২ . ৪ . ২০২৫ইং।
( বাংলা শব্দ ভান্ডার)
দূর পাহাড়ের সীমানা ছেড়ে মন ছুটে যায় দিগন্ত তীরে তুমি কোথায় খুঁজে না পাই এই মন শুধু চাই তোমার ছবি তোমার স্মৃতি। হেঁটে চলেছি অজানা পথে খুঁজেফিরি যে তোমায় নীলিমায়। জোছনা ভরা স্বপ্নীল এই রাত আসবে কি নিয়ে হাসি অধরে। আবার
যায় এবং যাই শব্দের মধ্যে পার্থক্য হলো যায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে তৃতীয় পুরুষ বা Third person ক্ষেত্রে অর্থাৎ তারা, সে, কারো নাম বা মামুন, সুমনা এর ক্ষেত্রে উদাহরণ সে যায়। আবার যাই ব্যবহৃত হয়ে থাকে উত্তম পুরুষ বা First person তথা The Speaker এর ক্ষেত্রে অর্থাৎ আমি, আমরা এর ক্ষেত্রে আর উদাহরণ আমরা যাই , আর এটি শুধুমাত্র ব্যবহারিক পদ্ধতি , কিন্তু ব্যাকরণগত ভাবে আরো বিস্তৃত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ বিদ্যমান , অর্থাৎ বাংলা শব্দের শেষে " ই " এবং " য় " এর ব্যবহার । আর বাংলা শব্দভাণ্ডার হলো বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার যার মূল এবং আদি উৎস হলো পালি এবং প্রাকৃত ভাষায় মাধ্যমে , কিন্তু পরবর্তীতে
বাংলা ভাষাতে ফার্সি, আরবি, সংস্কৃত এবং বিভিন্ন ভাষা থেকে ঋণশব্দ এবং পুনঃঋণশব্দ গ্রহণ করা হয়ে থাকে , অর্থাৎ loanword এবং Re borrowing ।
পালি ভাষা হলো সেই সময়কার যখন ভগবান গৌতম বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের পাঠ বা উপদেশ দিতেন এই পালি ভাষাতেই , বিশেষজ্ঞগণের মতামত অনুযায়ী পাঠ হতে পালি শব্দের উদ্ভব অর্থাৎ পাঠ>পাল>পালি। আবার এমনও অনেকেই আছেন বলে থাকেন ভগবান
গৌতম বুদ্ধের বাণী এই ভাষাতেই পালন করা হয় বলে এর নাম পালি। তাছাড়া মগধের প্রাচীন নাম পলাস হতে পালি আগত এবং প্রাচীন মগধের রাজধানী পাটলিপুত্র নাম থেকে পালি শব্দ এসে থাকতে পারে , আবার এমনো মনে করা হয় পঙ্ক্তি হতে পালি শব্দ এসে থাকতে পারে । মগধ প্রাচীন ভারতীয় রাজ্য ও
ষোলটি মহাজনপদ বা অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম , আর
মহাজনপদের ভারতীয় উপমহাদেশের রাজ্য সমূহের সময়কাল আনুমানিক ৩৪৫ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্ব ।
মহাজনপদের আভিধানিক অর্থ হলো বিশাল সাম্রাজ্য , আর ১৬টি মহাজনপদ হলো ১) অবন্তী ২) অশ্মক রাজ্য ৩) অঙ্গ ৪) কম্বোজ ৫) কাশী ৬) কুরু ৭) কোশল
৮) গান্ধার ৯) চেদি ১০) বজ্জি অথবা বৃজি ১১) বংশ বা বৎস রাজ্য ১২) পাঞ্চাল ১৩) মগধ ১৪) মৎস্য ১৫)
মল্ল ও ১৬) শূরসেন , আর মহাজনদের কথা উল্লেখ করা আছে দেখতে পাওয়া যায় বৌদ্ধ গ্রন্থে ও
বৌদ্ধ গ্রন্থ অঙ্গুত্তরা নিকায়াতে এবং মহাবস্তুতে ।
অঙ্গুত্তরনিকায় হলো বুদ্ধ ও তাঁর শিষ্যদের মধ্যে কথোপকথন ভিত্তিক গ্রন্থ । বৌদ্ধ গ্রন্থ হলো বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহাসিক সাহিত্য ও ধর্মীয় গ্রন্থাবলী , বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় এবং পাশ্চাত্য গবেষকরা শাস্ত্র ও আনুশাসনিক শব্দদুটো বৌদ্ধধর্মের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করেছেন , কেউ কেউ দুটি ভাগ করেছেন শাস্ত্র এবং আনুশাসনিক গ্রন্থাবলি , আবার কেউ কেউ তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন অর্থাৎ আনুশাসনিক এবং বাণিজ্যিক ও ছদ্মআনুশাসনিক। আবার অপর একটি মতামত অনুযায়ী বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলোকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে (১) বুদ্ধবচন বা গৌতম বুদ্ধের বাণী এবং (২) অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ। মূলত প্রাচীনতম বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলো গান্ধারী, প্রাচীন মাগধী ও পালি ভাষা সহ প্রাকৃত নামে মধ্য ইন্দোআর্য ভাষায় মুখে মুখে প্রচলিত ছিল । আবার সংস্কৃত বৌদ্ধ সাহিত্য পরবর্তীকালে ভারতে প্রাধান্য লাভ করে । তাছাড়া সংস্কৃত বৌদ্ধ সাহিত্য বলতে শাস্ত্রীয় সংস্কৃত ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গ্রন্থকে বোঝায় নিবন্ধনে যাকে বৌদ্ধ সংকর সংস্কৃত বা বৌদ্ধ সংস্কৃত ও মিশ্র সংস্কৃত বা এই দুটির মিশ্রণকে বলা হয়ে থাকে । সুতরাং সংস্কৃত বৌদ্ধ সাহিত্য মাধ্যমে বোঝানো হয়ে থাকে শাস্ত্রীয় সংস্কৃত ভাষায় রচিত বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থসমূহ । তাছাড়া সংস্কৃত বৌদ্ধ ভারতে বৌদ্ধধর্মের পতন পর্যন্ত সংস্কৃতে বৌদ্ধ সাহিত্য রচনার প্রাধান্য বজায় ছিল । আর বৌদ্ধধর্ম গৌতম বুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থ হলো ১)বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ২) ত্রিপিটক ৩) পালি ত্রিপিটক ৪) মহাপ্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র , আর ভাষা হলো পালি, সংস্কৃত, তিব্বতি, চীনা অর্থাৎ বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থ সমূহের ভাষা । মহাবস্তু হলো আদি বৌদ্ধধর্মের লোকোত্তরবাদী সম্প্রদায়ের একটি ধর্মগ্রন্থ , Lokottaravada হলো
প্রাথমিক বৌদ্ধ বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি এবং এটি ছিল মহাসাংঘিক থেকে উদ্ভূত একটি উপগোষ্ঠী ।
মহাসাংঘিক ছিল ভারতের প্রাথমিক বৌদ্ধ বিদ্যালয়ের একটি প্রধান বিভাগ , তারা ছিলেন দুটি আদি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি যা মূল প্রাকসম্প্রদায়িক বৌদ্ধ ঐতিহ্যের প্রথম বিভেদ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং অন্যটি ছিল স্থবির নিকায় । মূলত প্রাথমিক বৌদ্ধ বিদ্যালয় বলতে ভারতীয় বৌদ্ধ মতবাদ স্কুল বা চিন্তার স্কুল বোঝায় যা ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে বিভিন্ন বিভেদের কারণে প্রাথমিক ঐক্যবদ্ধ বৌদ্ধ সন্ন্যাস সম্প্রদায় ( সংঘ ) থেকে উদ্ভূত হয়েছিল । বিভিন্ন বিভক্তি এবং বিভাজনগুলো সন্ন্যাস শাসনের ব্যাখ্যার পার্থক্য ও মতবাদগত পার্থক্য এবং ভারতীয় উপমহাদেশে বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সাধারণ ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে ঘটেছিল , অর্থাৎ প্রাথমিক বৌদ্ধ বিদ্যালয় । আবার প্রাকসাম্প্রদায়িক বৌদ্ধধর্ম যাকে আদি বৌদ্ধধর্মও বলা হয় বা প্রাচীনতম বৌদ্ধধর্ম বা মূল বৌদ্ধধর্ম এবং আদিম বৌদ্ধধর্ম যা বিভিন্ন প্রাথমিক বৌদ্ধ বিদ্যালয় গড়ে ওঠার আগে ও প্রায় ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে , তাই দেখতে পাওয়া যায় প্রাকসাম্প্রদায়িক বৌদ্ধধর্ম এটি একটি বিষয় , আর প্রাথমিক বৌদ্ধ বিদ্যালয় এটি অন্য আরেকটি বিষয় এবং এটি হবে Pre sectarian Buddhism > Early Buddhist schools , সুতরাং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় নির্দ্বিধায় বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস অসংখ্য আন্দোলন এবং বিভেদ আর বিভাজন ও মতাদর্শ এবং মতভেদ আর দার্শনিক বিদ্যালয়ের বিকাশ দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে। আদি বৌদ্ধধর্ম বৌদ্ধধর্মের অতি প্রাচীন রূপ এবং এটি বিভাজনের আগে । আর আদি বৌদ্ধধর্ম হলো গোড়ার দিকের বৌদ্ধধর্ম বা মূল বৌদ্ধধর্ম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে এক কথায় । আদি বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের অতি প্রাচীন এই রূপ বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে অন্তত দুটি স্বতন্ত্র সময়কালকে বোঝানো হয়ে থাকে প্রথমত প্রাকসাম্প্রদায়িক বৌদ্ধধর্ম যা গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা এবং সন্ন্যাসীর সংগঠন ও কাঠামোকে বোঝায় মূলত , এটি তাত্ত্বিকভাবে বিভিন্ন আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিকাশের আগে , এটি
২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি অস্তিত্বের বৌদ্ধধর্ম ও এটি আদিম বৌদ্ধধর্ম নামেও পরিচিত , আর ভগবান গৌতম বুদ্ধ মৃত্যুবরণ তথা মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অথবা ৪০০ অব্দে , অন্ততপক্ষে এইটুকু অনুমান করা যায় গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের পরপরই হয়তোবা এই বিষয়গুলো একটু একটু করে দানা বাঁধে , অর্থাৎ মতভেদ ও বিভাজন এবং মতাদর্শ । পাশাপাশি
আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায় সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে বা ঠিক পরে বিভক্ত বৌদ্ধধর্মকে বোঝানো হয়ে থাকে , বুঝার সুবিধার্থে সম্রাট অশোকের রাজত্বকাল খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৩২ তুলে ধরলাম। সুতরাং
আদি বৌদ্ধধর্ম বৌদ্ধধর্মের অতি প্রাচীন রূপ আর
অন্তত দুটি স্বতন্ত্র সময়কালকে বোঝায় ১) প্রাকসাম্প্রদায়িক বৌদ্ধধর্ম ও আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায় , মূলত আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায় হলো বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসের প্রথম দিকে বৌদ্ধসন্ন্যাসী সম্প্রদায়ে বিভক্ত হওয়া সম্প্রদায়সমূহ , আর বিভাজনগুলো মূলত বিনয়ের মধ্যে পার্থক্যের কারণে এবং পরে মতবাদগত পার্থক্য ও ভিক্ষুদের দলগুলোর ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণেও হয়েছিল , বিনয় অর্থ বিভাগ যা বৌদ্ধ সংঘ পরিচালনা করে এমন নিয়ম ও পদ্ধতি , আর অশোকের রাজত্বের সময় বা তাঁর পরে আদি সম্প্রদায় প্রথম প্রাথমিক সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়েছিল যা সাধারণত স্থবির নিকায় এবং মহাসাংঘিক বলে মনে করা হযে থাকে ,
পরে প্রথম আদি সংঘগুলোকে আবার সর্বাস্তিবাদ , ধর্মগুপ্তক ও বিভজ্যবাদের মতো সম্প্রদায়ে বিভক্ত করা হয় এবং ঐতিহ্যগত বিবরণ অনুসারে সম্প্রদায়ের সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২০টি । মহাজনপদে
প্রাচীন ইন্দোআর্য রাজনৈতিক গঠনের সূত্রপাত হতে শুরু করে জন নামীয় অর্ধ যাযাবর গোত্রসমূহের মাধ্যমে। প্রাচীন বৈদিক পুস্তকসমূহে আর্যদের বিভিন্ন জন বা গোত্রের কথা পাওয়া যায় যারা অর্ধযাযাবর গোত্রীয় কাঠামোতে বসবাস করতেন এবং নিজেদের ও অন্যান্য অনার্যদের সাথে গরু, ভেড়া ও সবুজ তৃণভূমি নিয়ে মারামারি করতেন এবং এই সূচনালগ্নের বৈদিক জন নিয়েই মহাকাব্যীয় যুগের জনপদ গঠিত হয়।
পালি ভাষাটি ত্রিপিটকের মতন নিকটতম অদ্যাপি সাহিত্যের ভাষা । ত্রিপিটক বৌদ্ধ ধর্মীয় পালি গ্রন্থের নাম যা বুদ্বের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। পালি তিপিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। তিন পিটকের সমন্বিত সমাহারকে ত্রিপিটক বোঝানো হয়ে থাকে এবং এই তিনটি পিটক হলো বিনয় পিটক, সূত্র পিটক ও অভিধর্ম পিটক । সর্বোপরি পালি ভাষা হলো বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র ও পুরাণে ব্যবহৃত একটি ধ্রুপদী ভাষা। ধ্রুপদী ভাষা বলতে প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত এবং মূল্যবান ও স্বতন্ত্র সাহিত্যিক ঐতিহ্য সম্বলিত ভারতীয় ভাষাদের বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলা শব্দভাণ্ডার বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার যার মূল এবং আদি উৎস পালি এবং প্রাকৃত ভাষার মাধ্যমেই সুসংগঠিত। প্রাকৃত ভাষা বলতে প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে লোকমুখে প্রচলিত স্বাভাবিক ভাষাগুলোকে বোঝানো হয়ে থাকে। প্রাকৃত ভাষাগুলো ইন্দোইউরোপীয় ভাষাপরিবারের ইন্দোইরানীয় শাখার ইন্দোআর্য শাখার প্রাচীন নিদর্শন। প্রাকৃত ভাষা গুলো সংস্কৃতের মত মার্জিত সাহিত্যিক ভাষা ছিল না। তবে পরবর্তীকালে সংস্কৃতের মত এইগুলোও মৃত ভাষায় পরিণত হয়। প্রাকৃত ভাষাগুলোর মধ্যে পালি ভাষা বৌদ্ধ সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রাকৃত ভাষাগুলো থেকেই নানা বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক ইন্দোআর্য ভাষাগুলোর উদ্ভব ঘটে । ২০২৪ সালের ৩রা অক্টোবর প্রাকৃত ভাষাকে ভারত সরকার কর্তৃক ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। আর বাংলা শব্দ ভাণ্ডারের
আদি উৎস পালি এবং প্রাকৃত ভাষা , কিন্তু বাংলা ভাষাতে পরবর্তীতে ফার্সি, আরবি, সংস্কৃত এবং বিভিন্ন ভাষা থেকে ঋণশব্দ এবং পুনঃঋণশব্দ গ্রহণ করা হয় যেটি পূর্বেই তুলে ধরি। ঋণশব্দ হলো অন্য ভাষা থেকে আগত শব্দ । কোনো ভাষার ঋণশব্দ বলতে অন্য ভাষা থেকে সরাসরিভাবে আগত শব্দকেই বোঝানো হয়ে থাকে । ঋণশব্দ ভিন্ন লিখন পদ্ধতির ভাষা থেকে আগত ঋণশব্দের সাধারণত প্রতিবর্ণীকরণ করা হয় , কিন্তু অনুবাদ করা হয় না। লিপ্যন্তর বা বর্ণানুবাদ বা প্রতিবর্ণীকরণ হলো কিছুপরিমাণ পাঠ্য কে এক ভাষার লিপি থেকে অন্য ভাষার লিপিতে রূপান্তর। তাছাড়া
বিভিন্ন ভাষার সংস্পর্শে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে থেকে বাংলার শব্দভাণ্ডার বর্তমানে অসংখ্য শব্দসমৃদ্ধ ও বিচিত্র। বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে এবং এই ভাগগুলো হলোঃ তৎসম শব্দ ও অর্ধতৎসম শব্দ আর তদ্ভব শব্দ ও দেশি শব্দ এবং বিদেশি শব্দ । এমনো অনেক শব্দ আছে যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় চলে এসেছে সে সব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। আর কিছু সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সেইগুলোকে বলা হয় অর্ধতৎসম শব্দ। বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো সেইগুলোকেই বলা হয়ে তদ্ভব শব্দ । আর বর্তমান বাংলাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতেন সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সকল শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ , এই আদিবাসীদের মধ্যে আছেন কোল, মুণ্ডা, ভীম, খোকা, চাঁপা, কুলা, গঞ্জ, ডাব, ডাগর, টোপর ইত্যাদি। সর্বোপরি বিভিন্ন সময়ে বাংলাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছেন ও বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। তাছাড়া দেশি শব্দের ব্যাপারে একটি বিষয় আশাকরি খেয়াল করে থাকবেন
অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতেন বর্তমান বাংলাভাষীদের ভূখণ্ডে , অর্থাৎ কোল, মুণ্ডা, ভীম, খোকা, চাঁপা, কুলা, গঞ্জ, ডাব, ডাগর, টোপর প্রভৃতি আরো অনেক । আর্যরা ছিলেন একটি ইন্দোইউরোপীয় জনগোষ্ঠী যারা খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে অভিবাসিত হয়েছিলেন , অর্থাৎ
আর্য জাতি এই বাংলায় অনুপ্রবেশের আগে এইখানে যারা ছিলেন তারাই হলেন অনার্য ও তারা হলেন ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠী , যারা
আর্য নন তারাই অনার্য সহজ কথায় । আর্য আগমনের অনেক আগে থেকেই বাংলায় আদি মানুষের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল , নৃবিজ্ঞানের ভাষায় এদেরকে বলা হয়ে থাকে অস্ট্রিক বা অস্ট্রলয়েড গোত্রের , আর বাংলাদেশের প্রথম উপজাতি হলেন এই অস্ট্রালয়েড বা অস্ট্রিক নরগোষ্ঠীর মানুষেরা । বর্তমানে বাংলাদেশের সাঁওতাল, কোল, ভূমিজ, মুন্ডা, বাঁশফোড় , মালপাহাড়ি, পুলিন্দ, শবর ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ হলেন এই অস্ট্রিক নরগোষ্ঠী , অর্থাৎ এরাই অস্ট্রিক নরগোষ্ঠীভুক্ত এই বাংলা অঞ্চলের প্রাচীনতম উপজাতি। এছাড়া এই অঞ্চলে অস্ট্রিকদের পরে আসা দ্রাবিড়দের বর্তমানে তেমন কোনো উত্তরপুরুষ খুঁজে পাওয়া যায় না, ভারতে এদের অধিক হারে বসবাস রয়েছে। ভারতের নিকটতম দেশের বিচারে এদের দেখা যায় মূলত শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তানে। তেলুগু, তামিল, কন্নড়, মালায়ালম, ব্রাহুই ইত্যাদি ভাষাতাত্ত্বিক পূর্বপুরুষ হলো দ্রাবিড় , আবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়াতে তামিলদের একটি বড় অংশ বসবাস করেন , বাংলাদেশের দ্রাবিড়রা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সাথে মিশে গেছেন , এই বিচারে বিশুদ্ধ দ্রাবিড় বাংলাদেশে ততটা দেখা যায় না , তবে পাহাড়িয়া, ওরাওঁ এই দুইটি জাতিগোষ্ঠী এখনও দ্রাবিড় থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে , অর্থাৎ দ্রাবিড় নৃগোষ্ঠীভুক্ত এই দুটি জাতিগোষ্ঠী এদেশের প্রাচীন উপজাতি হিসেবে বিবেচিত। মূলত এই বাংলা অঞ্চলে আর্যদের আগমনের পূর্বে অনার্য বা আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল , আর আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠীগুলো যেমন ১/ নেগ্রিটো ২/ অস্ট্রিক ৩/ দ্রাবিড় ৪/ মঙ্গোলীয় নরগোষ্ঠী ।
বাংলা অঞ্চলে প্রথম মানবগোষ্ঠী হিসেবে আগমন ঘটেছিল নেগ্রিটোদের , এরপর অস্ট্রিক নরগোষ্ঠী এসে নেগ্রিটোদের পরাজিত করেন এবং এখানে বসতি স্থাপন করেন , আর এক সময় অস্ট্রিকদের সংখ্যাধিক্য ও প্রভাবপ্রতিপত্তির ফলে নেগ্রিটোরা ক্রমশ এই অঞ্চল থেকে বিলীন হয়ে যান। এরপর আগমন ঘটে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর , দ্রাবিড়রা অস্ট্রিকদের সাথে লড়াই করে এই বাংলা অঞ্চলে বসতি গড়তে সমর্থ হন , দ্রাবিড়দের আগমনের পর মঙ্গোলীয় বা ভোটচীনীয়দের আগমন ঘটেছিল এই অঞ্চলে , অষ্ট্রিক ও দ্রাবিড়দের সাথে শক্তি ও সামর্থ্যে টিকে থাকতে না পেরে মঙ্গোলীয়রা এই অঞ্চল পরিত্যাগ করেন , এরপরেই পুরো ভারতবর্ষসহ এই বাংলা অঞ্চলে আর্যদের আগমন ঘটে , পরবর্তীতে আর্য, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় এসব নরগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে বাঙালি নৃগোষ্ঠীর উদ্ভব হয় , কিন্তু বাঙালি নৃগোষ্ঠীর উদ্ভবের আগে এই বাংলা অঞ্চলে বিভিন্ন নরগোষ্ঠীর বসবাস ছিল । আর বাঙালি হলেন দক্ষিণ এশিয়ার একটি ইন্দোআর্য জাতিগোষ্ঠী যারা বঙ্গ অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দা , আর বঙ্গ দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক অঞ্চল , বাঙালিরা মূলত ইন্দোআর্য পরিবারের বাংলা ভাষায় কথা বলেন এবং ভাষাগত শ্রেণীবিভাগ হলো
ইন্দোইউরোপীয় > ইন্দোইরানীয় > ইন্দোআর্য ভাষা > হিন্দআর্য ভাষা । সুতরাং যেটি দেখতে পাওয়া যায়
বাঙালি জাতির উদ্ভব হয় মৌলিকভাবে আর্য জাতিগোষ্ঠী থেকে , তাই বাঙালি জাতিকে ইন্দোআর্য জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা হয়ে থাকে আর বাংলা ভাষাকে ইন্দোআর্য ভাষা পরিবারের একটি ভাষা হিসেবে অভিহিত করা হয় , কিন্তু যদিও বাঙালি নৃগোষ্ঠী সংকর জাতিগোষ্ঠী হিসেবেও অধিক পরিচিত , আর এইজন্য বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী উদাহরণ হিসেবে বলা যায় অস্ট্রিক, দ্রাবিড়দের বৈশিষ্ট্যও লক্ষ্য করা যায় এবং ভাষার ব্যবহারেও ইন্দোআর্য ভাষা বাদেও বাংলা ভাষায় অস্ট্রিক ভাষা এবং দ্রাবিড় ভাষার উপস্থিতি লক্ষণীয়। মূলত বাঙালিদের বহুজাতিগত সংকর উৎস বিদ্যমান আছে যার মধ্যে রয়েছে ইন্দোআর্য, দ্রাবিড় এবং তিব্বতিবর্মণ, মধ্যপ্রাচ্য এবং অস্ট্রোএশীয় বংশধর , আজ বাঙালিরা একটি সাধারণ প্রমিত ভাষা এবং বিভিন্ন উপভাষার মাধ্যমে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক একতা উপভোগ করেন । জীববিজ্ঞানের ভাষায় দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আন্তঃপ্রজননের ফলে উদ্ভূত নতুন প্রজন্মকে ওই দুই প্রজাতির সংকর হাইব্রিড বা ক্রসব্রিড বলে , প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় লোকের আগমন ঘটেছে , যুগে যুগে তারা এইদেশে বসবাস করেছেন এবং বিবাহ করে পরিবার গঠন করেছেন , যার ফলে বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মানুষের সংমিশ্রণ ঘটেছে , আর এই কারণেই বাঙালিকে মিশ্র বা সংকর জাতি বলা হয়ে থাকে। আবারো বাংলা শব্দভাণ্ডার ও যেটি পূর্বেই উল্লেখ করি বিভিন্ন ভাষার সংস্পর্শে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে থেকে বাংলার শব্দভাণ্ডার বর্তমানে অসংখ্য শব্দসমৃদ্ধ ও বৈচিত্রপূর্ণ , সচরাচর একটি সাধারণ বাংলা অভিধানে প্রায় ৭৫,০০০ পৃথক শব্দ তালিকাভুক্ত করা থাকে , তার মধ্যে ২১,০০০ শব্দসমূহ তৎসম অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি গৃহীত পুনঃঋণশব্দ , অর্থাৎ হিসেব মোতাবেক ২৮% । আবার
৫০,২৫০ শব্দসমূহ তদ্ভব ও বাংলা ভাষার শব্দসমূহ যার উৎস পালি এবং প্রাকৃত ভাষা দ্বারা হয়েছে , অর্থাৎ
হিসেব অনুযায়ী ৬৭% । তারপর বিদেশি শব্দ প্রায় ৫০০০ টি , আর বাকি শব্দসমূহ দেশি , অর্থাৎ আদিবাসী ঋণ । সংক্ষিপ্তভাবে ঋণশব্দ ও পুনঃঋণশব্দ সমূহের কথা তুলে ধরি , মূলত শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুঘল, আরব, ফার্সি, তুর্কি, মঙ্গোল, পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ আর ব্রিটিশদের সঙ্গে যোগাযোগে থাকার কারণে বাংলা ভাষাটি বিদেশী ভাষাসমূহ থেকে অগণিত শব্দ গৃহীত করেছে , কিছু খুব সাধারণ ঋণশব্দগুলো আরবি, ফার্সি, তুর্কি, জাপানি, সংস্কৃত, ওলন্দাজ, পর্তুগিজ, ফরাসি, ইংরেজি ও আদিবাসী ভাষাগুলো থেকেই গ্রহণ করা । সবশেষে বলা যায়
আর্য জাতি একটি ছদ্মবৈজ্ঞানিক ঐতিহাসিক জাতি ধারণা যা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রোটোইন্দোইউরোপীয়দের বংশধরদের একটি জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে বর্ণনা করার জন্য উদ্ভূত হয়েছিল , আর প্রোটোইন্দো ইউরোপীয়রা ইউরেশিয়ার একটি কাল্পনিক প্রাগৈতিহাসিক নৃভাষাতাত্ত্বিক গোষ্ঠী যারা প্রোটোইন্দোইউরোপীয় ভাষায় কথা বলতেন যা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পুনর্গঠিত সাধারণ পূর্বপুরুষ । প্রোটোইন্দো ইউরোপীয়রা তাদের সম্পর্কে জ্ঞান মূলত সেই ভাষাগত পুনর্গঠন থেকে আসে যা প্রত্নতত্ত্ব এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের সাথে । প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়রা সম্ভবত শেষ নব্যপ্রস্তর যুগে অর্থাৎ ৬৪০০ থেকে ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বাস করতেন।
আর্য জাতি এই পরিভাষাটি আর্যের ঐতিহাসিক ব্যবহার থেকে উদ্ভূত যা আধুনিক ইন্দোইরানীয়রা মহৎ এর উপাধি হিসেবে ব্যবহার করেন , অবশ্য নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ এই ধারণার বৈধতা সমর্থন করে না। কিন্তু আর্য জাতি এই ধারণাটি এই ধারণা থেকে উদ্ভূত যে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার মূল বক্তারা মানবজাতির একটি উচ্চতর নমুনার স্বতন্ত্র পূর্বপুরুষ ছিলেন এবং বর্তমান দিন পর্যন্ত তাদের বংশধররা সেমিটিক জাতি এবং হ্যামিটিক জাতি ছাড়াও ককেশীয় জাতির একটি স্বতন্ত্র জাতি অথবা একটি উপজাতি গঠন করেন। আর্য শব্দটি মূলত ইন্দোইরানীয়রা এবং প্রাচীন ভারত ও ইরানে বসবাসকারী ইন্দোইরানীয় ভাষা পরিবারের ইন্দোইরানীয় শাখা সংস্কৃত এবং ইরানী এর মধ্যে প্রাচীনতম পরিচিত ধর্মীয় গ্রন্থ ঋগ্বেদ ও আবেস্তার লেখকদের দ্বারা একটি জাতিগত সাংস্কৃতিক স্বউপাধিকারী পরিচয় এবং মহৎ এর উপাধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল , সংস্কৃত আর্য এবং ইরানী আর্য একটি রূপ যা আর্য থেকেই এসেছে ও এটি কেবল ইন্দোইরানী উপজাতিদের কাছেই প্রত্যয়িত ছিল , আর এইসব বিষয়ে মতানৈক্য আর ঐক্যমত দুটোই বিদ্যমান আছে। ইন্দো ইউরোপীয় এবং ইন্দোইরানীয় এবং
ইন্দোইউরোপীয় ভাষাগুলো উত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ , ইউরোপের সিংহভাগ এবং ইরানী মালভূমির একটি ভাষা পরিবার । আর ইন্দোইরানী জনগোষ্ঠী যারা তাদের স্বউপাধি থেকে আর্য বা আর্য নামেও পরিচিত তারা ছিলেন ইন্দোইউরোপীয় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর একটি দল যারা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথম ভাগ থেকে ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অংশে ইন্দোইরানী ভাষা নিয়ে এসেছিলেন , অবশেষে তারা ইরানী জনগোষ্ঠী এবং ইন্দোআর্য জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়েন।
আবেস্তা হলো জরথুস্ত্র ধর্মের ধর্মীয় সাহিত্যের পাঠ্য সংগ্রহ , এটির সমস্ত লেখা আবেস্তান ভাষায় রচিত এবং আবেস্তান বর্ণমালায় লেখা , আবেস্তার আধুনিক সংস্করণগুলো ভারত ও ইরানে টিকে থাকা বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি ও
আবেস্তার সময়কাল আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪০০ খ্রিস্টপূর্ব । ঋগ্বেদ হলো প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত স্তোত্রের (সূক্ত) একটি সংগ্রহ আর সময়কাল
আনুমানিক ১৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বৈদিক যুগে। সবশেষে এটি তুলে ধরলাম বাংলা বর্ণমালার
প্যারেন্ট সিস্টেম হলো মিশরীয় > প্রোটোসিনাইটিক
ফিনিশিয়ান >আরামাইক > ব্রাহ্মী লিপি > গুপ্ত লিপি>
সিদ্ধম > গৌদি লিপি > বাংলা বর্ণমালা ।
বাংলা ভাষার ভাষা পরিবার হলো ইন্দো-ইউরোপীয় >
ইন্দো-ইরানীয় > ইন্দো-আর্য > পূর্ব ইন্দো-আর্য >
বাংলা-অসমীয়া > বাংলা । আর বাঙালি শব্দটি এমন একজন ব্যক্তি বর্ণনা করে যার ভাষাগত, বংশগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয় মূলত বাংলার মাটি থেকে উদ্ভূত এবং ইন্দোআর্য বাঙালি জাতিটি বঙ্গের অন্যান্য অনার্য জাতি থেকে আলাদা , বাঙালি এবং বাংলা উভয় শব্দের উৎপত্তি হচ্ছে বাঙ্গালা শব্দ থেকে যা ছিল ফার্সি ভাষায় এই অঞ্চলের আদি নাম , কিন্তু মুসলমানদের প্রসারের আগে বাঙ্গালা বা বাংলা নামে কোনো অঞ্চলের অস্তিত্বই ছিল না , কারণ এই অঞ্চলটি তখন অসংখ্য ভূরাজনৈতিক উপরাজ্যে বিভক্ত ছিল ও দক্ষিণাঞ্চল বঙ্গ যার নাম থেকেই বাঙ্গালা শব্দ এসেছে বলে সাধারণত ধারণা করা হয়। মূলত পশ্চিমাঞ্চল রাঢ়, উত্তরাঞ্চল পুণ্ড্রবর্ধন ও বরেন্দ্র ও পূর্বাঞ্চল সমতট ও হরিকেল উপরাজ্যে বিভক্ত ছিল। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা এইসকল বিভক্ত নাম দিয়ে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় দিতেন ও উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মহাভারতের মতো বৈদিক গ্রন্থগুলোতে পুণ্ড্র নামের একটি জাতির কথা উল্লেখ করা আছে। আলোচনার শেষান্তে আবারো পূর্বেই কথাই তুলে ধরি ও বলা যেতে পারে ইন্দোআর্য জনগোষ্ঠী দক্ষিণ এশিয়ার ইন্দোইউরোপীয়ভাষী নৃভাষাতাত্ত্বিক গোষ্ঠী । ইন্দোআর্য বা হিন্দার্য জনগোষ্ঠী হলো একটি বৈচিত্র্যময় ইন্দোইউরোপীয় ভাষাভাষী জাতিভাষাভিতিক গোষ্ঠী যারা ইন্দোআর্য ভাষাসমূহে কথা বলেন। ইন্দোআর্য ভাষায় কথা বলেন এইরকম লোক বর্তমানে একশ কোটিরও বেশি , এদের বেশিরভাগই ভারতীয় উপমহাদেশে স্থানীয় এবং বর্তমানে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে এদেরকে পাওয়া যায় যেখানে এরা প্রাধান্য লাভ করেছেন । তাছাড়া ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠীর তালিকা
ঐতিহাসিকভাবে ১/ অঙ্গ ২/ গান্ধারী ৩/গঙ্গাঋদ্ধি
৪/ গুপ্ত ৫/ কম্বোজ ৬/ কলিঙ্গ ৭/ খস ৮/ কুরু
৯/ লিচ্ছবি ১০/ মাগধী ১১/ মল্ল ১২/ মৌর্য
১৩/ নন্দ ১৪/ নিষাদ ১৫/ পাল ১৬/ পৌণ্ড্র
১৭/ রঘুবংশী১৮/ ঋকবেদীয় জাতি ১৯/ সেন
২০/ শাক্য বংশ ২১/ বঙ্গ ২২/ বারাণসী ২৩/ বিদেহ
২৪/ যাদব । তাছাড়া আপনার ধারনাকে আরো সমৃদ্ধময় করতে চাইলে তাহলে এই বিষয়গুলোর উপর আরো বিস্তৃত ধারণা রাখতে পারেন ক) আর্য খ) আর্য জাতি গ) আর্যাবর্ত ঘ) আর্য সমাজ ঙ) ইন্দোআর্য ভাষাসমূহ চ) প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় জাতি ছ) ইরানীয় জাতি জ) অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ।
20
View