Posts

চিন্তা

রহস্য -২

April 3, 2025

Alam Rashid

17
View

 রহস্য -২ লেখা হচ্ছে একটি অবিশাস্য সত্য ঘটনা হতে। এখানে ঘটনাটি বর্ণনাকারী তার

পিতার কাছ থেকে শুনেছে।আর পিতা অবশ্যই  তার সন্তানকে মিথ্যা বলবে না।  আর

যিনি এই কথাটি বলেছেন তিনি মিথ্যা বলার লোক না। ঘটনাটা ব্রিটিশ আমলের।মহিষার

গ্রামের ঘটনা। মাদারীপুর ভেঙে শরীয়তপুর মহকুমা গঠন করা হয়। পরবর্তীতে শরীয়তপুর

জেলায় পরিণত হয়। বর্তমানে মহিষার শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার একটি

গ্রাম।


 

…………………………………………………………………………………

মায়োইসর দীঘি


 

ঘটনাটি মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্গত মহিষার গ্রামের। মহিষার মাদারীপুর মহকুমার ভেদরগঞ্জ থানার একটি প্রাচীন গ্রাম। গহীন জঙ্গলে পরিপূর্ণ এক

জনবহুল লোকালয়। মহিষার দীঘির নাম এ গ্রামের নাম। মায়ই পুত্রার দীঘিতে পানি আনার ঘটনা নিয়ে এ নামকরণ মহিষার  দীঘির কিংবদন্তি মায়ই  পুত্রাকে  কেন্দ্র করে, স্থানীয় লোককাহিনীতে পরিপূর্ণ । কাহিনী অনুসারে, গ্রামটি একবার একটি মারাত্মক খরার সম্মুখীন হয়েছিল, যার ফলে জলের অভাব দেখা দিয়েছিল যা এর বাসিন্দাদের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছিল। এই সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসাবে,ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা দ্বারা পরিচালিত, গ্রামবাসী  গ্রামের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করেন এবং গ্রামবাসীদের সেখানে একটি পুকুর খননের নির্দেশ দেন। সন্দিহান অথচ মরিয়া, গ্রামবাসীরা সেই  নির্দেশনা অনুসরণ করে। খনন সম্পন্ন করার পর, পুকুরে জল আসছিলো না। তখন মায়ই  পুত্রাকে স্বপ্নের নির্দেশানুসারে জল ফেলতে বলা হয়। ফজরের সময় তারা কলস নিয়ে জল ঢালতে যায় পানি ফেলার পর দ্রুত গতিতে দীঘি ভরে যাচ্ছিলো তখন পুত্রা অল্প বয়স , দ্রুত উপরে উঠে আসে কিন্তু বয়স্ক মায়ই উঠে আসতে পারে নাই। তখন পুত্রা বলে,

 “মায়ৈ সার” অর্থাৎ উঠে এসো বা সারো বা শেষ করো বা  সমাপ্ত করো ।  

 তখন থেকেই এই দীঘির নাম হয় মায়ইসার যা পরবর্তীতে হয় মহিষার।  জল

অলৌকিকভাবে পুকুরটি ভরাট করে, যা সম্প্রদায়ের জন্য জলের একটি টেকসই উৎস

প্রদান করে। এই অনুষ্ঠান এবং  মায়ই  পুত্রার  হস্তক্ষেপের সম্মানে, পুকুরটির নামকরণ

করা হয় মায়ইসার দীঘি, এবং এটি গ্রামবাসীদের জন্য আশা ও স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক

হয়ে ওঠে।মহিষার দীঘি নিয়ে অনেক প্রচলিত গল্প আছে যার সত্য মিথ্যা আজও  জানা

যায় নাই। এখানে প্রাচীন আমলে দাওয়াত এর থালা বাসন ডেক ডেকচি আসতো আবার

অনুষ্ঠানের পর তারা সেগুলো সেখানে রেখে দিতো।  একবার কে যেন সেগুলো থেকে

কিছু রেখে দিয়েছিলো বলে আর আসে নাই, এখানেই এই ঘটনার সমাপ্তি ঘটে।   

 মহিষার দীঘি
 

মায়ইসার দীঘি শুধু জলাশয়ের চেয়ে বেশি; এটি মায়ইসার গ্রামের সম্মিলিত স্মৃতি ও

পরিচয়কে মূর্ত করে। পুকুরটি প্রতিকূলতার মুখে সম্প্রদায়ের অধ্যবসায় এবং বিশ্বাস ও

ঐক্যের গুরুত্বের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। বছরের পর বছর ধরে, এটি সামাজিক

বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতাকে শক্তিশালী করে স্থানীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং

সমাবেশের জন্য একটি সাইট হয়ে উঠেছে।আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রধান যা “গলুইয়া

খোলা” নামে  পরিচিত, প্রতি বছর এখানে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে এই মেলা বসে। 



 

    মাদারীপুর

                                                                                 

এই মহিষারের তুলাতলা পাঠশালার পিছনের বৃহত ও সমৃদ্ধশালী বাড়ি যা সর্দার বাড়ি নামে

  পরিচিত। এই বাড়ির ৩ পুরুষ সন্তান মাদারী পুর যাবে মামলা মোকদ্দমার জন্য। সেই

সময় মাদারীপুর মহকুমায় জজের একটা আদালত ছিল যাতে তৃণমূল পর্যায়ে দেওয়ানি

ফৌজদারি মামলা হতো। আসে পাশের গ্রামের মানুষ দূর দূরান্ত থেকে মাদারীপুর

মহকুমায় আসতো।   

মাদারীপুর, বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এলাকা, এর একটি সমৃদ্ধ

উত্তরাধিকার রয়েছে যা প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক এবং আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনগুলিকে

প্রতিফলিত করে। ১৮৫৪ সালে বাকেরগঞ্জ জেলার অধীনে একটি মহকুমা হিসাবে

প্রতিষ্ঠিত, মাদারীপুর প্রশাসনিক পুনর্গঠন ও উন্নয়নের একটি কেন্দ্রবিন্দু। এই নিবন্ধটি

মাদারীপুরের প্রশাসনিক বিবর্তনের ঐতিহাসিক গতিপথ, এই অঞ্চলে এর তাৎপর্য এবং

এর রূপান্তরের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।                                                                 

১৮৫৪ সালে একটি মহকুমা হিসাবে মাদারীপুরের প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ শাসনামলে বেঙ্গল

প্রেসিডেন্সির প্রশাসনিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় চিহ্নিত করে। সেই সময়ে,

বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ছিল ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তম প্রশাসনিক বিভাগগুলির মধ্যে একটি,

এবং এর শাসনব্যবস্থার জন্য দক্ষ পরিচালনার জন্য ছোট প্রশাসনিক ইউনিট তৈরির

প্রয়োজন ছিল। মাদারীপুরের মতো মহকুমাগুলি প্রশাসনিক কার্যাবলীকে বিকেন্দ্রীকরণ

করার জন্য, উন্নত শাসন ব্যবস্থা এবং স্থানীয় জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত

করার জন্য গঠিত হয়েছিল।

প্রাথমিকভাবে, মাদারীপুর বাকেরগঞ্জ জেলার অধিক্ষেত্রের অধীনে পরিচালিত হয়। এই ব্যবস্থা ব্রিটিশদের প্রশাসনিক অগ্রাধিকার প্রতিফলিত করে, যারা রাজস্ব সংগ্রহ, আইন প্রয়োগ এবং জনপ্রশাসনকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল। একটি মহকুমা হিসাবে, মাদারীপুর স্থানীয় শাসনের একটি কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে, নীতিগুলি বাস্তবায়নে সহায়তা করে এবং গ্রামীণ জনসংখ্যা এবং ঔপনিবেশিক প্রশাসনের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করে।



 

১৮৭৩ সালে, মাদারীপুর বাকেরগঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ফরিদপুর জেলার সাথে যুক্ত হওয়ার পর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পরিবর্তন হয়। এই সিদ্ধান্তটি ভৌগলিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত বিবেচনার দ্বারা চালিত হয়েছিল। ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জের চেয়ে মাদারীপুরের কাছাকাছি অবস্থিত, ভাল লজিস্টিক সংযোগ এবং প্রশাসনিক সংহতি প্রদান করে। মাদারীপুরকে ফরিদপুর জেলার সাথে একীভূত করার মাধ্যমে, ঔপনিবেশিক প্রশাসনের লক্ষ্য ছিল শাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করা।



 

১৯ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ ভারত জুড়ে সংঘটিত বৃহত্তর প্রশাসনিক সংস্কারের সাথে সংযুক্তিকরণটি ও একত্রিত হয়েছিল। এই সংস্কারগুলি আঞ্চলিক উন্নয়ন, উন্নত অবকাঠামো এবং স্থানীয় চাহিদা পূরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিষ্ঠার উপর ফোকাস দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। ফরিদপুর জেলার অধীনে, মাদারীপুরের গুরুত্ব বেড়েছে কারণ এটি জেলার প্রশাসনিক কাঠামোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, যা এর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে।

মাদারীপুর ক্রমাগত বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে এর ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার এর বাসিন্দাদের জন্য অনুপ্রেরণা এবং পরিচয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা এবং সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে, মাদারীপুর বাংলাদেশের আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের মডেল হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, মাদারীপুর মহকুমা পরবর্তীতে শরীয়তপুর মহকুমায় পরিণত হয় বর্তমান বাংলাদেশ আমলে। এই শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানার অন্তর্গত এই ঘটনার মহিষার গ্রাম এবং ইউনিয়ন। 







 

মাদারীপুর




 

যখন এটা ব্রিটিশ আমলে মহকুমা ছিল এটা তখনকার ঘটনা।সর্দার বাড়ির তিন পুরুষ সবচেয়ে বড় মাখন সর্দার বয়স ৩০,আবুল হোসেন সর্দার ১৬  এবং মঙ্গল সর্দার বয়স ১২।

আগেরদিন রাতে তারা দেওয়ানী মোকদ্দমার সব কাগজ পত্র গোজগাজ করে সকালে ফজরের পূর্বে রওয়ানা দেয়ার প্রস্তুতি নিলো। মাখন বললো,

" হোসেইন্না ফজরের অগ্খানে বাইরামু নাইলে কোট  পামুনা।"

বিকৃত করে নাম ডাকা গ্রামের লোকদের একটা স্বভাব।নাহলে হোসেন কত সুন্দর নাম এবং ডাকতে কত সহজ সেটা কেন এত কষ্ট করে হোসেইন্না বলবে। যাক সে কথা।  তারা ফজরের পূর্বে রওয়ানা দিলো। আধা ঘন্টা হাঁটার পর পথের পাশের এক মসজিদে তারা ফজরের নামাজ পরে নিলো। ঘন্টায় সাড়ে তিন মাইল বেগে হেটে ধামারণ বিল পার হয়ে তারা ৯ টা বাজে উকিলের চেম্বারে পৌছালো। চেম্বারের এক কোনায় বসে তারা চিড়া মুড়ি ও গুড় দিয়ে নাস্তা সারলো । দুপুরেও এই তাদের খাবার। মাখন বললো ,

"মঙ্গোইল্লা ভালা কইরা খাও দেহি , দুফুরে আবার কহন খাওনের সুযোগ ঘটে হেইডা আল্লাই জানে।"

এজলাসে গিয়ে দেখলো জজ আসে নাই।  দুপুরে আসবে। তাদের মাথায় হাত পড়লো।


 


 

দপুরে ওই চিড়া মুড়ি গুড় দিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে জোহরের নামাজ পরে অপেক্ষায় বসলো। লাঞ্চের পর বিচারক আসলেন। সিরিয়াল অনুসারে তাদের মামলার কাছে এসে তা শেষ করতে করতে আসরের শেষ পর্যায়ে চলে আসলো। কোর্ট থেকে বের হয়ে

আসরের নামাজ পড়তেই মাগরিবের সময় কাছাকাছি চলে আসলো।

উকিলের সাথে কথা বলে বের হতেই মাগরিবের আজান দিলো।  মাগরিবের নামাজ পরে

তারা ভাবতে বসলো। তাদের ভাবনা, এই সময় যদি রওয়ানা দেয় তবে ধামারণের বিলে পৌঁছাতে এশা পার হয়ে যাবে। এই জনহীন বিশাল বিল পার হওয়া সহজ বেপার নয়।  চোর ডাকাত তাদের চিন্তায় নেই, তাদের চিন্তা ভুত প্রেত জীন পরী। মাখন সর্দার ও আবুল হোসেন সর্দার দুজনেই সাহসী।  তারা চিন্তা করলো আসে পাশে কোনো আত্মীয় স্বজনের বাসায় ওঠা যায় কিনা? মাখন বলে উঠলো,

"আল্লা ভরসা রওয়ানা দেই। "

সে মুরুব্বি তার কথা মেনে তারা বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।

সারা দিনের খাটুনি , হালকা খাবার , তাদের রওয়ানা দেয়ার সময়কার জোর বা প্রফুল্লতা

এখন নেই। ধামারণের বিলের কাছে আসতে  তাদের এশা পার হয়ে গেলো। ধামারণের

বিল বলতে, এখনকার জেনারেশন কিছুই বুঝবে না। বিশাল বিল ছিল। দৃষ্টি সীমার মধ্যে

কোনো বাড়িঘর লোকালয় ছিল না। সেই বিল পার হওয়ার পর সহজে ভেদরগঞ্জ বা

মহিষার যাওয়া যায়।  বর্তমানে এ বিল নেই, এখন বাড়িঘর লোকালয়ে পরিপূর্ণ। তারা বিল

পার হতে লাগলো। ষাট ভাগ পার হওয়ার পর ঘটনা শুরু হলো  ।


 


 

হঠাৎ করে দশ হাত দূরে সাদা হুজুরী জোব্বা পড়া এক হুজুরকে দেখা গেলো। গায়ে সাদা

জোব্বা , মাথায় পাগড়ী। তার দুই পাশে দুজন মহিলা কালো বোরখা পড়া। তাদের সাথে

কোনো ব্যাগ পুটলি কিছুই নেই। দেখে মনে হচ্ছে তারা আসে পাশের বাসিন্দা। তারা

তিনজন হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো যাতে তাদের ধরতে পারে।  অনেক গতি বাড়িয়েও তারা

আগে যে দুরুত্বে ছিল তার থেকে তফাৎ একচুলও কমাতে পারলো না।  নতুন পথের সাথী

পেয়ে তারা তিন জনই উৎফুল্ল।  মঙ্গোল সর্দার বললো,

"দাদা দেখছোনি হুজুরের কত তাগুত , আর বিবিগুলিও মাশাল্লা। "

মঙ্গলের কথায়  বাকি দুজন হেসে উঠলো। 

কোনো মতে দুরুত্ব না কমাতে পেরে তারা অবাক হলো। 

মাখন সর্দার সিদ্ধান্ত নিলো তাদের ডাক দিবে। বললো,

"মঙ্গোইল্লা চিল্লান দিয়া ডাক দে, হেগো লোগে কথা কই। "

মঙ্গল সর্দার চিৎকার করে ডাকা শুরু করলো,

" হুজুর , ও হুজুর " 

তিন চারবার ডাকার পর হুজুর ঘুরে দাঁড়ালো। 

আরে হুজুর কই এজে ঘোড়ার মুখ। 

মঙ্গলের শরীর হালকা হয়ে হোসেনের উপর এলিয়ে পড়লো। হোসেন বললো, 

"ভাই আমার ঘাবড়াইস না। " 

তার এ কথায় মঙ্গল দৃঢ় হয়ে দাঁড়ালো। বললো, 

" না দাদা ভয় পাই নাই। "

এখন হুজুর পরিবার নতুন রূপ ধারণ করলো।  তারা তিনজনই সাদা ঘোড়ায় পরিণত হলো।

হুজুর বড় সাদা ঘোড়া আর তার সাথের দুই বিবি ছোট সাদা ঘোড়ায় পরিণত হলো। 

বড়ো ও ছোট দুই সাদা ঘোড়ার চিঁহিহি ডাকের শব্দে সর্দারত্রয়ের কঠিন দশা হলেও মাখন

সর্দার তাদের দৃঢ় থাকতে বললো,

"তোরা ডর  পাইছ না, এইডা বদ জিনের শয়তানি, আল্লাহ রাসূলের নাম ল , তিনবার জোরে

জোরে কুলহুয়াল্লাহ সূরা পর , আবার ইকটু থাইম্মা আবার জোরে জোরে পর আর লোহার

হাল চালাইন্না জমির উপর থাকিস ইনশাল্লাহ ওরা আমাদের কোনো খতি করতে পারবো না। "

আসলেই আবুল আর মঙ্গল দেখলো,  আল্লাহ রাসূলের নাম ও তিনবার কুলহুয়াল্লাহ সূরা

পড়ার সাথে সাথে ওরা  দূরে সরে যেতে থাকলো। আবার  লাল নীল রং হয়ে দাঁত ভেংচিয়ে

চিহি চিহি ডাক দিয়ে ওদের চতুর্দিকে ঘুরতে লাগলো। 

জীন বাহিনীও ভয় দেখিয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টার কসুর করলো না,আর সর্দার বাহিনীও

আল্লাহ রাসূলের নামের ভরসায় অটুট থেকে তার মোকাবেলা করলো। 

এইভাবে কিভাবে যে দুই ঘন্টা পার হয়ে গেলো তা সর্দাররা টের পেলোনা। এরই সাথে যে

ওরা বিলের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে তা ওদের জ্ঞানে ছিলনা। 

কিছুক্ষন পরে ওরা দেখলো অনেকগুলো লোক হ্যারিকেন লাঠি আলোর মশাল নিয়ে

এদিকে এগিয়ে আসছে।  ওদের বুকে সাহস বেড়ে গেলো।  বুঝতে পারলো আল্লাহ এ যাত্রা

তাদের জীবন তার কাছে নেওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করলো। 

গ্রামবাসী এসে প্রথমেই তাদের জিজ্ঞেস করলো,

"কি বেপার এতো জোরে আল্লাহ খোদার নাম লইয়া চিল্লাইতাছেন কা। " 

ওরা বললো,

"কেন এতো জোরে গোড়ার চিল্লানি হোনেন নাই। "

তারা বললো,

"আমি জানি না কোথায়।

সবাই ঘটনাটি বুঝতে পারলো। ওদের নিয়ে বিলের পাশেই এক বাড়িতে নিয়ে গেলো।

সেখানে বাড়ির মহিলারা ওদের লবন পানি খেতে দিলো। লবন পানির সাথে ভয়ের যে কি

সম্পর্ক তা আজও বর্ণনাকারী জানেনি , তবে ভয় পেলে গ্রামে যে লবন পানি খাওয়ায় এটার

মধ্যে অবশ্যই যে বিশেষ  কারণ আছে  তা সহজেই অনুমেয়। 

এরপরে মসজিদের এমাম সাহেব  বড় হুজুর) এলেন ওদের বিভিন্ন সূরা পরে ফাক দিলেন।

এরপর উনি কিছু কোরআন হাদিসের কথা শুরু করলেন।  


 

 হুজুর জীন জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা শুরু করলো,

“পবিত্র কুরআনে জীন জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে

(সূরা আল-জিন :৭২ ) পুরোপুরি জীন জাতি এবং তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে।

এছাড়াও, কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে জীনদের সৃষ্টির প্রকৃতি, কাজ, এবং তাদের প্রতি

আল্লাহর নির্দেশাবলী সম্পর্কে উল্লেখ আছে।

আল্লাহ তাআলা জীন জাতিকে আগুনের ধোঁয়াহীন শিখা থেকে সৃষ্টি করেছেন।

“আর জীনকে তিনি সৃষ্টি করেছেন আগুনের লেলিহান শিখা থেকে।”

(সূরা আর-রহমান: ১৫)



 

জীনরা সাধারণত মানুষের কাছে দৃশ্যমান নয়। তবে তারা বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে সক্ষম।

তারা আকাশে উঠতে পারে এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত চলাচল করতে পারে।

“আর আমরা (জীন) আকাশে চড়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমরা সেখানে শক্তিশালী প্রহরী ও

অগ্নিবাণের মুখোমুখি হলাম।”

(সূরা আল-জিন: ৮)



 

মানুষের মতো জীনদেরও আল্লাহর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

“আর আমি জীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদত করার জন্য।”

(সূরা আদ-ধারিয়াত: ৫৬)



 

জীন জাতি দুই ভাগে বিভক্ত:

মু’মিন জীন/ ভালো জীন : যারা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে এবং তার ইবাদত করে।

কাফির জীন/বদ জীন : যারা আল্লাহর বিরোধিতা করে, শয়তানের পথ অনুসরণ করে।

“আর নিশ্চয়ই আমাদের মধ্যে কিছু সৎকর্মশীল এবং কিছু অন্যথা, আমরা বিভিন্ন পন্থায়

বিভক্ত।”

(সূরা আল-জিন: ১১)”



 

এরপর হুজুর আজাজিল সম্পর্কে বলা শুরু করলো,

“আজাজিল ইবলিশের আরেক নাম। আল্লাহ্পাক একবার জীন জাতির উপর তাদের

কর্মলীলার জন্য ধ্বংসলীলা চালান। সব ধ্বংসের সময় একটি ফুটফুটে শিশুকে ফেরেস্তারা

আল্লাহ্পাকের সামনে পেশ করেন ওই শিশুটিকে মায়ার জন্য হত্যা করতে না পাড়ার

জন্য। সেই থেকে ইবলিস আল্লাহ্পাকের সান্নিধ্যে থেকে এলেম অর্জন করে পরবর্তীতে

ফেরেশতাদের মুয়াল্লিম হন। 


 

আল্লাহ তাআলা মানুষকে মাটি থেকে এবং জিনদের আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন।

ইবলিশ জিনদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কুরআনে আল্লাহ বলেন:



 

"আর আমি জিনকে সৃষ্টি করেছি আগুনের শিখা থেকে।"

(সূরা আর-রহমান: ১৫)



 

ইবলিশ মূলত সৎ আমলের কারণে ফেরেশতাদের মতো উচ্চ মর্যাদায় স্থান পেয়েছিল

এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে অবস্থান করত। তবে সে ফেরেশতা ছিল না; বরং জিনদের অন্তর্ভুক্ত।



 

যখন আল্লাহ আদম (আ.)-কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন এবং তাকে সিজদা করার আদেশ

দেন, তখন সব ফেরেশতা সিজদা করলেও ইবলিশ অবাধ্য হয় এবং সিজদা করতে

অস্বীকৃতি জানায়। তার এই অবাধ্যের কারণ ছিল অহংকার এবং হিংসা। ইবলিশ বলেছিল:



 

"আমি তার চেয়ে উত্তম। আমাকে তুমি আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ, আর তাকে

সৃষ্টি করেছ মাটি থেকে।"

(সূরা আল-আরাফ: ১২)



 

ইবলিশের এই অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করেন এবং তাকে

কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দেন। ইবলিশ তখন আল্লাহর কাছে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, সে

মানুষের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে এবং তাদের সঠিক পথ থেকে বিপথে পরিচালিত করবে।


 

"তুমি আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দাও, আমি তোমার সৎ বান্দাদের পথভ্রষ্ট

করব।"

(সূরা আল-হিজর: ৩৬-৩৯)



 

ইবলিশের প্রধান কাজ হলো মানুষকে আল্লাহর পথে থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। সে বিভিন্ন

প্রকার ফিতনা, লোভ-লালসা, এবং মিথ্যা আশ্বাসের মাধ্যমে মানুষকে ধোঁকায় ফেলার চেষ্টা

করে। তবে কুরআনে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর প্রকৃত বান্দা, তাদের ওপর ইবলিশের

কোনো ক্ষমতা নেই।

"আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোনো ক্ষমতা থাকবে না।"

(সূরা আল-হিজর: ৪২)

ইবলিশের কাহিনী থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা পাই:

  • অহংকার ও হিংসা ধ্বংসের কারণ।
  • আল্লাহর আদেশ অমান্য করার ফল মারাত্মক।
  • আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং তিনি তার বান্দাদের পরীক্ষা নেন।

ইবলিশের কাহিনী আমাদের জন্য সতর্কবাণী এবং ইমান দৃঢ় করার একটি উপায়। আল্লাহ আমাদের শয়তানের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।


 

ধামারণের বিল 


 

হুজুর জীন সম্পর্কে আরো বলেন,

“মানুষকে বিপথে নেওয়া: কাফির জীন বা শয়তানরা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়।

কথা শোনা ও প্রচার করা: জীনদের একটি দল নবী করিম (সা.)-এর কুরআন তিলাওয়াত শুনে ঈমান এনেছিল।

“বলুন, আমার কাছে ওহি এসেছে যে, জীনদের একটি দল কুরআন শুনেছে এবং তারা বলেছে, ‘আমরা এক অপূর্ব কুরআন শুনেছি।’”

(সূরা আল-জিন: ১)

যাদু ও প্রতারণা: কিছু জীন মানুষকে যাদু বা মিথ্যা প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষতি করে।

জীন জাতি আল্লাহর সৃষ্ট একটি বিশেষ সৃষ্টি, যারা মানুষের মতো স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী। তাদের মধ্যে ভালো এবং মন্দ উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে জীন জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে, যা তাদের প্রকৃতি, কাজ এবং আখিরাতের বিচার সম্পর্কিত বিষয়গুলো পরিষ্কার করে।”

এর পরে হুজুর  আরো বলেন,

" তোমাদের যে জীন আক্রমণ করেছিলো সেটা বদ  জীন। আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস থাকার কারণে সে তোমাদের ঘায়েল করতে পারে নাই। কিছুদিন আগে বিলের পশে এক লোকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিলো নিশ্চয় সে জিনদের ভয়ে মারা গিয়েছিলো।  তোমরা ঈমানের উপর দৃঢ় ছিলে  বিধায় তোমাদের কাবু করতে পারে নাই। "

হুজুরের আলাপ আলোচনার মধ্যেই, বাড়ির মালিকের ছেলে কবির মিয়া সদ্য রান্না করা  গরম ভাত, ডিম ভূনা , আলু ভর্তা ও ডাল নিয়ে হাজির হলো। ঘড়ির হিসেবে রাট ১১টা হবে গ্রামের হিসেবে তখন গভীর রাত।  বিদ্যুতহীন গ্রামে এশার পরই গভীর রাত।    হুজুরের তত্বাবধানে তারা খাবার শেষ করলো। কোনোমতেই তাদের রাতে আর বাড়ি ফিরতে দেয়া হলোনা।  কাচারীতে তাদের ঘুমের ব্যবস্থা করা হলো।  কাচারী গ্রামের বাড়ির এমন একটা ঘর যেটা বাড়ির অনেক পরিবার মিলে  বাড়ির শেষ সীমানায় তৈরী করে । যাতে সাধারণ মেহমান বা মুসাফিররা থাকেন। 

১০

অনেক ক্লান্ত এবং পরিশ্রম থাকার পরও তাদের ঘুম আসলো না। তাদের মনে একটাই চিন্তা আসলো ,

"এটা  আল্লাহ্পাকের সৃষ্টির কোন রহস্য। "




 



 

Comments

    Please login to post comment. Login