Posts

নন ফিকশন

ভ্লাদিমির পুতিনের সাক্ষাৎকার, নিয়েছেন টাকার কার্লসন - পর্ব ৪ (নব্য নাৎসিবাদ এর উত্থান এবং রাশিয়াকে খলনায়ক বানানো - কার প্ররোচনায় ও কেন?)

April 7, 2025

মো; আহসান-উজ-জামান

Original Author ভ্লাদিমির পুতিন, টাকার কার্লসন

Translated by আহসান উজ জামান

5
View

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই প্রথম পশ্চিমা মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন। মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন এর নেয়া সাক্ষাৎকারটি অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ পুরো ঘটনাটি রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও দেখা জরুরী, যা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না পশ্চিমা মিডিয়ার আগ্রাসী এবং একমুখী প্রচারণার জন্য। 

সাক্ষাৎকারটি বেশ দীর্ঘ হওয়ায় ধাপে ধাপে প্রকাশ করছি। কলেবর যাতে বেশি দীর্ঘায়িত না হয় সেজন্য কিছুটা পরিমার্জনাও করা হয়েছে, তবে গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু বাদ দেয়া হয় নি। আশা করি সবাই ধৈর্য সহকারে পড়বেন এবং মতামত জানাবেন।

তৃতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

Putin Spotted Using Hand To Put Leg in Place During Tucker Carlson  Interview - Newsweek
টাকার কার্লসন এবং ভ্লাদিমির পুতিন

৪র্থ পর্ব

নব্য-নাৎসিবাদের অনুসারী আজভ ব্যাটালিয়নের সদস্যবৃন্দ, কিয়েভ, ইউক্রেন

টাকার কার্লসন:

মাফ করবেন। নব্য-নাৎসিবাদ আবার কোথা থেকে এলো? নাৎসিবাদ নির্মূল (ডি-নাজিফিকেশন) বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন?

ভ্লাদিমির পুতিনঃ

এটা নিয়েই আমি এখন কথা বলবো। আমাদের জন্য বিষয়টা অত্যন্ত উদ্বেগের এবং গুরুত্বপূর্ণ। নাৎসিবাদ নির্মূল। স্বাধীনতা লাভের পর, ইউক্রেন তার পরিচয় খোঁজার চেষ্টা শুরু করে, যেমনটা কিছু পশ্চিমা বিশ্লেষক বলে থাকেন। কিন্তু তারা কিছু মেকি বীরদের উপর ভিত্তি করে তারা তাদের জাতীয় পরিচয় নির্মাণ করতে শুরু করে, যারা আসলে হিটলারের সহযোগী ছিল। এই মেকি বীর গুলো কারা?

আমি আগেই বলেছি, উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে যখন ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের তাত্ত্বিকেরা হাজির হন, তখন তারা মনে করতেন একটি স্বাধীন ইউক্রেনের রাশিয়ার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক থাকা উচিত।

কিন্তু ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়, সেই অঞ্চলগুলো তখন পোল্যান্ড-লিথুয়ানিয়া কমনওয়েলথের অংশ ছিল। পোল্যান্ড, যেখানে ইউক্রেনীয়দের অত্যাচার করা হতো এবং তাদের সাথে অত্যন্ত নিষ্ঠুর আচরণ করা হতো। চেষ্টা করা হয়েছিল তাদের জাতিগত পরিচয় নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার।

এ সবই কিন্তু মানুষের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, ইউক্রেনের চরম জাতীয়তাবাদী একটি গোষ্ঠীর এক অংশ হিটলারের সঙ্গে সহযোগিতা করে, বিশ্বাস করে যে সে তাদের মুক্তি এনে দেবে। জার্মান বাহিনী, এসএস বাহিনী এবং হিটলারের সহযোগীদের দিয়ে পোলিশ ও ইহুদি জনগণের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানোর মত সবচেয়ে নোংরা কাজগুলো করানো হতো। এভাবেই পোলিশ, ইহুদি এবং রুশ জনগণের ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয়। এইসব কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয় কিছু সুপরিচিত ব্যক্তি—বান্দেরা, শুখেভিচ। এই লোকদেরই ইউক্রেনে জাতীয় বীর হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এটাই সমস্যা। আমাদের বারবার বলা হয় যে জাতীয়তাবাদ ও নব্য নাৎসিবাদ অন্যান্য দেশেও আছে, এটা তেম্পন কোণ ব্যাপার না। হ্যাঁ, অল্পস্বল্প আছে বটে, কিন্তু আমরা তা উপড়ে ফেলি, এবং অন্যান্য দেশগুলোও এর বিরুদ্ধে লড়াই চালু রেখেছে। কিন্তু ইউক্রেনের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। ইউক্রেনে এই লোকদের জাতীয় বীর বানানো হয়েছে। তাদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। তাদের মুখোশ পতাকায় দেখা যায়। নাৎসি জার্মানির মতো মশাল মিছিল করে এই নামগুলো স্লোগান আকারে উচ্চারণ করা হয়।

এরা সেই লোক যারা পোলিশ, ইহুদি এবং রুশদের হত্যা করেছে। এই চর্চা বন্ধ করতে হবে এবং এই মতবাদ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে হবে। আমি বলি ইউক্রেনীয়রা রুশ জনগণেরই অংশ। তারা বলে, “না, আমরা আলাদা জাতি।” ঠিক আছে, তারা যদি নিজেদের আলাদা জাতি মনে করে, সেটার অধিকার তাদের আছে, কিন্তু সেটা যেন নাৎসি মতাদর্শের ভিত্তিতে না হয়।

২০০৭ এর অক্টোবর এ ইউক্রেনে Stepan Bandera এর স্মৃতিস্তম্ভ উন্মোচন করা হয়

টাকার কার্লসন:

এখন পর্যন্ত যে ভূখণ্ড আপনার দখলে আছে, আপনি কি তাতেই সন্তুষ্ট থাকবেন?

ভ্লাদিমির পুতিন:

আমি আগে আপনার আগের প্রশ্নের উত্তর দেয়া শেষ করব, তারপ অন্য প্রসঙ্গে যাবো। আপনি নব্য-নাৎসিবাদ এবং নাৎসিবাদ নির্মূল সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন। আমি আপনাকে একটি ঘটনার কথা বলবো, যেটা অনেকেরই জানা, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোতে একে চেপে রাখা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট একবার কানাডা সফর করেছিলেন। কানাডার সংসদ এমন একজন ব্যক্তিকে পরিচয় করিয়ে দেয়, যার সম্পর্কে স্পিকার বলেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। বলুন তো দেখি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কে যুদ্ধ করেছিল? হিটলার ও তার সহযোগীরা। দেখা গেল, এই লোকটি এসএস বাহিনীতে ছিল। সে নিজে রুশ, পোল এবং ইহুদিদের হত্যা করেছে। এসএস বাহিনী গঠিত ছিল ইউক্রেনীয় চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা যারা এসব জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছিল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সহ কানাডার পুরো সংসদ এই লোককে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। ভাবা যায়? ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিজেও কিন্তু জাতিতে একজন ইহুদি।

Canadian official apologizes for praising Ukrainian veteran who fought for  Nazis in WWII

টাকার কার্লসন:

কিন্তু হিটলার তো ৮০ বছর আগেই মারা গেছেন। নাৎসি জার্মানি আর নেই। আমার মনে হচ্ছে আপনই বলতে চাচ্ছেন যে আপনি ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে চান—কিন্তু কিভাবে? আপনি কীভাবে তা করতে চান?

ভ্লাদিমির পুতিন:

আপনার প্রশ্নের মাঝে খুব সূক্ষ্ম একটা মারপ্যাঁচ আছে। আমি কী ভাবছি তা আপনাকে সরাসরি বলতে পারি। আপনি দয়া মনে আঘাত নিবেন না।

টাকার কার্লসন:

মোটেও না।

ভ্লাদিমির পুতিন:

এই প্রশ্নটা বেশ সূক্ষ্ম এবং এর মাঝে একটু প্যাঁচ আছে। আপনি বলছেন যে হিটলার তো অনেক বছর আগেই মারা গেছেন, ৮০ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু তার উদাহরণ তো এখনো জীবিত। যারা ইহুদি, রুশ ও পোলদের হত্যা করেছে তারাও তো এখনো জীবিত। আর আজকের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এমন একজন লোককে কানাডার সংসদে ডেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। আজকের দিনেও এসব ঘটে তাহলে কি আমরা বলতে পারবো যে এই মতাদর্শ আমরা পুরোপুরি উৎখাত করতে পেরেছি? আমাদের এই সব লোকদের থেকে মুক্ত হতে হবে যারা এই মতাদর্শ এখনো ধরে রেখেছে, এটি সমর্থন করছে এবং রক্ষা করছে। এটাই আমাদের দৃষ্টিতে নাৎসিবাদ নির্মূল।

টাকার কার্লসন:

ঠিক। তবে আমার প্রশ্নটা আরেকটু বেশি নির্দিষ্ট ছিল এবং তার উদ্দেশ্য কিন্তু কোনভাবেই নাৎসিদের সাফাই গাওয়া নয়, হোক পুরনো কিংবা নতুন। প্রশ্নটা বাস্তবমুখী। আপনি পুরো ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণ করেন না। কিয়েভ ও আপনার নিয়ন্ত্রণে নয়। আর তেমনটা আপনি করতে চাইছেন বলে মনেও হয় না। তাহলে আপনি কীভাবে অন্য একটি দেশের সংস্কৃতি, মতাদর্শ, ইতিহাসচেতনা মুছে ফেলবেন যা আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন না?

ভ্লাদিমির পুতিন:

আপনি জানেন, আপনার কাছে যতই অদ্ভুত শোনাক না কেন, ইস্তানবুলে আলোচনার সময় আমরা একমত হয়েছিলাম—এবং সেটা লিখিত আকারেই আছে—ইউক্রেনে নব্য নাৎসিবাদ  চর্চা করা হবে না। এমনকি এটি আইনগতভাবেও নিষিদ্ধ করা হবে। মি. কার্লসন, আমরা এতে একমত হয়েছিলাম। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের বিষয় আলোচনার মাধ্যমেও সমাধান করা সম্ভব। এতে ইউক্রেনের জন্য কিছু লজ্জাজনক নেই, কারণ এটি একটি আধুনিক সভ্য রাষ্ট্র। কোন রাষ্ট্র কি নাৎসিবাদ প্রচার করতে পারে? পারে না, তাই তো? ব্যস, এটুকুই।

টাকার কার্লসন:

তাহলে শান্তি আলোচনা কি হবে? এবং কেন এখনো ইউক্রেন সংকট নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি?

ভ্লাদিমির পুতিন:

আলোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনাগুলো একটি জটিল প্রক্রিয়ায় হলেও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেও গিয়েছিল। কিন্তু আমরা যখন কিয়েভ থেকে সেনা প্রত্যাহার করি, যেমনটা আমি আগেও বলেছি, তখন অপর পক্ষ সমস্ত চুক্তি ছুড়ে ফেলে দেয় এবং পশ্চিমা দেশগুলো, ইউরোপীয় দেশগুলো আমেরিকার নির্দেশনা মেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আরও কি ঘটলো শুনুন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট একটি আইনি আদেশ জারি করে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেন। তিনি একটি ডিক্রি সই করেন যা রাশিয়ার আলোচনা করা নিষিদ্ধ করে। তাহলে আমরা কীভাবে আলোচনা করব যদি তিনি নিজেই তা নিষিদ্ধ করেন? আমরা জানি, তিনি সমাধান নিয়ে কিছু ধারণা দিচ্ছেন, কিন্তু কোনো কিছুতে একমত হতে হলে তো আগে আলোচনা করতে হয়। তাই না?

টাকার কার্লসন:

কিন্তু আপনি তো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নয়, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন। আপনি সর্বশেষ কবে জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছেন?

ভ্লাদিমির পুতিন:

আমার মনে নেই। আপনি চাইলে খুঁজে বের করতে পারেন। উনাকেই হিজ্ঞেস করুন না।

টাকার কার্লসন:

আপনার মনে নেই?

ভ্লাদিমির পুতিন:

না। সবকিছু আমাকে কেন মনে রাখতে হবে? আমার নিজের কিন্তু অনেক কাজ আছে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাজও আছে।

টাকার কার্লসন:

কিন্তু তিনি তো সেই যুদ্ধের অর্থায়ন করছেন যা আপনাকে লড়তে হচ্ছে, তাই ভেবেছিলাম এটা মনে রাখার মতোই একটা ঘটনা।

ভ্লাদিমির পুতিন:

হ্যাঁ, তিনি অর্থ দিচ্ছেন। তবে আমি কিন্তু সামরিক অভিযান শুরুর আগেই তার সাথে কথা বলেছিলাম। এবং তখন আমি তাকে বলেছিলাম, "রাশিয়াকে দূরে ঠেলে দিয়ে এবং ইউক্রেনে যা ঘটছে তার পেছনে সমর্থন দিয়ে কিন্তু আপনি একটি ঐতিহাসিক ভুল করছেন। " আমি তাকে এটা বারবার বলেছিলাম। আমি মনে করি আমার এটুকুতেই থেমে যাওয়া উচিত। আপনি জানেন, অন্যের সাথে কথোপকথনের ব্যাপারে আমি প্রকাশ্যে মন্তব্য করি না। 

টাকার কার্লসন:

তখন তিনি কী বলেছিলেন?

ভ্লাদিমির পুতিন:

তাকেই জিজ্ঞেস করুন না। আপনার পক্ষে তো সহজ, আপনি তো আমেরিকার নাগরিক। আমাদের মধ্যকার আলোচনার বিষয়ে প্রকশ্যে মন্তব্য করা আমি সঠিক মনে করি না।

টাকার কার্লসন:

তাহলে আপনার তার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে ফেব্রুয়ারি ২০২২-এর আগে?

ভ্লাদিমির পুতিন:

হ্যাঁ, এরপর আর কথা হয়নি। তবে কিছু যোগাযোগ এখনো বজায় আছে। আপনাকে একটা কথা বলেছিলাম—আমেরিকার সঙ্গে যৌথভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব—তা মনে আছে?

টাকার কার্লসন:

হ্যাঁ।

ভ্লাদিমির পুতিন:

আপনি তাদের সবাইকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। সবাই সুস্থ-সবল আছে, সৃষ্টিকর্তার করুণায়। সেই সাবেক প্রেসিডেন্ট, মি. গেটস এবং বর্তমান গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক, মি. বার্নস—তখনকার রাশিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত—আমার মতে খুব সফল রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তারাও সেই আলোচনার সাক্ষী। তাদের জিজ্ঞেস করুন। একইভাবে, আপনি যদি জানতে চান প্রেসিডেন্ট বাইডেন আমাকে কী বলেছিলেন, তাকেই জিজ্ঞেস করুন। আমি তাকেও এ বিষয়ে বলেছিলাম।

টাকার কার্লসন:

আমি অবশ্যই জানতে আগ্রহী। কিন্তু বাইরে থেকে যেমনটা মনে হচ্ছে, তাতে মনে হয় এটি একসময় এমন এক জায়গায় পৌঁছাবে যেখানে পুরো বিশ্ব সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে, এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারে। তাহলে আপনি কেন বাইডেনকে ফোন দিয়ে বলছেন না, “চলুন বিষয়টা সমাধান করি”?

ভ্লাদিমির পুতিন:

সমাধান এর কি আছে? এটা তো অনেক সহজ একটা ব্যাপার। আমি আবারও বলছি, আমাদের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যোগাযোগ আছে। আপনাকে বলেছিও যে আমরা এ বিষয়ে আমেরিকান নেতৃত্বকে কী বলেছি—যদি সত্যিই যুদ্ধ বন্ধ করতে চাও, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করো। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। ব্যস, তারপর আমরা কিছু শর্ত নিয়ে একমত হতে পারি। তার আগে, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করো। এর চেয়ে সহজ আর কি হতে পারে? আমি কেন তাকে ফোন করব? কী বলব তাকে? অনুরোধ করব? ভিক্ষা করব?

টাকার কার্লসন:

আপনি কী বার্তা পেয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে?

ভ্লাদিমির পুতিন:

“আপনারা ইউক্রেনকে অস্ত্র দেবেন?” “আমি ভয় পাচ্ছি!” এছাড়া আর কি বলার বাকি আছে আমার?

টাকার কার্লসন:

আপনি কি মনে করেন এটি যে একটি বৈশ্বিক যুদ্ধ বা পারমাণবিক সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে সে ব্যাপারে NATO উদ্বিগ্ন?

ভ্লাদিমির পুতিন:

তারা তো সেদিকেই আগাচ্ছে। নিজেদের জনগণকে তারা এক কল্পিত রুশ জুজুর ভয় দেখাচ্ছে। এটা তো দিবালোকের মত পরিষ্কার। কিন্তু যারা চিন্তাশীল মানুষ, কেবল সাধারণ জনগণ নয়—যারা এসব নিয়ে ভাবে, বিশ্লেষণ করে, যারা প্রকৃত রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, যারা বুদ্ধিমান, তারা ভালোভাবেই বোঝে যে একটা কৃত্রিম আতংকাবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। অস্তিত্ব নেই এরকম একটা কৃত্রিম রুশ হুমকি তৈরি করা হচ্ছে।

টাকার কার্লসন:

আপনি যে হুমকির কথা বলছেন তা হলো, পোল্যান্ড এবং লাটভিয়াতে আক্রমণ করতে পারে রাশিয়া—এধরনের সম্প্রসারণবাদী আচরণ। আপনি কি এমন কোনো পরিস্থিতি কল্পনা করতে পারেন যেখানে আপনি রাশিয়ান সেনা পাঠাবেন পোল্যান্ডে?

ভ্লাদিমির পুতিন:

শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে: যদি পোল্যান্ড রাশিয়ার ওপর আক্রমণ করে। কেন? কারণ আমাদের পোল্যান্ড, লাটভিয়া কিংবা অন্য কোথাও সেনা পাঠানোর কোন ই আগ্রহ নেই। আমরা কেন এমন করব? আমাদের কোনো প্রয়োজনই নেই। এটা স্রেফ ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা।

টাকার কার্লসন:

আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে, প্রচলিত আলোচনাটা হচ্ছে এরকম—"সে এখন ইউক্রেনে আক্রমণ করেছে। এরপর পুরো ইউরোপ এর ভূখণ্ড দখল করে নেবে।" আপনি কি স্পষ্ট ভাবে বলছেন যে , আপনার এমন কোনো লক্ষ্য নেই?

ভ্লাদিমির পুতিন:

এরকম কোন কিছু সম্ভব ই না। এর জন্য কোনো বিশ্লেষক হওয়ারও প্রয়োজন নেই। কোনো ধরনের বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া একেবারেই অযৌক্তিক এবং সাধারণ জ্ঞান এর বিপরীত। আর একটি বৈশ্বিক যুদ্ধ পুরো মানবজাতিকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাবে। এটা স্পষ্ট। এটা ঠেকানোর ও ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আমাদের সবাইকে অনবরত ভয় দেখানো হচ্ছে —"আগামীকাল রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। না, পারমাণবিক অস্ত্র না, ওই অস্ত্র ব্যবহার করবে।  না, কালকে না, পরশু করবে।" এভাবে চললে থামাবেন কিভাবে?

এই সব বলা হচ্ছে যাতে করে মার্কিন এবং ইউরোপিয়ান করদাতাদের কাছ থেকে আরও টাকা আদায় করা যায়, যাতে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের নাটক চালিয়ে যাওয়া যায়। লক্ষ্য একটাই—রাশিয়াকে যতটা সম্ভব দুর্বল করে ফেলা।

টাকার কার্লসন:

আমাদের দেশের একজন সিনিয়র সেনেটর, নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত চাক শুমার, গতকাল বলেছিলেন—"আমাদের ইউক্রেনকে অর্থায়ন চালিয়ে যেতে হবে, না হলে মার্কিন সৈন্যদের সেখানে যুদ্ধ করতে হতে পারে।" আপনি এটা কীভাবে দেখেন?

ভ্লাদিমির পুতিন:

এটা এক ধরনের উসকানি—আর তা-ও সস্তা উসকানি। আমি বুঝি না কেন আমেরিকান সৈন্যদের ইউক্রেনে যুদ্ধে যেতে হবে। সেখানে ইতোমধ্যে মার্কিন ভাড়াটে যোদ্ধারা আছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভাড়াটে যোদ্ধা আসে পোল্যান্ড থেকে, দ্বিতীয় অবস্থানে আমেরিকা, আর তৃতীয় অবস্থানে জর্জিয়া।

যদি কেউ চায় নিয়মিত সৈন্য পাঠাতে, তাহলে সেটা অবশ্যই মানবজাতিকে একটি গুরুতর বৈশ্বিক সংঘাতের কিনারায় নিয়ে যাবে। এটা একেবারে পরিষ্কার। আমেরিকার কি এটা দরকার? কেন? আপনারা তো হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। আপনারা কি আর কোন কাজ খুঁজে পান না?

আপনাদের সীমান্তে সমস্যা আছে, অভিবাসন সমস্যা আছে, জাতীয় ঋণ $৩৩ ট্রিলিয়ন ডলারের ও বেশি। এত কিছু বাদ দিয়ে আপনারা ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে যাবেন? কেন? এর চেয়ে কি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসা ভালো নয়? আজ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা বুঝে সমঝোতায় আসা উচিত। আপনাদের এটা খুনই জরুরী যে রাশিয়া তার স্বার্থ রক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে। এটা বুঝেই বাস্তবতায় ফিরে আসা উচিত, আমাদের দেশ এবং এর স্বার্থকে সম্মান দেখানো উচিত এবং একটা যৌক্তিক সমাধানের পথ খোঁজা উচিত। আমার মনে হয় এটাই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান ও যুক্তিসঙ্গত পন্থা।


 

চলবে

Comments

    Please login to post comment. Login