সম্প্রতি নাসার পার্কার সোলার প্রোব (Parker Solar Probe) সূর্যকে কার্যত “ছুঁয়ে” যাওয়ার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করেছে। এটি সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩.৮ মিলিয়ন মাইল (প্রায় ৬ মিলিয়ন কিলোমিটার) দূরত্ব অতিক্রম করেছে, যা মানবসভ্যতার জন্য এক অসাধারণ সাফল্য।
পার্কার সোলার প্রোব: সূর্যের রহস্য উদঘাটনের অভিযাত্রী
২০১৮ সালে নাসা এই মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করে, যার মূল লক্ষ্য সূর্যের বহিঃস্তরের (করোনা) রহস্য উন্মোচন করা। সূর্যের এই অঞ্চল থেকেই সৌরঝড় (Solar Wind) উৎপন্ন হয়, যা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং পৃথিবীর আবহাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ গ্রিডে প্রভাব ফেলে।
সূর্যকে "ছোঁয়া"র অর্থ কী?
মানুষের পাঠানো কোনো মহাকাশযান এর আগে কখনোই সূর্যের এত কাছে পৌঁছাতে পারেনি। পার্কার সোলার প্রোব বিশেষভাবে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এটি সূর্যের তীব্র তাপ ও বিকিরণ সহ্য করতে পারে। এর শক্তিশালী কার্বন-কম্পোজিট হিট শিল্ড প্রায় ১৩৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম, ফলে এর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রগুলো কার্যকর থাকে।
এই “ছোঁয়া” আসলে সূর্যের করোনার ভেতরে প্রবেশ করা, যেখানে এটি সরাসরি সৌর কণা, চৌম্বক ক্ষেত্র ও প্লাজমার তথ্য সংগ্রহ করছে। এসব তথ্য সৌর ঝড় ও সৌর বায়ুর গঠন, গতিবিধি ও প্রভাব সম্পর্কে আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে।
এই অর্জনের তাৎপর্য
এই ঐতিহাসিক সাফল্য আমাদের সৌরজগতের মূল চালিকাশক্তি—সূর্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এ গবেষণার ফলে আমরা সৌর ঝড়ের পূর্বাভাস আরও উন্নত করতে পারব, যা পৃথিবীর কৃত্রিম উপগ্রহ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পার্কার সোলার প্রোব আগামী কয়েক বছরে আরও কাছাকাছি যাবে, যা একসময় মাত্র ৩.৮৩ মিলিয়ন মাইল দূরত্বে পৌঁছাবে। প্রতিটি অভিযান থেকে সংগৃহীত তথ্য আমাদের সূর্যের কার্যক্রম ও সৌরজগতের গভীরতর অধ্যয়নে দিগন্ত খুলে দেবে।

মানবসভ্যতার এই অসাধারণ অগ্রযাত্রা বিজ্ঞানের প্রতি আমাদের সীমাহীন কৌতূহল ও প্রযুক্তির সক্ষমতাকে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণার নতুন দ্বার উন্মুক্ত করবে।