Posts

গল্প

আঠারো প্লাস টু ------নাসিমা খান

April 16, 2025

Nasima Khan

37
View

হরির আগের লেখাটা বেশ মার্কেট পেয়েছিল। কোনো প্রকাশক রিস্কে যায় না। সুতরাং ধান্ধা বাদ দিয়ে শখের সেগুন গাছটি বিক্রি করে দিয়ে হরি তার প্রথম উপন্যাস বের করে ফেলে। উপন্যাসের নাম দেয় আঠারো প্লাস। হরিকে অবাক করে দিয়ে বইটি মার্কেট পেয়ে যায়। অনেকে হরিকে কটাক্ষ করে বলে, এরকম চটিই বেশি বিক্রি হয়, কেনে সব মাগীবাজরা। রবীন্দ্রনাথ নজরুল, হুমায়ুন, ইমতিয়াজ কী সবাই হইতে পারে? কও তো দেহি দ্যাশে কী ভদ্রলোক আছে যে ওদের বই কিনব? যদি তাই হতো তবে যে বইয়ের নাম আঠারো প্লাস সেই বই কেউ কেনে? কোনো ভদ্রলোক এই আঠারো প্লাস নামের বই কিনত?

হরির দরকার পয়সা। যে দোকানের ক্যাশে বসে সেখান থেকে যা পায় তা দিয়ে হরির চলে না। যদি বই লিখে কিছু আসে আর তার সাথে পরিচিত বাড়ে তাতে ক্ষতি কী। সে জানে বইটির ভিতর আঠারো প্লাসের পড়ার মতো জঘন্য কিছুই নাই। গল্পের ভিতরের কাহিনির সাথে নামকরণের কোনো সার্থকতা নেই। গল্পটিতে গ্রামের একটি ছেলে তমিজ শহরে এসে বাদাম বিক্রি করতে করতে কিছু টাকা জমিয়ে ফুটপাতে চায়ের দোকান দেয়। চায়ের সাথে সে একসময় গাঁজা বিক্রি করে। পুলিশের কাছে ধরা খায়। বছর খানেক হাজত বাস করে সে ফিরে যায় গ্রামে। গ্রামে এসে সে ঝুড়িতে করে কাঁচা তরকারি বিক্রি করা শুরু করে। দেখা হয় ফুলমতির সাথে। সে শহর আলীর দ্বিতীয় বউ। শহর আলী গ্রামের মেম্বর। ফুলমতিরে নিয়ে তমিজ পালায় শহরে। বস্তিতে থাকে আর রিকশা চালায়। পরিচয় হয় এক ট্রাক ড্রাইভারের সাথে। ছুপড়িতে নিয়ে আসে ট্রাক ড্রাইভার রমিজকে। রমিজের সঙ্গে একদিন পালিয়ে যায় ফুলমতি। বউরে খুঁজতে খুঁজতে শহর আলী ঢাকায় আসে। একদিন খবর পায় তমিজ অই বস্তিতে থাকে । বউ ভাগাইয়া খুনের অভিযোগ এনে মামলা করে শহর আলী। তমিজরে পুলিশে ধরে। তমিজ বৃত্তান্ত কয়। কিন্তু আইন বিশ্বাস করে না। তমিজের সাজা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

হরির এই বইয়ে কোনো চুমুর কথাও ছিল না। তথাপি অনেকে চটি বলেছে। অনেক বিক্রি হয়েছে। খরচ প্রায় উঠে গেছে। হরির বয়স পঁয়ত্রিশ বছর। হরির বউয়ের আর হরির বয়সের পার্থক্য প্রায় দশ। হরির বইয়ের নাম হিরা বালা। হরির মতো সে-ও নমশূদ্র। নিচু বংশ। হিরা আর হরি নামের মিলটা কাছাকাছি হলে অর্থের দিক থেকে বিশাল পার্থক্য। দুজনের মনের মিলও তাই নাই। হরি যখন লিখতে বসে বিরক্ত হয়ে হিরা বলে, এসব কইরে কী হবে শুনি? যে চাকরি করো তাতে মেয়েটার দুধের পয়সা জোটে না। তোমার ঠাকুরদার জুতোর ব্যবসাটা ধরতে পার। যা লিখছ তাতে মান সম্মান বাড়ছে না। লোকে বলে তুমি ব্লু চটি লিখছ, তাই লোকে কিনছে। লোকের সাথে মুখ দেখাতে পারি না।

- তোকে মুখ দেখাতে সাদতেছে কে শুনি? আর কাগোর কথা শুনিস তুই? ওরা সাহিত্যের কিছু বুঝে? পইড়া দেখছে কি লিখছি? চটি কারে কয় জানোস? তারপর আবার নাম দিছস ব্লু চটি। ব্লু চটি মানে কী বল দেখিনি?

- লোকে তো কই তুমি মাইয়া পুরুষের গোপন কাম কারবারে কথা লিখতাছ। এগুলোকেই হয়তো ব্লু চটি কয়।

হরি হিরার কথা পাত্তা না দিয়ে বলে, যাও তো ঘুমাও গিয়া, নতুন একটা প্লট মাথায় আইছে।

- জানি তো তোমার প্লট না প্লেট, সে অই নারীর দেহ লইয়া তো? লিখো লিখো বালা কইরা লিখো, পেটে যহন বাত জুটব না তখন ঠিকই সেই মুচির কামই তো করতে অইব।

হরির রাগ উঠে যায়। সে খিস্তি করে বলে, মাগী গেলি! থাবড়াইয়া তর দাঁত ফালাইয়া দিমু, মুচিনী কোথাকার!

হিরা বালা কম যায় না। সে তিড়িক করে লাফ দিয়ে দূরে গিয়ে বলে, মাইগগার পুত, তুই নাহি লিখাপড়া করছোস, নাকি নকল কইরা সার্টিফিকেট আনছোস, মুখ দিয়ে তো ভালো কতা আসে না। জাওরা একটা।

হরি মাথা চেপে ধরে বিড়বিড় করে। নিজেকে সামলাই।

মাথা ঠিক রাখা দরকার। না হলে বইটা নির্দিষ্ট সময় প্রকাশকের কাছে দিতে পারবে না। তার লেখক সত্তা মরে যাবে। সে যে সত্যি লেখক। তার মনের ভিতর কত কী না আকুলিবিকুলি করে। কত স্বপ্নের কুমারী ঘুঙুর বাজিয়ে বিলের আইল ধরে ছুটে বেড়ায়। কত রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়ে টগবগিয়ে ছুটে যায় তেপান্তরের দেশে। তারা শুদ্ধ বাংলা কয়। তাদের মুখ নিঃসৃত শব্দমালায় মুখরিত হয় পাখপাখালি, সুবাস ছড়ায় ফুল মালতী।

হরি নিজেকে বোঝায়, থাম হরি, মাইয়া মানষের কথায় রাগোনের কিছু নাই। ওরা ঘাউড়া কুত্তার মতো কাউ কাউ করে, কাউরে কামড়ায় না।

হরি ফিক করে হেসে দেয়। হিরা বালা অবাক হয়ে দেখে। মানুষটা এই ভালা, এই মন্দ! সে মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, হইছে, হাসনে কাম নাই। শরীরডা বালা না। আজ কিছু হইব না। আমি ঘুমাইলে ডিস্টার্ব কইর না।

হরি হাসে আর ভাবে হিরা বালা সব সময় মনে করে ভালোবাসা মানে দেহ ভোগ করা। কিন্তু মনের অন্যখানে একটা জায়গা থাকে যেখান দিয়া শুধু প্রেমের সুবাস বের হয়, ছোঁয়া লাগে না, দেহ নিয়ে কামড়াকামড়ি করা লাগে না। শুধু চোখের উপর চোখ দিয়ে তাকাইয়া থাকলেই অদ্ভুত এক মায়ার খেলা মনের উপরে মোমের মতো গলে গলে পড়ে। হায়রে হিরা বালা, বড়ো হইলি না। বুকের ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি পড়বার পারিস না। কেন যে বাপে তর লগে বিয়া দিছিল! তরে পাইলাম কিন্তু তুই আমারে পাইলি না। এই মনডা তরে দিতে চাই, তুই শুধু দেহের কথা ভাবোস কেনরে পাগলী? চান্দের আলো তর চোখে পড়ে না?ফুলের রূপ তরে আকর্ষণ করে না? তুই শুধু খাবার চিনিস, কাপড় চিনিস, শুইতে বুঝিস, এর বাইরেও বিচরণের জন্য মনের মধ্যে বিশাল একটা বাগান থাকে, সেখানে কান পাতলে পাতার বুকে নুপুরের ধ্বনি শোনা যায়, পাখিরা চঞ্চুতে চঞ্চু লাগাইয়া কথা কয়, গাছে গাছে উল্লাস করে, বাতাসে গুনগুন কইরা গান গায়! সেই বাগানে ঝর্ণারা উল্লাসে নাচে, সেখানে লম্বা করে একটা রাস্তা থাকে যার দুইপাশে ঝাউগাছ থাকে আর রাস্তার মাথায় সুদৃশ্য ঝকমকে পাথর দিয়ে বাধাই করা একখান বিশ্রামাগার থাকে।

সেই বিশ্রামাগারে ধবধবে শাদা একখান বিছানা থাকে। বিছানার উপর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লেখা থাকে জীবনের গল্প।

হরি ভাবতে ভাবতে কখন চলে গিয়েছিল মনোরাজ্যে। আচনক সে চমকে ওঠে। হিরা বালা নাক ডাকছে। সে অদূরে রাখা তক্তপোশে ঘুমাচ্ছে আর ভোস-ভোস করে নাক ডাকছে।

হরি কাগজ নিয়ে লিখতে বসে। থিম তার আগে থেকেই রেডি আছে। কিন্তু শিরোনাম নিয়ে চিন্তিত আছে সে। আঠারো প্লাস দিয়ে টিক্কা মেরেছে। এক নামে তো বারবার বই বের করা যাবে না। পাবলিক লাঠি নিয়ে দাবড়াবে। একবার ভাবল বইটার নাম দিবে ছোটো রা দূরে থেক। নামটা মনোপুত হলো না। সে ভাবল এর থেকে ভালো হয় শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। এরকম নামে তার আগে কেউ বই বের করেনি। এরকম নাম দিলে শিশুদের আগ্রহ জন্মাবে। ভালো বিক্রি হবে। এবারেও সে বেস্টসেলারের তালিকায় প্রথম হতে পারবে।

রাত গভীর হচ্ছে। তার ভাঙা বেড়ার ফাঁক গলে চাঁদ মুখ বের করে দিয়ে ফিকফিক করে হাসছে। কিন্তু হরির মনের ভিতর কেউ যেন গোমড়া মুখ করে বসে আছে। বই তো অনেকে লেখে কিন্তু কালোত্তীর্ণ হয় কয়টা বই। বই বের করা মানে তো শুধু বিক্রি করা নয়। ওসব ফালতু নাম দিয়ে কী হবে? বরং সে কালোত্তীর্ণ একটা গল্প লিখবে। মরে গেলেও যেন লোকে বলে হরি লেখক ছিল বটে। একখানা বই লিখে গেছে।

মানুষ ভাবে তো কত কিছু। সব কী বাস্তবে রূপ দিতে পারে? হরি জানে সকালে উঠে তার রুজি রুটির জন্য ছুটতে হবে। আড়তে যেতে হবে। ক্যাশে বসতে হয় তাকে। সারাদিনের বেচাবেট্রার হিসেব করে মালিককে বুঝিয়ে দিয়ে ফিরতে হয় ঘরে। নিজের ব্যবসা থাকলে রিস্ক থাকে না। লাভ লসের হিসেব নিয়ে ভাবতে হয় না। সময় মেইনটেইন করতে হয় না। জুতো বানানোর কৌশল সে শিখেছিল। হিরার কথা মতো নিজের ব্যবসার কথাও সে ভাবে। নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে পারলে খুশি মতো লিখতেও পারবে। খুশি হলে কারখানায় যাবে না হলে উঠোনে তিনঠ্যাঙা টেবিলে বসে বসে কাব্যচর্চা করতে পারবে। কিন্তু টাকা? কারখানা দিতে গেলে অনেক টাকা লাগবে তার। অত টাকা কই পাবে সে? ঘরে চাল নাই ডাল নাই তেল নাই নুন নাই। এইগুলার জন্য চটি লেখাই দরকার।

হিরা বালা ভোস-ভোস করে। হরির লেখা হারিয়ে যায়। হিরা বালা ঘুমাইলে কেমন চকচক করে। কুচকুচে কালো রঙটা চকচক করে। কালো মুখের উপর ঘাম গুলো জমা হয়েছে। মনে হচ্ছে তেল ঝরছে। হরির বাবার পছন্দ। বলেছিল, আমাদের দরকার গুণ, রূপ খোঁজে মশাইরা, তাই তারা গণ্ডায় গন্ডায় বিয়ে করে। রূপের ঠমক দুই দিনের। বউ তো শুধু রাতেই নিজের জন্য প্রয়োজন। অন্ধকারে কালো ধলা সব সমান।

হ্যাঁ হিরা বালা সংসারি। ভোরে উঠে কইতরের খুপি খুলে কইতর গুলোরে গম খাইয়ে দেওয়া, মুরগী গুলারা খুদকুঁড়া দেওয়া। গরুর দড়ি খুলে মাঠে নিয়ে বাঁধা, গা গোসল দিয়ে রান্না ঘরে যাওয়া। সব নিখুঁতভাবে করে হিরা বালা। কয়টা মোরগ, কোন মুরগী করকর করে, কোন মোরগ বাগ দিচ্ছে এইসব তার মুখস্থ। উঠোনে গোবর পানি ছিটানো। পূজার ঘরে যাওয়া সব করে ঠিক ঠাক। শুধু হিরা বালা হরিকে বোঝে না। ইচ্ছে হলে হরির চাহিদা পূরণ করে না হলে একদিকে মুখ দিয়ে অথবা চিৎপটাং হয়ে শুয়ে থাকে। কোনো কিছুতেই হিরা বালার আর্ট নেই।

অথচ হরি খোঁজে আর্ট। খোঁজে রূপের ভিতরের সৌন্দর্য। কালো বইলা হরির কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হয় যখন হরি বলে, হিরা দ্যাখছোস কি সুন্দর চাঁদ!

হিরা তাচ্ছিল্যের সাথে কয়, চাঁদের ভিতরে সুন্দরের কী দেখ তুমি ? আকাশের ভিতরে চাঁদ উঠবে আবার যাবে গা, তারে নিয়া এত ঢং এর কী হইল? তুমি চাঁদ ধুইয়ে পানি খাও। আমার সকাল সকাল উঠা লাগব। তোমার ভীমরতি হইছে তুমি চাঁদ দেহো, ওরকম চাঁদ আমাদের শনের ফুটো চাল দিয়ে বহুত দেখছি। দেহনের কিছুই নাই।

আহত হয় হরি। সে তার মনের মতো বউ পায়নি। হিরা বালা কোনো দিন তাকে বুঝবে না। হরি দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিখতে বসে। কলম তার চলছে তো চলছে। সে লেখে এক রাজপুত্র নিঃশব্দে রাতের বেলা বের হয়। একা ছদ্মবেশে। তার উদ্দেশ্য প্রজাদের দুঃখ এবং সুখের সাথী হওয়া। নিথর শহর। দুই একটা নিশাচর কুকুর মোড়ের উপর দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ছে। একটা দুরন্ত গাড়ি হুশ করে ছুটে গেল রাজধানী হয়ে ডাঙার পথ ধরে শহরতলীর দিকে। রাজপুত্রের মোবাইল বেজে উঠল। তার বাবা ফোন করেছে। রাজা অধীশ্বর। সে কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। কল রিসিভ করল না রাজপুত্র। সে মোবাইল বন্ধ করে দিল। সে দেখল কুকুরদের অবস্থা খুবই কাহিল। কতদিন পেট ভরে খায়নি। রাজা অধীশ্বরের শাসন আমল ভালো যাচ্ছে না। শহরে কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে বটে কিন্তু তারা খুবই ক্ষীণকায়। দেশের কুকুরগুলো খুবই অসচেতন। কুকুর গুলোর জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র নাই। নেই নিরাপদ যৌন বাসের অধিকার। নেই জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা। সবই রাজা অধীশ্বরের বিফলতা।

সে কুকুরগুলোর দিকে তাকিয়ে ব্যথিত হলো। সে সামনের দিকে হেঁটে গেল। দুইজন প্রেমিক প্রেমিকা জজ সাহেবের বাসভবনের সামনের ফুটপাতে শুয়ে খুবই অনিরাপদ যৌনাচারে লিপ্ত রয়েছে। তাদের মাথার উপর রোড লাইটগুলো তীব্র আলো ঝরাচ্ছে। একদল মশা এসে প্রেমিক প্রেমিকার সঙ্গমে বাঁধা প্রদান করছে, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য শক্তিশালী কোনো কয়েলের ব্যবস্থা নেই সেখানে। আহা রাজা অধীশ্বর এর আমলে মানুষের স্বর্গ সুখ ভোগের কোনো উপযুক্ত জায়গা নেই। এরা হত দরিদ্র প্রেমিক প্রেমিকা এদের জন্য পাঁচতারা হোটেলের ব্যবস্থা নেই। হুইস্কি, পেগ কিছুই নেই। রাজপুত্রের চোখ ভিজে গেল।

রাজপুত্র সামনের দিকে হেঁটে যেতেই থমকে দাঁড়াল। পুলিশ রেঞ্জের সামনের রাস্তায় একটি মেয়েকে দুইটি পুরুষ জাপ্টে ধরে রয়েছে। তারা রাজপুত্রকে দেখেও কোনো প্রকার শ্লোগান না দিয়ে রাস্তার মধ্যে মেয়েটির শরীর লেহন করছে। প্রকৃত পক্ষে পুরুষ দুইজনের প্রবল প্রতিবাদে ঝাপিয়ে পড়ার কথা ছিল। রাজ্যের ভিতর মেয়েদের দুস্প্রাপ্যতা বেড়েছে। অথবা তাহাদের অবাধ যৌনাচারে অংশগ্রহণে করতে অনুপ্রেরণা দেওয়া হয় না। ফলে একটি মেয়েকে দুইজন পুরুষ ভাগাভাগি করছে। আহা আফসোস! দেশের পুরুষরা ভীষণ অসুখী রয়েছে। তাদের ভাগে মাত্র একজন রমনী পড়েছে। পুরুষদেরকে শারীরিক ভাবে অসুখী রাখার জন্য রাজপুত্র রাজাকে মনে মনে ধিক্কার দিল। সে এবার উদায়নের পথ ধরে কাস্টম ঘাটের দিকে গেল। রাস্তার পাশে পলিথিনে আবৃত্ত ছুপড়ি। উদোম দরজার মুখে একটি পুরুষ বসে বসে গাঁজার স্টিকে আগুন ধরিয়ে টানছে। তার পাশে লেজের ভিতর মাথা মুড়িয়ে একটি মাদি বিড়াল শুয়ে আছে। চাঁদ মুখ ভেংচি কেটে দূরের প্রাসাদের দিকে চলে গেল।

রাজপুত্র অবাক হলো। আশ্চর্য লোকটা বড়ো অসহায় অথচ লোকটা হুইস্কি না খেয়ে শুধু গাঁজার স্টিক টানছে। তা-ও গোপাল বিড়ির ভিতর গাঁজার পঁচা পাতার ডাটা ঢুকানো। আহা রাজা অধীশ্বরের উচিত ছিল লোকটাকে ভালো ব্রান্ডের মদ সরবরাহ করা । সঙ্গে একটি নারীর উত্তাল দেহের পরশ। রাজপুত্র মনে মনে রাজাকে খুবই ব্যর্থ রাজা হিসেবে অভিশাপ দিল।

সে এই রাজ্যের আর দুর্দশা সহ্য করতে পারছে না । রাজপুত্র সে সেই পথে ফিরল যে পথ পিছনে রেখে গেছে। সে পুলিশ রেঞ্জের সামনে এসে দেখল। কোথায় সেই দুই পুরুষের এক নারী। কিছু ব্যর্থ পুলিশ লোক দুটিকে বেদম প্রহর করছে। মেয়েটি অদূরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ ভ্যানের সাথে তাকে হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। রাজপুত্র হুঙ্কার দিয়ে উঠল, খামোশ! এই বেতমিজ! ছাড় এই অসহায় লোক দুটোকে। এদের প্রহর করছ কেন?

একজন পুলিশ কুর্ণিশ করে জবাব দিল, জনাব রাজপুত্র এই লোক দু'জন ও একজন রমনী উন্মুক্ত রাস্তার উপর খুবই নেক্কারজনক কাজে লিপ্ত ছিল ।

রাজপুত্র অবাক হয়ে বলল, নেক্কারজনক কাকে বলছিস বেয়াদব! আমাদের রাজদরবারে রাজা সাহেবের জন্য বহু রমনী নিবেদিত থাকে। সেখানে সরাব থাকে, নগ্ন রমনীদিগের নৃত্য থাকে। আর এই দুর্ভাগা পুরুষ দ্বয় মাত্র একজন রমনীকে! তার উপর অত্যাচার! বড় বৈশম্য চলছে এই রাজ্যে। উহাদেরকে সস্মমানে মুক্তি দিয়ে দাও।

পুলিশ অত্যন্ত মর্মাহত হলো তাদের অপকর্মের জন্য। দুঃখ প্রকাশ করে তাদের ছেড়ে দিয়ে রাজপুত্রের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল।

আর একটু সামনে গিয়ে দেখল সেই প্রেমিক-প্রেমিকা উচ্চস্বরে আর্তনাদ করছে। তাহাদের পরণে আগাগোড়া মোড়ানো পোশাক পরিচ্ছদ। রাজপুত্র বলল, তোমরা আর্তনাদ করছ কেন অসহায় প্রেমিক যুগল? কী হয়েছে তোমাদের?

প্রেমিক-প্রেমিকা দৌড়ে এসে রাজপুত্রের পদতলে পড়ে বলল, ক্ষমা করুন রাজপুত্র! আমাদের অন্যায় হয়েছে। এই জজ সাহেবের বাসভবনের ভিতর হতে একজন গার্ড এসে বলল আপনি স্বচক্ষে আমাদের বেহায়া লিলা দেখে ফেলেছেন তাই আমাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। হুজুর আমার সঙ্গের মেয়েটির স্বামী সন্তান রয়েছে। তারা জানতে পারলে মেয়েটির সংসার ভেঙে যাবে। আমার ঘরে অসহায় স্ত্রী রয়েছে সে আত্মহত্যা করবে। আপনি আমাদের ক্ষমা করে দেন রাজপুত্র।

রাজপুত্র অবাক হয়ে বলল, পাগল হয়েছ তোমরা? গার্ড এই গার্ড! এদের অযথা ভয় প্রদর্শন করেছ কেন?

গার্ড কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, হুজুর আমি আমার কর্তব্যে অবহেলা করেছি এদের দেখতে পাইনি। আমার ঝিমুনি এসে গিয়েছিল।

রাজপুত্র ক্ষিপ্র হয়ে বলল, তুমি তোমার কর্তব্য সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নও। রাজ প্রহরীরা রাজা এবং রাজকর্মচারীদের পরকীয়ায় সহযোগিতা করে। সেখানে কে কার বউ দেখা হয় না। কে কোথায় যৌনাচারে নিমগ্ন হবে এর কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। সেখানে গোসল খানার ভিতরও ঝর্ণা ছেড়ে যৌন তৃপ্তি মেটানো হয়। তুমি এদেরকে বৃথা ভয় প্রদর্শন করেছ। এই মুহুর্তে এদের ভয় মুক্ত করো, আমার রাজ্যে রাজা প্রজাদের মধ্যে কোনো বৈষম্য রাখা হবে না। আমি নতুন আইন প্রনয়ণ করব।

প্রহরী রাজপুত্রের নিকট করজোড়ে ক্ষমা চাইল। রাজপুত্র সামনে এসে দেখল কুকুর গুলো প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করছে। তাদের শীর্ণকায় কেঁপে কেঁপে উঠছে।

সে ব্যথিত হলো। কিছু নেশাচুর পথচারী এবং ছিচকে চোর ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে। কী অবস্থা। রাজকর্মচারীদের চুরির জন্য রাজা কতরকম ফাঁক ফোকর করে রেখেছেন। আর সামান্য চোর আর নেশাচুর মানুষদের জন্য রাস্তার কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে। হায়! এই রকম বৈষম্য থাকলে রাজ্য চলবে কেমনে?

রাজ্যে অবাধ চুরি আর নেশার সুযোগ দেওয়ার জন্য আজই সে এর একটা বিহিত করবে।

এই পর্যন্ত লিখে হরি থেমে গেল। প্রায় সকাল হয়ে এসেছে। গল্পের শিরোনাম নিয়ে হরি চিন্তিত হয়ে পড়ল। সে দেখল হিরা বালা পাশ ফিরে শুয়েছে। অদূরে খাটের কোণে তাদের মেয়ে নন্দা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। হিরা বালার ব্লাউজ হীন উদোম শরীর। বয়সের তুলনায় হিরা বালাকে আরো বেশি শুকনো মনে হচ্ছে। তার খুব ইচ্ছে করছে হিরা বালাকে আদর করতে। কিন্তু সময় নেই। সে তড়িঘড়ি করে গল্পের নাম লিখল। আঠারো প্লাস টু। সে জানে এবারও সে বই বিক্রিতে বেস্টসেলার এর তালিকায় প্রথম থাকবে। সে কল্পনাও করতে পারেননি রাজপুত্রকে ফুসলায়ে রাতের রাস্তায় নামিয়ে আনবার জন্য রাজা সৈন্য পাঠিয়েছে। তাদের হাতে ডাণ্ডা বেড়ি। হিরাবালা ঘুমিয়ে আছে। তারা জানতেও পারল না তার গবেট হরিকে সৈন্যসামন্ত এসে ডাণ্ডা বেড়ি দিয়ে নিয়ে গেছে। সঙ্গে হরির লেখা আঠারো প্লাস টু পাণ্ডুলিপিটাও গায়েব হয়ে গেছে।

তারিখঃ১৬/৪/২০২৩

Comments

    Please login to post comment. Login