আমাদের বাসার লাগোয়া একটা বিল্ডিং পরেই একটা গলি আর গলির উত্তর দিকেই আমাদের বাসা বরাবর যে বাসাটা সেই বাসাতেই দুটা আমগাছ গাছে । একটা আমগাছ আবার বারোমাসি । প্রতিটা দিন বিকালে আমরা খেলতে যেতাম কেননা ঐ গলির রাস্তাটাই ফাকা ছিল আমাদের নিউ ইস্কাটনে । একদিন ব্যাটিং করছিলাম । ছক্কা মারতে গিয়ে বল গিয়ে লাগলো সরাসরি আমে । বল লেগে আমটি অর্ধেক হয়ে নিচে পড়ল আর বাকি অর্ধেক গাছেই রয়ে গেল । যেই এইটা নিয়ে সবাই গাছের দিকে তাকালাম ঠিক অমন মুহূর্তে চোখ আটকালো পাশের বাসার ছাদে । ছাদে পায়চারী করছে একটা মেয়ে হাতে একটা বই নিয়ে । এদিকে যে আমরা সবাই গাছের নিচে জড়ো হয়েছি দেখছেও না । সবাই আবার চলে আসলাম আর মনোযোগ দিলাম খেলায় । ঠিক পরের বলে আবার ছয় মারতে গিয়ে বলটা গিয়ে লাগলো ছাদে পায়চারী করা মেয়েটির গায়ে । বলটা লাগার পরে মেয়েটি যে কি জোরে চিৎকার দিল সব গলি ছেড়ে দৌর । কিন্তু ব্যাট হাতে চিৎকার শুনে আমি আর দৌর দিতে পারলাম না । ওদিকে ছাদে মেয়ের চিৎকার শুনে ছাদে আরো মানুষ জড়ো হল । মেয়েটা যে কি বলল সবাই নিচে নেমে গেল । আর মেয়েটা ছাদে থেকে আমাকে ইশারা দিল যেন সরে যাই । আমি তো থ হয়ে দাড়িয়েই রইলাম । এদিকে এক ছোট ভাই এসে আমার হাত থেকে ব্যাটটা সরিয়ে নিল । ঐ বাসা থেকে একজন মহিলা আর একটা ছেলে বের হয়ে এসে চিল্লাচিল্লি শুরু করল , ‘ এটা কি খেলার জায়গা? মানুষ আহত করে কেউ খেলে? বলটা মাথায় গিয়ে লাগলে আজ আমার মেয়েটাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া লাগত’ । এভাবে কিছুক্ষণ চিল্লিয়ে চলে গেল উনারা । সেদিনের মত আর কেউ খেলিনি । পরদিন সকালে তাড়াহুড়োয় ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমে কিছুক্ষণ হেটে সামনে এগুতেই দেখি সেই মেয়েটি । সাদা এপ্রন পরে আস্তে আস্তে হাঁটছে রোড দিয়ে আর রিকশা খুঁজছে । ভালোমত লক্ষ্য করলাম কোন দিক দিয়েই মেয়েটিকে ডাক্তার মনে হচ্ছে না । হয়ত মেডিকেল স্টুডেন্ট । আমি একটু জোরে হাঁটা দিয়ে মেয়ের সামনে গেলাম ।
- এই যে শুনছেন ।
মেয়েটি ডান দিকে তাকিয়েই দেখতে পেল আমাকে ।
- জী, বলুন ।
- গতকাল খুব ব্যাথা পেয়েছিলেন বুঝি?
- বলটা যেভাবে মেরেছেন ব্যাথা তো অবশ্যই পেয়েছি তবে ছক্কা মেরেছেন বলেই আপনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছি । তবে আপনি বলদের মত ওভাবে ওখানেই দারিয়ে ছিলেন?
- আমি তো থ বনে গিয়ে ছিলাম ।
- কিহ?
- আমার পা গুলো নিয়ে আমি ভাগতে পারছিলাম না ।
এর মধ্যে পাশ দিয়েই একটা রিকশা যাচ্ছিলো পাশ দিয়ে আর মেয়েটি রিকশা ঠিক করে নিল হলি ফ্যামিলি মেডিক্যাল যাবার উদ্দেশ্যে । যাক এদিকে আমি জেনেও গেলাম কই পরে । রিকশায় উঠতে উঠতে নাম জানতে চাইলাম আর নামটিও বলল আমাকে । নাম তার রাদিয়া । রিকশাটা সামনে দিয়ে চলেও গেল । আমার চোখ রিকশাতেই আটকেই রইল আর রিকশার চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম । আমিও আমার ভার্সিটি চলে গেলাম ।
আমি এখন প্রতিদিনই খেলতে যাই যদিও আমার উদ্দেশ্য মেয়েটিকে দেখতে যাওয়ার । মেয়েটিও ছাদে উঠে প্রতিদিন , আমাদের খেলা দেখে । আমি ছক্কা হাঁকালে দেখি তালিও দেয় মাঝে মাঝে । আমার ডেইলি রুটিনে খেলতে যাওয়া বাধ্যতামূলক এখন । তো একদিন আমি খেলতে যেতে পারলাম না ।পরদিন যেদিন খেলতে গেলাম একটা ছোট ভাই আমাকে বলল, ‘আমাকে নাকি খুজছিল ঐ ছাদের আপুটা’ ।
- আর কিছু বলেছে?
- আমাকে তো আর কিছু বলে নাই । শুধু জিজ্ঞেস করেছিল আজ কেন খেলতে আসি নাই ।
- তুই কি বলেছিস?
- আমি কি বলব আবার । বলেছি হয়ত কোন মেয়ের সাথে দেখা করতে গেছে ।
- তুই এটা কেন বল্লি? মেজাজটাই খারাপ করে দিলি
- তুমি বল কিনে দাও না , টেপ কিনে আনোনা তাই ওভাবে বলেছি তবে একটা খবর তোমাকে দেই । আপুটা ঐ কথা শুনে মেজাজ খারাপ করে চলে গেছে ।
- কিহ বললি? মেজাজ খারাপ করে চলে গেছে । তুই এটা কোন কাজ করলি?
যাইহোক খেলায় মনোযোগ দিতে পারছি না একদমই । ওদিকে রাদিয়া ছাদেও উঠছে না মেজাজ আমার খুবই খারাপ হয়েই রইল । আজকে রাদিয়া ছাদেই উঠল না । মেজাজ খারাপ করে চলে আসলাম বাসায় আর ভাবতে লাগলাম দেখা করতে হবে মেয়েটার সাথে ।
পরদিন সকালে বের হয়ে রোডের মাথায় এসে দাড়িয়ে রইলাম । কিছুক্ষণ পরই রাদিয়া রিকশাতে করে যাচ্ছে । আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেল । যদিও আমাকে সে দেখেছে কিন্তু না দেখার ভান করেই চলে গেল । আমিও একটা রিকশা নিয়ে চলে আসলাম রাদিয়ার মেডিক্যালে । যদিও এখানে আমার অনেক বন্ধু পরে এই মেডিক্যালে । একটা নেতা বন্ধুও আছে । ভাবলাম ওর সাথে দেখা করি আর রাদিয়ারও কিছু ডিটেইলস বের করি । মেডিক্যালে ঢুকতেই রাদিয়ার সাথে দেখা ।
- কি ব্যাপার আপনি এখানে কেন? আপনার আজ কোন মেয়ের সাথে দেখা করার সময় হয় নাই?
- দেখা করতেই তো আসলাম । ( সরাসরি ওর দিকে তাকিয়ে )
- বাহ, ভাল তো । যান তাহলে দেখা করতে । ( আমার দিকে না তাকিয়েই কথাটা বলল )
- এইতো, দেখা হয়ে গেছে তো আর আমি তার সামনেই দাঁড়ানো ।
- হয়েছে আমাকে আর ফুলাতে হবে না এসব বলে ।
- আপনার সাথে কথা আছে আমার । সময় আছে আপনার ?
- হুম আছে । বলে ফেলেন, তবে ভালবাসি ঠালবাসি একথা বলবেন না ঠিক আছে? পরিচয় হল না দুদিনও আর এতে অন্তত ভালবাসা যায়না ।
- আরে না সেসব কিছু না । কথা আছে মানেই যে ভালবাসি বলতে হবে তা কেন? ( মনের ভেতরটা খালি খালি লাগা শুরু করল কিন্তু উপরে উপরে দেখাচ্ছি আমি । ) চলেন ক্যান্টিনে যাই আপনাদের ।
ক্যান্টিনে গেলাম দুজনে । কিছু নাস্তা অর্ডার দিলাম । খেতে খেতে কথা বলছি ।
- আসলে আপনি যেদিন নিচে নেমে আমার কথা যে ছেলেকে বলেছিলেন ও আপনাকে বানিয়ে বানিয়ে বলেছে । সেদিন আমার ক্লাস ছিল মেকআপ ক্লাস । আর হ্যা আপনার সাথে আগে পরিচয় হয়ে নি ।
- বলতে হবে না আমি জানি আপনার পরিচয় ।
- কিভাবে জানলেন? আর আমি তো কিছুই জানলাম না?
- জানতে চাইলে জানার উপায় বের করতে হয় । আমি তো বের করে নিয়েছি কিন্তু আপনি তো পারলেন না । যাইহোক আপনার নাম রুহেল বাকি কিছু আর নাই বললাম । ( তার মুখে এক চিলতে হাসির ঝিলিক লেগে রয়েছে দেখতে পেলাম ।)
- হুম, নামতো ঠিকই জেনে নিয়েছেন ।