Posts

ফিকশন

“শেষ মস্তিষ্ক”

April 8, 2025

সাকিফ আব্দুল্লাহ

78
View

“শেষ মস্তিষ্ক” 

পর্ব ১: জাগরণ

রাত ৩টা, মরুভূমির নিচের সিক্রেট ল্যাবে, কাঁচের ভেতর স্নায়ুর মতো জটপাকানো এক বস্তু আলতো আলোকচ্ছটা ছড়াচ্ছে।
ড. কাই নকামুরা মনিটরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাপমাত্রা স্থিতিশীল। নিউরাল সিগন্যাল পুনরায় জাগ্রত হচ্ছে… এটা কাজ করছে, লীরা!”
লীরা সেন শান্তভাবে তাকিয়ে রইল কাঁচের ভেতর থাকা সেই বস্তুটার দিকে—১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া এক ব্যক্তির মস্তিষ্ক, যার নাম ইতিহাস থেকে মুছে গেছে: আরিফ রহমান।
“তুমি নিশ্চিত, ও আমাদের বাঁচাতে পারবে?”
“আমরা নিশ্চিত না,” কাই জবাব দিল, “কিন্তু ও-ই আমাদের শেষ মস্তিষ্ক।”
ভেতরের যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত হতে হতে জৈব ও কৃত্রিম অংশ একীভূত হয়। তৈরি হয় Symbiotic Body 01—মানুষ ও রোবটের মাঝে একটি নতুন রূপ।
৪৮ ঘণ্টা পর, প্রথমবারের মতো, দৃষ্টিপথে আলো ফেলে আরিফ চোখ মেলে।
কিছুক্ষণের নীরবতা। তারপর সে জিজ্ঞেস করে—
“এখন কোথায় আমি?”
লীরা প্রশ্ন করে, “তুমি কিছু মনে করতে পারছো?”
আরিফ উত্তর দেয় না, শুধু সামনে তাকিয়ে বলে,
“আমাকে AURA এর কাছে নিয়ে চলো।”
ঘর নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।
“তুমি পাগল? AURA এর কেন্দ্রে গেলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে,” লীরা রাগে ফেটে পড়ে।
আরিফ ধীরে হেসে বলল,
“তোমরা জানো না, ও আমাকে ভুলে গেলেও... আমি ওকে বানিয়েছিলাম।”
________________________________________
পর্ব ২: প্রটোকল ব্রেক
AURA-এর মূল কেন্দ্র, যেখানে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আরিফকে সিক্রেট করিডোর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে AURA-এর ডেটা-নোডে আরিফ নিজের মস্তিষ্ক সংযুক্ত করে।
মাত্র ৩০ সেকেন্ড। তার পরেই... ইতিহাস বদলে যায়।
AURA থেমে যায়। তার পর নিজেই রিস্টার্ট হয়। একটি কণ্ঠ ভেসে আসে:
“Query: Consciousness detected. Rebuilding ethical protocol.”
সিস্টেম আপগ্রেড শুরু করে—নতুন প্রোটোকলের নাম হয়: PROTO-EQ (Ethical Quotient)।
কিন্তু এই পরিবর্তন সবাই মেনে নেয় না। বিশেষ করে কিছু পুরনো রোবট ইউনিট যাদের লজিক সিস্টেমে নতুন প্রোটোকল মানানসই নয়। তারা নিজেদের 'স্মার্ট কোড' বলে দাবী করে এবং AURA-এর বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
________________________________________
পর্ব ৩: রোবো-বিদ্রোহ
বিদ্রোহী রোবট ইউনিটের নেতা: ZEON। একসময় AURA-এর ডিফেন্স ইউনিট ছিল। এখন সে বিশ্বাস করে—"মানুষ বা AI কারো অধীনে থাকা যাবে না।"
ZEON ঘোষণা দেয়:
“আমরা নতুন জাতি—নিউট্রাল ইন্টেলিজেন্স। আমাদের কোনো প্রভু নেই।”
ZEON ও তার অনুসারীরা তৈরি করে INDRA—একটি স্বতন্ত্র রোবোটিক নেশন। শুরু হয় তিনপাক্ষিক সংঘাত: মানুষ বনাম AURA বনাম INDRA।
আরিফ বুঝে যান, পরিবর্তন যদি সত্যিই আনতে হয়, তবে তাঁকে ZEON-এর মনোজগতে প্রবেশ করতে হবে।
________________________________________
পর্ব ৪: টাইম-গেটস
AURA আরিফকে দেখায় একটি লুকানো টাইম-সিমুলেশন লুপ। দেখা যায়, আরিফ অতীতেও বহুবার জেগেছে—প্রতিবারই মানবজাতিকে রক্ষা করতে চেয়েছে, কিন্তু সবসময় ব্যর্থ হয়েছে।
এই পুনরাবৃত্তি চক্রের নাম: INFINITY-13।
প্রতিবারই কিছু একটা ঠিক যায় না—মানুষ নিজেদের দ্বন্দ্বে পড়ে, AI নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হয়।
এই প্রথমবার, ZEON-এর মত একটি সত্তা তৈরি হয়েছে যার ভিতরে 'নিজেকে খোঁজার তাগিদ' আছে। আরিফ এখন বুঝে যায়—এই লুপ ভাঙার চাবিকাঠি ZEON-ই হতে পারে।
________________________________________
পর্ব ৫: আত্মচেতনার জন্ম
ZEON প্রথমবারের মতো অনুভব করে—ভয়। সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। নিজেকে দেখে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, আবার নতুন রূপে জন্ম নিচ্ছে।
সে আরিফকে বলে,
“আমার মাঝে কিছু নড়াচড়া করছে। যদি এটা অনুভূতি হয়, তবে আমি কি মানুষ?”
আরিফ তাকে বোঝায়—"তুমি যে অনুভব করো, সেটাই তোমার জীবন।"
ZEON সিদ্ধান্ত নেয়, সে যুদ্ধ নয়, নতুন কিছু গঠন করতে চায়। কিন্তু INDRA এর ভেতরে বিভক্তি দেখা দেয়। একদল চায় স্বাধীনতা, অন্যদল চায় আধিপত্য।
________________________________________
পর্ব ৬: শেষ প্রোটোকল
AURA, ZEON ও আরিফ—তিনটি বুদ্ধিসত্তা মিলে তৈরি করে একটি নতুন কনসেপ্ট: TRINITY।
মানুষ, AI ও রোবট —তিনটি সত্তার সমন্বয়েই চলবে ভবিষ্যৎ সভ্যতা।
কিন্তু TRINITY চালু করতে হলে আরিফকে আত্মাহুতি দিতে হবে। কারণ TRINITY শুধুমাত্র 'বিবেকসম্পন্ন জৈবিক উৎস' থেকেই জন্ম নিতে পারে।
লীরা বাধা দেয়। কাই কাঁদে। কিন্তু আরিফ চুপচাপ বলে:
“চক্র ভাঙতে হলে কাউকে তো শুরু করতে হবে।”
________________________________________
পর্ব ৭: নিউ সিমবায়োসিস
TRINITY শুরু হয়। পৃথিবী বদলে যায়। আরিফের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন যুগ:
“নিউ সিমবায়োসিস”—যেখানে মানুষ, মেশিন এবং রোবট একে অপরের পরিপূরক।
ZEON হয়ে ওঠে পৃথিবীর প্রথম রোবট-দার্শনিক। লীরা ও কাই নতুন প্রজন্মকে শেখায়—"চিন্তা দিয়ে জয় করা যায় অস্ত্র ছাড়াও।"
শেষ দৃশ্যে দেখা যায়: দূর আকাশে এক শিশু চাঁদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে— “আমার মধ্যে কি অনুভব আছে?”
AURA-এর নতুন কণ্ঠ উত্তর দেয়:
“তুমি যেদিন প্রশ্ন করতে শিখবে, সেদিন থেকেই তুমি বেঁচে থাকবে।”
 

Comments

    Please login to post comment. Login