Posts

গল্প

অসহায় জীবন

April 4, 2025

Alam Rashid

32
View


 

 ১

শফিক কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন (QMUL) - স্কুল অফ ল থেকে এল,এল,বি পাস করেছে,  কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন ইংল্যান্ডের লন্ডনে অবস্থিত একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এর স্কুল অফ ল আইনি শিক্ষা এবং গবেষণায় তার উৎকর্ষতার জন্য বিখ্যাত। বিশ্ববিদ্যালয়টি LLB এবং LLM ডিগ্রি সহ বিভিন্ন স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর আইন প্রোগ্রাম অফার করে। পাঠ্যক্রমটি আইনি নীতিগুলির একটি বিস্তৃত ধারণা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে বাণিজ্যিক আইন, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের মতো ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। স্কুল অফ ল'-এর প্রধান আইন সংস্থাগুলির সাথেও দৃঢ় সংযোগ রয়েছে এবং এর আইনি পরামর্শ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

যুক্তরাজ্যের রাজধানী শহর হিসেবে, লন্ডন আইন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গতিশীল পরিবেশ প্রদান করে। এই শহরে অসংখ্য আইনি প্রতিষ্ঠান, আদালত এবং আইন সংস্থা রয়েছে, যা ইন্টার্নশিপ এবং নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য প্রচুর সুযোগ প্রদান করে। সাংস্কৃতিক আকর্ষণ, বৈচিত্র্যময় পাড়া এবং বিস্তৃত গণপরিবহন এটিকে বসবাস এবং অধ্যয়নের জন্য একটি প্রাণবন্ত স্থান করে তোলে।





 

QMUL-এর স্কুল অফ ল বিভিন্ন ধরণের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম অফার করে। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা LLB প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারে, যা আইনি নীতির একটি বিস্তৃত ভিত্তি প্রদান করে। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত LLM ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে, যেখানে বাণিজ্যিক এবং অ-বাণিজ্যিক উভয় আইনই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের LLM অভিজ্ঞতাকে উপযোগী করে ১৮০ টিরও বেশি মডিউল থেকে বেছে নিতে পারে। 


 

QMUL-এর ল স্কুলের একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হল সেন্টার ফর কমার্শিয়াল ল স্টাডিজ (CCLS)। CCLS বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর আইন প্রোগ্রাম এবং পেশাদার আইনি প্রশিক্ষণ প্রদান করে, যা তাদের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রদত্ত হয়। 





 


 

QMUL-এর প্রধান ক্যাম্পাস লন্ডনের প্রাণবন্ত পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত, বিশেষ করে মাইল এন্ড এলাকায়। ক্যাম্পাসটি মনোরম রিজেন্টস ক্যানেলের ধারে অবস্থিত, যা ব্যস্ত শহরের মধ্যে একটি শান্ত পরিবেশ প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্যাম্পাস ট্যুর অফার করে, সম্ভাব্য শিক্ষার্থীরা সুযোগ-সুবিধাগুলি অন্বেষণ করতে এবং ছাত্রজীবনের সরাসরি অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। 


 

পূর্ব লন্ডন তার গতিশীল এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। মাইল এন্ড ক্যাম্পাসের কাছে, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আকর্ষণ উপভোগ করতে পারে:


 

ভিক্টোরিয়া পার্ক, ক্যাম্পাস থেকে খাল ধরে মাত্র ১০ মিনিটের হাঁটা পথ, ভিক্টোরিয়া পার্ক বিশ্রাম নেওয়ার, দৌড়ানোর জন্য বা ব্যস্ত লন্ডনের জীবন থেকে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।

ব্রিক লেন, স্ট্রিট আর্ট, ভিনটেজ শপ এবং বৈচিত্র্যময় খাবারের দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত,ব্রিক লেন একটি অনন্য সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে।


 

হোয়াইটচ্যাপেল গ্যালারি, অলডগেটে একটি পাবলিক আর্ট গ্যালারি, যা তার সমসাময়িক শিল্প প্রদর্শনীর জন্য পরিচিত।


 

বক্সপার্ক শোরডি, শিপিং কন্টেইনার দিয়ে তৈরি একটি পপ-আপ মল, যা বিশ্বব্যাপী স্ট্রিট ফুড এবং ফ্যাশন ব্র্যান্ডের মিশ্রণ অফার করে।


 

জেনেসিস সিনেমা, একটি অনন্য সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা প্রদানকারী একটি স্বাধীন সিনেমা।


 

এছাড়াও, ক্যাম্পাসটি কুইন এলিজাবেথ অলিম্পিক পার্ক এবং ইউরোপের বৃহত্তম শহুরে শপিং সেন্টারগুলির মধ্যে একটি ওয়েস্টফিল্ড স্ট্র্যাটফোর্ড সিটি থেকে টিউবে মাত্র এক স্টপে অবস্থিত। 




 


 

লন্ডনের বিস্তৃত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা যাতায়াতকে সুবিধাজনক করে তোলে। মাইল এন্ড ক্যাম্পাসটি লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের সেন্ট্রাল, ডিস্ট্রিক্ট এবং হ্যামারস্মিথ এবং সিটি লাইনের মাধ্যমে সুসংযুক্ত, যা শহরের বিভিন্ন অংশে সহজে প্রবেশাধিকার প্রদান করে।



 

কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন (QMUL) তে, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের থাকার ব্যবস্থা এবং কাজের অভিজ্ঞতা থাকে যা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে সমৃদ্ধ করে। 


 

অনেক শিক্ষার্থী QMUL-এর ক্যাম্পাসে থাকার ব্যবস্থা বেছে নেয়, যা সম্প্রদায়ের একটি শক্তিশালী অনুভূতি তৈরি করে। আবাসিক সহকারী ফ্রেডরিক তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন:


 

 "কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি হলে বসবাস একটি রূপান্তরমূলক অভিজ্ঞতা হয়েছে... বিভিন্ন পটভূমির শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিপূর্ণ হলটি দ্রুত থাকার জায়গার চেয়েও বেশি কিছু হয়ে ওঠে - এটি একটি সম্প্রদায়ে পরিণত হয়।" 


 

স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য, স্ট্র্যাটফোর্ডের অ্যাসপায়ার পয়েন্টের মতো বিকল্পগুলি লন্ডন এবং কুইন এলিজাবেথ অলিম্পিক পার্কের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য সহ সাশ্রয়ী মূল্যে জীবনযাপনের সুযোগ প্রদান করে। মাইল এন্ড ক্যাম্পাস থেকে এটি একটি ছোট বাস যাত্রা, যা সুবিধা এবং প্রাণবন্ত জীবনযাপনের পরিবেশ উভয়ই প্রদান করে। 



 

কাজের সাথে শিক্ষাগত দক্ষতার ভারসাম্য বজায় রেখে, অনেক QMUL শিক্ষার্থী খণ্ডকালীন চাকরি এবং ইন্টার্নশিপে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের Q Temps প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে এবং বহিরাগত অংশীদারদের সাথে বেতনভুক্ত অস্থায়ী কাজের সুযোগের সাথে সংযুক্ত করে। এটি শিক্ষার্থীদের তাদের পড়াশোনা পরিচালনা করার সময় মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে দেয়। 


 

টিয়ার ৪ ভিসাধারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত টার্ম টাইমে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা এবং ছুটির সময় পূর্ণকালীন কাজ করার অনুমতি পায়, যদি তারা ভিসার শর্ত মেনে চলে। 

এই বৈচিত্র্যময় জীবনযাপন এবং কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, QMUL শিক্ষার্থীরা একটি সহায়ক সম্প্রদায় তৈরি করে, ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করে এবং তাদের বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রাকে সমৃদ্ধ করে।শফিক ও সেই জব সুবিধা ভোগ করে তার LLB পড়ালেখা শেষ করেছে।তারপরে শফিক ইউনিভার্সিটি অফ ল থেকে ব্যারিস্টারি কমপ্লিট করে দুইটা এল,এল,এম কমপ্লিট করেছে। অতঃপর থিসিস লিখে ডক্টরেট কমপ্লিট করার চেষ্টা এবং সেই সাথে প্রাকটিস চালাচ্ছে।  কিন্তু মুজিবুল্লা গং চাকুরী ব্যবসা সুবিধা গ্রহণ করে লেখা পড়া সুবিধা ত্যাগ করেছে। ওখানে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করেছে।  জ্ঞান অর্জনের ধরে কাছেও  যায় নাই। 


 


 

সবেমাত্র ব্যারিস্টারি শেষ করে প্রাকটিসে  ঢুকেছে শফিক আহমেদ, ব্যারিস্টারের তকমা গায়ে লেগে গিয়েছে। একটা ল কলেজে পার্টটাইম লেকচার রাতে ওকালতি প্র্যাকটিসে ভালোই চলছে । তার সাথে আছে দুষ্ট বন্ধু মুজিবুল্লাহ চৌধুরী , জিয়া হায়দার ও জীবন এরশাদের সাথে আড্ডাবাজি।ওরা  এসেছিলো ব্যারিস্টারি পড়তে কিন্তু পড়া হয় নাই। ওরা বারিস্টারির চাইতে ব্যবসা চাকুরীকে ভালোবেসেছে। 

মুজিবুল্লাহর এক কামরায় শফিকের বিনা ভাড়ার অফিস।  এখানে মুজিবের গোটা দশেক নিজস্ব মালিকানার কক্ষ আছে।  লন্ডনে  লিগ্যাল  হতে এক বিশাল আইনী সাহায্য করায় শফিককে বিনা পয়সায় এই কক্ষ দিয়েছে। ওরা এখানে আড্ডা  দিতে এসে  কোনো আইনী  বা দেশের কথা বলে না। বলে মেয়ে এবং মদের কথা যা নামাজী শফিকের মনে বিষ বেদনা জাগায়। বন্ধুত্বের খাতিরে শফিক সহ্য করে যায়। কিন্তু সব সময় কি তা সম্ভব?

মুজিবুল্লা  বললো,

 "জানিস হায়দার কালকে বিনীতা এসেছিলো  আমার ওখানেই ছিল , বিদেশী বিদেশিই বাংলাদেশী অন্যরকম মজা."

জিয়া হায়দার উত্তর দিলো,

"তাই নাকি, আমাদের তিনজনকে যে মজা দিয়েছিলো তার থেকেও বেশি। "

এর মধ্যে জীবন বলে উঠলো ,

" আমরাই শুধু মজা নেবো , শফিককে ও একটু মজা দেওয়া দরকার ,আয় একদিন টু ডাব্লিউ পার্টি করি। শফিক ও সাথে থাকবে। "

শফিকের গায়ে জ্বালা  দিলো ,বললো,

"দেখ বাপের টাকা খরচ করে বিদেশ এসেছি লেখাপড়া ও নাম কমানোর জন্য ,লেখাপড়া শেষ হয়েছে , এখন একটু অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশে চলে যাবো এখানে মেয়েবাজি করতে আসিনি। "

শফিকের ঝাঁজের বক্তব্য শুনে ওরা তিনজন মিইয়ে গেলো। 

বললো,

"ঠিক আছে দোস্ত আজকে তাহলে আসি তোর মনটা মনে হয় খারাপ। " 

রাস্তায় এসেই মুজিবুল্লাহ বললো ,

দোস্ত প্রতিজ্ঞা করলাম, একমাসের  মধ্যে ওই মেয়ের সাথে ওকে শোয়াবো ।" 

বাকি দুইজন হাসতে হাসতে বললো,

"ঠিক আছে দোস্ত , আমরাও তোর সাথে আছি। " 


 

তারপরে কয়েকদিন চলে গেছে শফিকের দিন কাটছে কখনো ব্যস্ততায় কখনো নীরবতায়। আগের কথা তার মনেও নেই। হঠাৎ একদিন এক মেয়ে ক্লায়েন্ট এসে হাজির হলো, পরনে শর্ট স্কার্ট এবং উপরের অঙ্গে গেঞ্জি যার হাতা  নেই আমাদের দেশে যাকে  বলে সেন্টু গেঞ্জি।  মেয়েটা যেমন স্টাইলিশ তেমন সুন্দরী। এসেই বললো ,

" হ্যালো স্যার , আমি পারভীন। আমি বাংলাদেশী। আমি কি আপনার কাছ থেকে আইনী সাহায্য পেতে পারি। "

শফিক বললো,

"আইনী সাহায্য দেয়ার জন্যই তো আমার অফিস।  আর বাংলাদেশী হলে তো কথাই নেই। "

পারভীন বললো ,

" আমি আপনার অনেক সুনাম শুনেই এসেছি।  কিন্তু একজন  বার এট  ল' এর সাহায্য পাওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা তো আমার নেই। তাই আপনার সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতা আমার আছে কিনা তাই ভাবছি। "

শফিক বললো,

" দেখেন লন্ডনে তো অনেক টাকাই কামাই করি , দেশের একটা মেয়ের উপকার করতে পারলে বাধিত হই। "  

এরপর পারভীন বললো ,

"আপনার বাঙালি মহলে আপনার যেমন সুনাম শুনেছি ,তেমনি আপনার সাথে কথা বলে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তবে আজ আর কোনো কথা বলবো না ,আরেকদিন। 

চায়ের জন্য ধন্যবাদ। "

শফিক বললো,

"that's okay, থ্যাংক ইউ।  " 


 



 

ঠিক দুইদিন পর পারভীন আবার এলো। আজকে একটা স্বচ্ছ শার্ট পরে এলো , ভিতরে ব্রা জাতীয় কিছু না পড়লে চোখ বন্ধ করে রাখা ছাড়া ব্যারিস্টার শফিকের আর কোনো উপায় থাকতো না। যাহোক এসেই বললো,

" গুড ইভনিং। "

শফিক বললো। 

গুড ইভনিং টু ইউ । "

প্রথমেই ভূমিকা নিয়ে শুরু করলো। 

" আমি বিনীতা পারভীন, ইংল্যান্ডে এম বি এ কমপ্লিট করতে এসেছি , ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে আমার বি বি এ কমপ্লিট করা। "

“শফিক বললো খুবই ভালো কথা , কিন্তু ঢাকা ভার্সিটি তো খারাপ না। তো ওখানে বাদ  দিয়ে এখানে এলেন কেন?”

পারভীন বললো, 

"সে অনেক কথা , সেই প্রসঙ্গে আরেকদিন বিস্তারিত বলা যাবে। তবে আজকে শুধু এটুকুই বলবো , আমার ছোট দুই বোন আর মায়ের খুব ইচ্ছা ছিলো লন্ডন থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নেই। "

শফিক বললো,

"কেন আপনার বাবার কোনো মতামত ছিল না?"

পারভীন বললো,

"আমার বাবা বেঁচে নেই।  হার্ট  স্ট্রোক  করে মারা গেছেন আজ থেকে দেড় বছর পূর্বে। "

তারপর পারভীন আলোচনার সমাপ্তি টেনে বললো,

"আজ আর এই বিষয়ে কোনো কথা বলবো না আমার একটু কাজ আছে। কালকে আসবো। আর চায়ের জন্য ধন্যবাদ। "

এখানে চা বলতে কোনো হেটেল বা রেস্তোরা থেকে বানানো চা আনানো না, শফিক ইলেক্ট্রিক হিটারের গরম পানিতে টি ব্যাগ ও চিনি দিয়ে যা বানায় তাই পরিবেশিত হয়, সেইজন্য ধন্যবাদ সবাই জানায়। সুতরাং শফিক ধন্যবাদ নিয়ে আপ্লুতো হলোনা, বরং চিন্তিত হলো এই ভেবে ,একটা মেয়ের পিতা  মৃত্যুবরণ করার পর সে কেন ইংল্যান্ডে আসলো পড়তে। 

   

পরদিন যথারীতি সময়ে পারভিন এসে অফিসে হাজির হলো শফিক সাহেবকে সালাম জানালো শফিক সাহেব আগেরদিনের ঘুরপাক খাওয়া চিন্তার প্রশ্ন সরাসরি জিজ্ঞাসা করলেন ,

" আপনার আব্বা কিভাবে মারা গিয়েছেন আমাকে একটু জানান। "

পারভীন  বলতে শুরু করল,

" আমার আব্বার নাম আব্দুল মালেক, উনি একজন হোটেল ব্যবসায়ী ছিলেন আমাদের হোটেলটি ছিল কোর্ট  হাউস স্ট্রিটে জজ কোর্টের ঠিক পিছনে যেখানে উকিলদের চেম্বার এবং তাদের সমিতির দোতলা অফিসের সাথের  রোডের পাশে, খুব নাম ছিল অনেকেই এখানে দুপুরের খাবার এবং নাস্তা খাবার জন্য এসে হাজির হত।  যেহেতু শাঁখারী বাজারের পাশে ভিড়ভাট্টা এলাকা রাতেও বেশ চলত, বিকালের নাস্তা ও ভালোই চলত আমাদের আবাসস্থল ছিল পল্টনে।  আমাদের বাসার পিছনে দুটো খালি প্লট ছিল এবং নিজস্ব একটি বাড়ি ছিল।  খালি জায়গায় আমার আব্বা থাকতেই দুটো চারতলা বিল্ডিং করেন তা থেকে আমরা নিয়মিত ভাড়া পাই এবং আমাদের যেটায়  আমরা বাস করি, সেটাই আমরা দোতলা বাদে যাতে আমরা থাকতাম, সেটা বাদে আর সব ফ্লাট ভাড়া দেওয়া হয়েছিল।  হোটেলের ইনকাম তো বেশ ভালোই ছিল তাই ভাড়া ছাড়াও প্রচুর আয় রোজগার ছিল।  আমি সবার বড় আর ছোট দুইটি বোন আছে আমাদের কোন ভাই নেই আব্বা যখন মারা গেলেন মালেক সাহেব,"

 এ কথা বলার সাথে সাথে শফিক বলে উঠলো,

" কি নাম ছিল মিস পারভীন।" 

পারভীন বলল,

" তৃপ্তি  হোটেল, তৃপ্তি আমার মায়ের নাম বেশ ভালই চলত।" 

আশ্চর্যের সাথে শফিক সাহেব বলে উঠলো,

" আরে এই হোটেলে তো আমি নিয়মিত তিন বছর নাস্তা করেছি!"

 পারভীন বলল,

" তার মানে। "

শফিক সাহেব বলা শুরু করলেন,

" আমি যখন ল পাস করলাম তখন একজন সিনিয়র এর কাছে আমি আমার প্র্যাকটিস শুরু করলাম ,সিনিয়র যার   আন্ডারে আমি প্র্যাকটিস শুরু করেছিলাম উনি আবার একটু কঠিন প্রকৃতির লোক ছিল, আমাকে সকাল আটটার মধ্যে ওনার চেম্বারে গিয়ে হাজির হতে হতো দেরি করলে উনি খুব মাইন্ড করতেন। আমি দরজা খোলার পরে কাজের ছেলে আসতো,সাড়ে আটটার  মধ্যে পরিষ্কার করার পরে উনি নয়টার দিকে এসে চেম্বারে হাজির হতেন এত ভোরে আমার বাসা থেকে নাস্তা করে আসা সম্ভব ছিল না।  আমার মা নাস্তা ঠিক রেডি করে রাখতেন কিন্তু এত সকালে খেয়ে রওনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।  তাই আমি অফিস খুলে কাজের ছেলেটা পরিষ্কার করতে আসলে আমি ওখানে নাস্তা করতে যেতাম, আপনার আব্বা মালেক সাহেবকে নাস্তার কথা  বলতেও হতো না, আমাকে  কি নাস্তা দেবেন ,উনি জানতেন আমার মেনু ,আমি দুটো পরোটা, সবজি একটা, একটা ডিম পোচ  অথবা ওমলেট  করে খেতাম খাবার পরে হালুয়া খেতাম যেটা আপনাদের দোকানে খুবই সুনামের, হালুয়ার পরে  প্রতিদিন এক কাপ চা খাওয়া অভ্যাস এটা  তিন বছরের রুটিন , রেগুলার খাওয়ার কারণে আপনার আব্বা আমাকে খুবই পছন্দ করতেন, সম্পর্ক হয়ে যাওয়ার কারণে, উনার ওখানে ভালো কোন কিছু  আইটেম তৈরি হলে উনি আমাকে তা খেতে দিতেন জোর করলেও পয়সা রাখতেন না, যার জন্য উনার সাথে আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আর আপনি তার মেয়ে?'

 পারভীন বলল,

" ওহ  আপনি আমার আব্বাকে চিনেন? যাহোক দেড় বছর আগে উনি হঠাৎই স্ট্রোক করলেন আমরা হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু উনি বাঁচলেন না।  হোটেলটা একজনকে ভাড়া দিয়ে দিয়েছি, সে প্রতিদিন আমাদেরকে ২০০০ টাকা করে দেয়, বাড়ি ভাড়া, হোটেল থেকে আশা টাকা থেকে আমাদের বেশ ভালই চলছিল।  এর মধ্যেই বিদেশের অফার পেলাম লন্ডন থেকে এমবিএ করব খুশির সাথে লন্ডনে আসার জন্য রাজি হয়ে গেলাম, আমার দুই বোনও খুব উৎসাহের সাথে আমাকে সঙ্গ দিল, আমারও খুব ইচ্ছা আমি বিদেশ থেকে একটা বড় ডিগ্রি নিয়ে আসি।  তারপরে বাংলাদেশে একটা ভালো চাকরি করি এই ইচ্ছে থেকেই লন্ডনে আসা। "

শফিক  বলল,

" এখন আপনার পড়ার অবস্থা কি?"

 কথা বলা, চা খাওয়ার মাঝে অনেক সময় হয়ে গিয়েছিল। 

পারভীন বলল,

" আজ আর কোন কথা বলবো না স্যার, আরেকদিন বিস্তারিত জানাবো আপনাকে।"

 সেদিনের মত এখানেই আলাপ আলোচনা শেষ হলো শফিক সাহেব ভাবতে লাগলেন, পারভিন আমার কাছে  কি কাজে আসে?  কি তার উদ্দেশ্য? কি তার সমস্যা ? খুব শিগগিরই জানতে হবে কারণ আগে যাই হোক, এখন সে আমার একজন পরিচিত লোকের মেয়ে শুধু পরিচিতই নয় তিন বছর একাধারে তার সাথে ওঠাবসা প্রতিদিন একবার দেখা হতোই,  শুধু ছুটির দিনগুলো বাদে এই কথা ভাবতে ভাবতে শফিক  অন্য কাজে মগ্ন হয়ে গেল। 


 


 

পরের দিন আসার সাথে সাথে শফিক সাহেব বলে উঠলেন,

"মিস পারভীন  আপনি অনুগ্রহ করে জানান, আপনি আমার কাছে কি সহায়তা চাচ্ছেন আর আপনার কাছে একটা বিশেষ অনুরোধ, এখন থেকে আপনি আসলে আমার এখানে অনুগ্রহ করে শালীন  পোশাক পড়ে আসবেন কারণ বয়সে আমরা কাছাকাছি হলেও আপনি আমার ভাইয়ের মেয়ে কারণ আপনার আব্বা আমাকে ভাই বলেই ডাকতেন, যদিও উনি আমার বয়সে অনেক বড় ছিল আর শালীন পোশাক পড়ে এর জন্য আসতে বললাম কারণ বয়সের ব্যবধান কম  হলেও আপনি আমার সম্পর্কে ভাতিজি।"

  একথা বলার পরেই পারভিন ডুকরে কেঁদে উঠলো তার চোখের জলে গাল সহ গেঞ্জির গলাও ভিজে গেল।  ব্যারিস্টার শফিক সাহেব হতচকিত হয়ে গেলেন চিন্তা করলেন আমি কি এমন খারাপ কথা বললাম। 

 তার চিন্তার  ভুল ভেঙ্গে দিয়ে পারভিন বলতে শুরু করল, "স্যার আমি এখানে এসেছিলাম একটা মিশন নিয়ে আপনার বন্ধু মুজিবুল্লাহ আমাকে নিয়োগ দিয়েছিল আপনার চরিত্র হনন করার জন্য।  কিন্তু আপনি আমার সাথে এমন আচরণ করলেন যাতে আমার পিতার কথা মনে পড়ে গেল এবং নিজের জন্য নিজেরই মনটা হাহাকার করে উঠলো।  এখানে এসেছিলাম একটা উচ্চ শিক্ষার জন্য কিন্তু এখন আমি একজন চরিত্রহীনা মহিলা।" 

শফিক সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,

" কেন এমন হলো আপনি আমাকে সবিস্তারে সব বলুন আপনার আব্বার পরিচিত হিসাবে আমি আপনার জন্য কিছু করতে পারি কি না। 

মিস  পারভীন  বিস্তারিত বলা শুরু করলো, 

“আমার আব্বা মারা যাওয়ার পরে আমার আব্বারই এক পার্টনার যিনি হোটেলেও বসতেন তিনি এখন লন্ডনে থাকেন। তিনি বাসায় আসলেন উনি আমার আব্বার ব্যবসার পার্টনার ছিলেন কিন্তু লন্ডনে আসার জন্য উনি ওনার সব পার্টনারশিপ আমার আব্বার কাছে বিক্রি করে দেন যার জন্য ওই হোটেলটার  সম্পূর্ণ মালিকানা আমাদের হয়ে যায় কিন্তু আমাদের তার সাথে ভালই সম্পর্ক ছিল। আমার আব্বা মারা যাওয়ার পরে তিনি আমাদের বাসায় আসলেন অনেক দুঃখ প্রকাশ করলেন , যাতে আমাদের মন ভরে গেল, তিনি প্রস্তাব রাখলেন বললেন,

“ভাবি আপনার মেয়েকে লন্ডনে পাঠান সে ভালো একটা পজিশনে বসতে পারবে। আপনার তো আর টাকার অভাব নেই সুতরাং একটি মেয়েকে ভালোভাবে উচ্চ শিক্ষা দিন।”

 অনেক আশা নিয়ে, অনেক চেষ্টা করে, মার্কেট করে ভালোভাবে মনের প্রফুল্লতা নিয়ে এই দেশে এসেছিলাম আসার পরে উনি আমাকে ফোর্স পোস্টটিটিউশনে জড়িয়ে দিলেন , আমার পাসপোর্ট সব কাগজপত্র উনার কাছে আমার কাছে কিছুই নেই আমি যে দেশে  চলে যাব তার কোন রাস্তা নেই এর মধ্যেই এই অন্ধকারের রাস্তায় মুজিবুল্লাহ সাহেবদের সাথে আমার দেখা হলো।  তারা আমার কাস্টমার।  

তারা আমাকে একটি বিশাল অফার দিয়েছে আমি যদি আপনাকে বশ করতে পারি, আপনার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করতে পারি  তাহলে তারা আমাকে দেশে পাঠানোর জন্য একটা ব্যবস্থা করে দিবে আমি রাজি হয়ে গিয়েছি কারণ আমি অসহায়। "

কথাগুলো শুনে শফিক সাহেব এর মন মজিবুল্লাহ, এরশাদ ও হায়দার  এর উপরে ঘৃনায়  ভরে গেল।  বন্ধু কি এরকম হতে পারে? না হয় একটু রাগ করেছিলাম  কিন্তু তাই বলে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেবে? আমি মদ খাই না, মেয়েদের সাথে মিশি না , নাইট ক্লাবে যাই না , এটা কি কোন অপরাধ হতে পারে ? আমি ভালো থাকতে চাই এখান থেকে ভালো একটা ডিগ্রী নিয়ে দেশে চলে যাব সেখানে বড় হব এইতো ইচ্ছা, সামান্য চাওয়া আমার।  যাই হোক, শফিক সাহেব এই চিন্তা করলেন মালেক সাহেবের মেয়েকে বাঁচাতে হবে তাকে এই দুর্দশা থেকে উদ্ধার করতে হবে ।

শফিক সাহেব লোকাল থানার সবচেয়ে বড় অফিসার এসপি সাহেবের কাছে ফোন করলেন, বললেন,

" হ্যালো স্যার আমি ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ,আমি কি আপনার একটু সহায়তা পেতে পারি?" 

এসপি সাহেব বললেন,

 "অবশ্যই পারেন আপনার জন্য কি করতে পারি অনুগ্রহ করে জানান। "

 শফিক সাহেব বললেন,

" আমি একজন ব্যারিস্টার এখানে ল প্র্যাকটিস করছি এবং  কলেজে ল পড়াই আমার একজন আত্মীয় এবং ক্লায়েন্ট খুবই কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়েছে।  কিভাবে আমি তাকে এর থেকে পরিত্রাণ দিতে পারি তার জন্যই আপনার কাছে সহায়তা চেয়েছি।" 

এসপি সাহেব বললেন,

" কি সমস্যা আমাকে অনুগ্রহ করে বলুন। "

 শফিক সাহেব বললেন,

" তাকে ফোর্স  প্রস্টিটিউশন করানো হচ্ছে তার এক আত্মীয়, সম্পর্কে চাচা সেই এই কাজ করাচ্ছে। "

এসপি সাহেব বললেন,

" বলেন কি এটা তো গুরুতর ক্রিমিনাল অফেন্স তার তো কঠিন শাস্তি হওয়ার কথা।”

শফিক সাহেব বললেন,

" শুধু তাই নয় পাসপোর্ট আটকে রাখার কারণে সে দেশেও ফিরে যেতে পারছে না আপনি তাকে কি সহায়তা করতে পারেন ?"

এসপি সাহেব বললেন,

" আমি তাকে অনেক সহায়তা করতে পারি।  অনুগ্রহ করে আপনি আগামীকাল তাকে নিয়ে আমার এখানে একটু আসুন দেখি আমি কি করতে পারি। " 

শফিক সাহেব সম্পূর্ণ কথাগুলি আবার পারভীনের কাছ থেকে শুনলেন একটা কাগজে লিখে রাখলেন এবং লেখার পরে পারভীনের স্বাক্ষর রেখে দিলেন। তাকে বললেন,

" আগামীকাল সকাল বেলা এসপি  অফিসের সামনে থাকবেন , ওখানে দেখা হবে আর এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবেন না,  আর এখন থেকে আমাকে স্যার বলবেন না বলবেন আঙ্কেল।"



 


 

পরের দিন সকালে অফিস আওয়ারে এসপি অফিসের সামনে পৌঁছেই শফিক সাহেব দেখলেন, পারভিন দাঁড়িয়ে রয়েছে।  শফিক সাহেব মনে মনে খুবই খুশি হলেন,  তাকে নিয়ে এসপি সাহেবের রুমে গেলেন।  এসপি সাহেব জন আব্রাহাম  সম্মানের সাথে করমর্দন করে তাদেরকে বসতে বললেন,  চায়ের  ব্যবস্থা করলেন উনি একজন অফিসার কে ডাক দিলেন অফিসার কে বললেন এই মেয়েটির ঘটনার এলাকার সংশ্লিষ্ট এসপি এন্থনি কুইনকে  আমি সম্পূর্ণ কিছু বুঝিয়ে বলেছি তুমি উনাদেরকে নিয়ে এসপি সাহেবের সাথে দেখা করাও।  ওখান থেকে চা খেয়ে শফিকরা সংশ্লিষ্ট এসপি অফিসের দিকে রওনা দিল 

তারা পুলিশের গাড়িতেই গেল সংশ্লিষ্ট এসপি সাহেব এন্থনি কুইন তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বসতে বলল, সে একজন অফিসার কে কল করলো।  অফিসার আসলে পরে তাকে বলল,

" এই মেয়েটি বিপদগ্রস্ত তাকে সহায়তা করতে হবে সে এখানে তার কথিত চাচার দ্বারা নির্যাতিত তুমি ব্যাপারটা টেক কেয়ার করো আর এখনই তার একটা জবানবন্দি নিয়ে নাও তোমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন মিস্টার বার  অ্যাট ল সাহেব। "

 অফিসার একটি কাগজ এনে সম্পূর্ণ ঘটনা জবানবন্দি আকারে লিপিবদ্ধ করলো তারপরে পারভীনের সেখানে স্বাক্ষর নিল। এসপি সাহেব বললেন এখন উনাকে আমরা কোথায় রাখতে পারি?

 শফিক সাহেব বললেন,

" আমি অবিবাহিত আমার এখানে রাখার জায়গা নেই, তবে একটি গার্লস  হোস্টেলে ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়। " 

এসপি সাহেব বললেন,

" ঠিক আছে আমি হোস্টেলের ব্যবস্থা করছি কিন্তু আপনি নিজে নিয়ে রেখে আসবেন। অনুগ্রহ করে এই দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবো কারণ আপনি মেয়েটির এটর্নী। " তখন শফিক সাহেব তার ওকালতি প্যাচ কোষে এসপি সাহেবকে কিছু বললেন এসপি সাহেব শুনে হাস্যরসের সাথে সম্মত হলেন। 

  শফিক  সাহেব বললেন,

" পারভীন  তুমি আমার অফিসে চলে এসো অফিস খোলার ১ ঘন্টা পরে।  এতদিন যে সময়ে এসেছো  সে সময় না, এতদিন এসেছো  অফিস আওয়ারের পরে আড্ডা দেওয়ার সময় কিন্তু এবার আসবে জাস্ট অফিস খোলার সাথে সাথে এক ঘন্টার মধ্যে। "

 পারভিন সম্মত হয়ে চলে গেল।  

পারভীন  ঠিক অফিস খোলার এক ঘন্টা পরে  অফিসে এসে হাজির হলো।  এসে দেখতে পেল আগেই অফিসে মুজিবুল্লাহ চৌধুরী , জিয়া হায়দার ও জীবন এরশাদ এসে  বসে আছে ওকে দেখে তারা চমকে উঠল বলল,

" তুমি এখানে কেন ?"

পারভীন  বলল,

"আমার পিছনে পুলিশ লেগেছে , এবং নিচে দুজন পুলিশও দেখালো জানালা  দিয়ে দেখে মুজিবুল্লাদের চক্ষু চরক গাছ। 

বারিস্টারকে বললো,

"দোস্ত আমাদের বাঁচাও। 

ব্যারিস্টার বললো,

"তোরা বস। আমি দেখি কি করা যায়?"

এই বলে পারভীনকে নিয়ে নিচে পুলিশের কাছে চলে গেলো এসপির সাথে পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী। 

পারভীন ও পুলিশকে সাথে নিয়ে গার্লস হোস্টেলে চলে গেলো। হোস্টেল ইনচার্জকে এসপি সাহেব আগেই সব জানিয়ে রেখেছিলো। ব্যারিস্টারের জিম্মায় তাকে হোস্টেলে রেখে দিলো। তারপরে অফিসের সামনে বারিস্টারকে নামিয়ে দিলো।জানালা দিয়ে মুজিবুল্লা গং নামিয়ে দিতে দেখলো। ব্যারিস্টার রুমে ঢুকেই বললো, "দোস্ত আজকে আমি শেষ। আমার জিম্মায় রেখেছে , অফিসে আসতে  চেয়েছিলো তোদের যদি কোনো সমস্যা হয় সেইজন্য আসতে দেইনি। "

হায়দার বললো,

ঠিক করেছিস। "

ব্যারিস্টার বললো,

"কিন্তু তোরা ওকে চিনিস কিভাবে?"

জীবন বললো,

"আমাদের সাথে পয়সার মাধ্যমে একটু সম্পর্ক হয়েছিল। "

ব্যারিস্টার সফিক এমন ভাব দেখালো যে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।  বললো,

"দোস্ত ইটা ফোর্স প্রস্টিটিউশন কেস , যদি জবানবন্দিতে তোদের নামে কিছু বলে?"

ওরা তিনজন একসাথে বলে উঠলো,

"দোস্ত বাঁচা। "

ব্যারিস্টার শফিক বললো,

"দেখি, ওকে জবানবন্দি না দিতে দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়া যায় কিনা ? কিন্তু টিকেটের বেবস্থা কিভাবে করবো ?"

মুজিবুল্লাহ বললো,

"কোনো চিন্তা নাই আমি দেব। "

ব্যারিস্টার আবার বললো,

"টিকেট না হয় হলো , কিন্তু খালি হাতে কিভাবে দেশে যাবে?"

তিনজন বললো ,

"নো প্রবলেম , ৫০০ পাউন্ড করে দিয়ে দেব। "

ব্যারিস্টার বললো,

"দেশে নামলে আত্মীয় স্বজন বলবে ভিক্ষা করতো, আয় আমরা সবাই মিলে ১৫০০ করে ৬০০০ পাউন্ড দিয়ে দেই।"

সবাই একমত হয়ে গেলো।ব্যারিস্টার শফিক সাহেবের মনে মধুর হাসি।  

      

 ১০

পরেরদিন সকালেই মুজিবুল্লাহ টিকেট নিয়ে আসলো। বাকি দুইজন সহ সবাই পাউন্ড ও নিয়ে আসলো। ব্যারিস্টার সব নিয়ে এসপি সাহেবের অফিসে গেলো। এন্থনি কুইন বললো, 

"সরকার সব বেবস্থা করতো , আপনি এতো কষ্ট করলেন কেন?"

ব্যারিস্টার মনে মনে হেসে ভাবলো , দুষ্টের দমন সিস্টর পালন।

পরেরদিন বিকালে পারভীনের ফ্লাইট। এন্থনি কুইন বললো, 

"বারএট ল সাহেব আপনি কোনো চিন্তা করবেন না , কাগজ পত্র ভিডিও ও লিখিত জবানবন্দিতে ওর চাচার যাবৎ জীবন সাজা হবে। আমরা জাল বিছিয়ে রেখেছি , পারভীন এয়ারপোর্টে থাকা অবস্থাই ওর উইকেট চাচা জেলে থাকবে।"

ব্যারিস্টার সাহেব ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে আসতেই দেখলো গেটের বাইরে রাস্তায় মজিবুল্লাহ গং দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের মুখে চিন্তার পাহাড়। বললো,

"দোস্ত কি খবর ?"

ব্যারিস্টার শান্তির শাঁস ফেলে বললো ,

"দোস্ত সাকসেস , ওর চাচার উপর সব দোষ ফেলেছি যে ওকে এই দেশে এনেছিল।আর কারো নাম আসতেই দেই নাই।"

ওরা  সবাই শান্তির নিঃশ্বাস ফেললো,

"আহ্হঃ " 

ব্যারিস্টার বললো ,

"দোস্ত ওতো আটক আয় ওকে কিছু মার্কেট করে দেই।  দেশে যাবে।"

সবাই রাজি হলো ১৫০০ পাউন্ডের মার্কেট ওদের কার্ডের মাধ্যমে হয়ে গেলো, ব্যারিস্টার ইচ্ছে করেই কার্ড আনেনি।  

ওদের সাথে নিয়েই হোস্টেলে গেলো মুজিবুল্লার গাড়িতে। োর উপরে যেতে রাজি হলোনা। মনে মনে ব্যারিস্টার এটাই চেয়েছিলো। বিনীতা পারভীনকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে পরেরদিন দুপুরে আসার কথা বলে ব্যারিস্টার চলে আসলো। 

পরেরদিন দুপুরে যেয়ে ব্যারিস্টার দেখলো বিনীতা রেডী হয়ে বসে আছে। শফিককে বললো,

"স্যার,সকালে পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো। চাচাকে কোর্টে উঠিয়েছিলো ,আমার পাসপোর্ট আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু আমাকে পুলিশের দেয়া পাস দিয়েই দেশ ছাড়তে হবে, কারণ টিকেট ওটা দিয়েই কাটা। ওরা বললো, চাচার যাবতজীবন সাজা হবে। কারণ এ দেশে ফোর্স প্রস্টিটিউশন খুব খারাপ বেপার। "

ব্যারিস্টার বললো,

"হওয়াই উচিত , তোমরা ওর সাথে আর কোনো সম্পর্ক রেখোনা।

'ব্যারিস্টার তার নিজের গাড়ি ড্রাইভ করে বিনিতাকে এয়ারপোর্টে দিতে গেলো। রাস্তায় বললো,

"পারভীন আমাকে দেশে গিয়ে শুধু একবার ফোন করবেন ঠিকমতো পৌঁছানোর খবর দেয়ার জন্য। আর কখনো যোগাযোগ করবেন না। আর এই ঘটনাটা দুস স্বপ্ন  ভেবে ভুলে যাবেন। "

পারভীন বললো,

"ঠিক আছে স্যার। "

পারভীনকে বিদায় জানিয়ে শফিক সাহেবের মন খারাপ হয়ে গেলো। নানান চিন্তা মাথায় আসলো , কিভাবে বাপের বন্ধু তার মেয়ের সমান একজনকে এঅবস্থায়  ফেলে। মনুষত্ব বলতে কি দুনিয়া থেকে উঠে গেলো। 

ঠিক পরেরদিন পারভীন যেই সময় অফিসে আসতো ঠিক সেই সময়ে একটা ফোন আসলো। তুলতেই কানে ভেসে আসলো পারভীনের গলা ,

"আব্বা আমি ঠিকমতো পৌঁছেছি , দোআ করবেন। "

শফিক হতবিহবল হয়ে গেলো , যে জীবনে স্যার ছাড়া আঙ্কেল ও বলেনি। আজ সে কি বললো। শফিকের মুখে কোনো ভাষা আসলো না , শুধুই নীরবতা। 

ওপাশ থেকে লাইন কেটে গেলো। 




 


 

.................................................................সমাপ্ত.......................................................






 

Comments

    Please login to post comment. Login