এক সময়ের কথা। ঘন সবুজ এক অরণ্যে বাস করত এক চঞ্চল বানর ও এক বুদ্ধিমান কাঠবিড়ালি। তাদের মধ্যে ছিল গভীর বন্ধুত্ব। বনজীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তারা একসঙ্গে কাটাতো—লাফালাফি, খেলাধুলা, ফল খাওয়া আর গল্প করা ছিল তাদের নিত্য দিনের কাজ।
একদিন দুপুরবেলা তারা বিশ্রাম নিচ্ছিল বিশাল এক বটগাছের ছায়ায়। হঠাৎ আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল। ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাসে বনজীবন অস্থির হয়ে উঠল। কাঠবিড়ালি বলল, “বানর ভাই, আমাদের শীত আর বর্ষার দিনগুলো কেমন যাবে ভেবে দেখেছ? আমাদের তো কোনো ঘর নেই!”
বানর হেসে বলল, “ওসব ভাবার দরকার কী? বনেই তো আমাদের বাড়ি। গাছে গাছে ঝাঁপিয়ে বেড়ানোই তো আমাদের জীবন!”
কাঠবিড়ালি চিন্তিতভাবে বলল, “তুমি বল ঠিক, কিন্তু ঝড়-বাদলের দিন তো আর গাছেই থাকা যায় না। চলো, একটা ছোট কুঁড়েঘর বানাই। আমি শীতের জন্য খাবারও জমিয়ে রাখবো।”
বানর গুরুত্ব না দিয়ে বলল, “তুমি বরং মজা করো। আমি ঝাঁপিয়ে বেড়াবো!”
দিন যায়। কাঠবিড়ালি ধীরে ধীরে গাছের শেকড়, শুকনো ডাল, পাতা আর বাদাম জমিয়ে একটি ছোট সুন্দর কুঁড়েঘর বানিয়ে ফেলে। ভিতরে গুছিয়ে রাখে শীতের খাবার। আর বানর প্রতিদিন হেসে বলে, “তোমার ঘর বানানো দেখে দেখি তুমি বনের রাজা হয়ে যাও!”
অবশেষে এলো বর্ষাকাল। চারদিকে শুধু জল আর কাদা। ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডালও ভিজে গেছে। বানর তখন এক ডাল থেকে আরেক ডালে যেতে গিয়ে ভিজে ঠান্ডায় কাঁপছে।
হঠাৎ সে ভাবল, “ওই কাঠবিড়ালির ঘরটা যদি এখন কাজে আসতো!” সে লজ্জা পেয়ে কাঠবিড়ালির কাছে গেল। ভিজে গা, কাঁপছে শরীর। কাঠবিড়ালি বলল, “কি হল, বন্ধু?”
বানর মাথা নিচু করে বলল, “তুমি ঠিকই বলেছিলে। আমি তোমার মতো পরিশ্রম করিনি। এখন বুঝতে পারছি কষ্ট করে কিছু তৈরি করাই আসল বুদ্ধিমানের কাজ।”
কাঠবিড়ালি হেসে বলল, “বন্ধুর ভুল হলে বন্ধুই তো ক্ষমা করে। এসো, আমার ঘরে ঢোকো। তুমি শুধু বন্ধু নও, তুমি আমার পরিবার।”
সেই দিন থেকে বানর আর কাঠবিড়ালি মিলে আরও বড় ঘর তৈরি করে। শীত-বর্ষা নির্বিঘ্নে কাটাতে থাকে তারা। এবং বানর প্রতিজ্ঞা করে, ভবিষ্যতে আর কখনো কাজ ফেলে মজা করবে না।