ। সেই কফি হাউজে আমরা, ভাবতে বেশ লাগছিলো।

আমাদের হাতে সময় খুব কম। তারপরেও অন্তত এক কাপ কফি না খেলে কী নিয়ে স্মৃতিচারণ করবো-ভেবে কফির অর্ডার দিই। কফি এলো। মুখে দিয়েই মনে পড়লো ভানুর কথা। উত্তম-সূচিত্রা জুটির প্রথম ছবি 'সাড়ে চুয়াত্তর' এর ভানুর একটা বিখ্যাত ডায়লগের কথা মনে পড়ে। উত্তম, ভানুরা যে মেসে থাকে সেখানে আসে সূচিত্রা পরিবার। ব্যাচেলর পোলাপান বিভিন্ন উসিলায় সেই পরিবারে ঢু মারে। চা খাওয়ার ছলে। সূচিত্রা পরিবারের চা অমৃত, এক পর্যায়ে ভানু বলে বসে 'মেসের চা তিতা.....'।

কফি হাউজের কফি মুখে দিয়েই বুঝতে পারি, সে কি বিস্বাদ কফিরে বাপ-তবুও অমৃত জ্ঞান করে পান করি।

কলোনীর মাঠে ফিরি। তখন ছিলো ফুটবলের সময়। আমরা মূলত ফুটবল খেলতাম। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে ঘন্টার পর ঘন্টা ভিজে ফুটবল চলতো। আমাদের উপর ছিলো ম্যারাডোনার বিশেষ প্রভাব। কেউ পায়ে বল পেলে অন্যকে আর পাশ দিতো না। ম্যারাডোনার মত ৯ জনকে ড্রিবলিং করে গোল দিবে। আমিও কম ছিলাম না। সেই সব দিনের কথা ভাবলে অবাক লাগে।

মাঠে ঢুকেই দেখতে পাই কয়েকজন এক পাশে ক্রিকেট খেলছে। ক্লাব থেকে ফুটবল নিয়ে সাফিন ও আমি কয়েক মিনিট খেলি। আমার শৈশবের মাঠে সাফিনের শৈশবকেও আনতে পেরেছি-বিষয়টা বেশ আনন্দের।  আসলে সবারই একটা কফি হাউজ থাকে, রহমতনগর কলোনী মাঠ টা আমাদের কফি হাউজ। আমরা নেই ঠিকই, এই মাঠ কিন্তু সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে, কফি হাউজের মত।

ইফতারের আয়োজন চলছিলো। চান ভাই, সোহেল, আলিফ, জন, ডাক্তার লায়ন, রাব্বি  সহ অনেকে ছিলো যারা এক সময় এক সাথে ফুটবল খেলেছি- ওরা সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলো।

দিনের আলো থাকতে থাকতে ছবি তুলতে যাই। আর ঠিক ঐ সময় রেল ইন্জিন (লোকোমোটিভ) চলে আসে। আমি বুঝে ওঠার আগেই দেখি একজন সেটাকে ইশারায় থামিয়ে দিয়েছে। আমাদের ফটো ফ্রেমে রাখার জন্য রেলইন্জিনকে থামিয়ে রাখা। পোলাপানের কাজ দেখে না হেসে পারি না। এরপর সবাই মিলে ইফতারে শামিল হই।

ভালো সময় কেটেছে। আয়োজক সকলকে অশেষ ধন্যবাদ।

Comments

    Please login to post comment. Login