Posts

প্রবন্ধ

পার্বতীপুর থেকে ঈদের শুভেচ্ছা

April 5, 2025

সাজিদ রহমান

10
View

প্যারিসের আছে আইফেল টাওয়ার, লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ, নিউইয়র্কের আছে যেমন স্টাচু অব লিবার্টি-তেমনি আমাদের জন্মভিটার আইকনিক স্ট্রাকচার পার্বতীপুর রেল জংশন- সেখান থেকে আপনাদের সকলকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা।

উপমহাদেশে ব্রিটিশ রেল স্থাপনের শুরুর দিকে-সেই ১৮৮৫ সালে পার্বতীপুর রেলজংশনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একটি নতুন ধরনের শহর। ১৪০ বছর পূর্বে এদেশে শহর ছিলো না বললেই চলে-যা ছিলো তা মূলত নদী বন্দর কেন্দ্রিক হাট বাজার। পায়ে হেটে, গরুর গাড়ি ছাড়া মানুষের যাতায়াত, ব্যবসা বাণিজ্যের পুরাটাই ছিলো নদী নির্ভর। তার বিপরীতে সমান্তরাল দুইটা পাতের উপর চড়ে দানবের মত আসা ট্রেন সত্যিকার অর্থে অজপাড়ার আনপড় সহজ সরল মানুষের কাছে ছিলো বিস্ময়কর।

বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালি বের হয় ১৯২৯ সালে। অপু ও দুর্গার জীবনের অন্যতম বিস্ময়কর ঘটনা ছিলো রেল লাইন দেখা। অপু দুর্গার রেল লাইন দেখতে যাওয়ার যে শিহরিত অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে তা অনন্য। তারও ৪৪ বছর পূর্বে পার্বতীপুরে ৪ লাইনের জংশন স্থাপিত হয়। এখানে সংযুক্ত হয়েছে ব্রডগেজ ও মিটার গেজ। ভুলে যাওয়ার আগে বলে রাখি, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ছোট গল্প 'বাক্স বদল' গল্প পার্বতীপুর জংশনেরই ঘটনা, পরে এই গল্প থেকে সিনেমা তৈরি হয়েছে (১৯৭০ সালে নির্মিত, সৌমিত্র ও অপর্ণা সেন অভিনীত)। এ বাদেও তৈরি হয়েছে বেশ কিছু সিরিয়াল ও নাটক। পার্বতীপুর জংশনের দুঃখ বা সুখ যেটাই বলি, এখনও ব্রিটিশ রেলের আদি রুপকে ধরে রেখেছে। একারনে হয়ত কাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক সিনেমার শুটিং হয় এই জংশনে।

শুধু তাই নয়, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের "কুহেলিকা" উপন্যাসের সাথেও জড়িয়ে আছে পার্বতীপুর জংশনের নাম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী প্রমথ সংঘঠনের কাজে ছদ্মবেশে চলাফেরা করার সময় কিছুক্ষণের জন্য এই জংশনে এসেছিলেন। পুলিশের চোখেধুলাে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

দেশের উত্তরে অবস্থিত এই জংশনের গুরুত্ব ইদানিং অনেক কমে গেছে (যদিও এখনও আপ-ডাউন মিলে প্রতিদিন ৫৮টি ট্রেন চলে)। ১৯৪৭ সালের আগে বাংলা বিহার উড়িষ্যা বাদেও আসামে যাতায়াতের জন্য গুরুতপূর্ন পয়েন্ট ছিলো পার্বতীপুর জংশন। এখনও এই উপজেলা শহর থেকে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও ঢাকা ছাড়াও ২০টি জেলায় যাতায়াত করা যায়। জংশনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ডিজেল শপ, ওয়ার্কশপ ও দেশের একমাত্র কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা।

ফিলি**স্তিনের গা*জা উপত্যকার চেয়ে কিছুটা বড় আয়তনের (গা*জা ৩২০ বর্গকিলোমিটার, পার্বতীপুর ৩৯৫ বর্গকিলোমিটার) এখানে আছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও বিদ্যুতকেন্দ্র, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প, উত্তর পশ্চিম মৎস প্রজনন হ্যাচারি। আছে একটি মিশনারী হাসপাতাল-যেখানে চিকিৎসার বেশ সুনাম আছে।

এই জংশন-এক অর্থে দুঃখেরও কারন হয়েছে। অতি পুরাতন এই শহরটি এখনও মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি। শহরের জমির মালিক হয় রেল, না হয় অন্য কোন বিশেষ সংস্থা। হয়ত সব মিলিয়ে বর্ণহীন হয়ে পড়ছে জংশনের এই জনপদ।

তবুও এই মাটি আমাদের খুব প্রিয়, আমরা এই মাটির সন্তান, জীবিকার প্রয়োজনে দেশের নানা প্রান্তে, বিদেশ বিভূই এ ছড়িয়ে থাকলেও, সময় পেলেই ছুটে আসি। এবারও এসেছি। ব্রিটিশ রেল অধ্যুষিত জংশনময় পার্বতীপুরের মাটি থেকে আপনাদের সকলকে জানাচ্ছি ঈদের শুভেচ্ছা।

ঈদ মোবারক।

Comments

    Please login to post comment. Login