গল্প: ভাই বোনের গল্প
লেখক: ইকবাল হোসেন
ছোট্ট একটা সংসার। মা, বাবা, আর তাদের দুই সন্তান—একজন ছেলে, একজন মেয়ে। ভাইটার নাম রাজু, আর বোনটার নাম মুনিয়া।
দুজনের খুনসুটিতে ভরা ছিল সেই সংসারটা। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার সময়ই শুরু হতো ঝগড়া। কে আগে বাথরুমে যাবে সেটা নিয়ে মারামারি হতো। রাজু বলতো, “আমি বড়, আমি আগে যাবো।” মুনিয়া জবাব দিত, “তুমি বড় বলে কি আমি চাঁদের বুড়ি?”
স্কুলে যাওয়ার সময় মুনিয়া রাজুর ব্যাগে কলম ঢুকিয়ে রাখতো, আবার কোনোদিন হোমওয়ার্কের খাতা লুকিয়ে দিত। রাজু রাগ করে বলতো, “তুই একদিন খুব মার খাবি আমার কাছে!” অথচ সন্ধ্যায় খেলতে যাওয়ার সময় রাজুই আবার মুনিয়ার চুলে ফিতা বেঁধে দিত, জুতা পায়ে পরিয়ে দিত।
একদিন রাজুর স্কুলে টিফিন ছিল না। পকেটে হাত দিয়ে দেখলো, কিছুই নেই। মন খারাপ করে বসে ছিল ক্লাসে। ঠিক তখনই মুনিয়া তার ব্যাগ খুলে রাজুর সামনে একটা ছোট্ট প্যাকেট রাখলো। খুলে দেখে, ভেতরে তার প্রিয় আলুর চপ আর মায়ের বানানো পিঠা। মুনিয়া হেসে বললো, “তুই না বলছিলি খিদে লাগবে, তাই আমি আমারটা রেখে দিলাম।”
রাজুর চোখে জল চলে এলো। গলার স্বর কাঁপছিল, তবুও বললো, “তুই না থাকলে আমি কী করতাম রে!”
দিন যায়, বছর যায়। রাজু বড় হয়, কলেজে ওঠে। মুনিয়া তখনো স্কুলে পড়ে। রাজু এখন আর আগের মতো সময় পায় না, ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের পড়াশোনা আর বন্ধুদের নিয়ে। কিন্তু মুনিয়া ঠিকই ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, তার প্রিয় দুধভাতটা ফ্রিজে তুলে রাখে।
একদিন রাজু শহরে চলে যায় পড়াশোনার জন্য। বিদায়ের দিন মুনিয়া চুপচাপ ছিল। কিছু বলছিল না, শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ভাইটার দিকে। রাজু কাছে এসে বললো, “তোর জন্য চকোলেট আনবো, কাঁদিস না তো।” মুনিয়া মাথা নাড়ালো, কিন্তু চোখে জল থামছিল না।
বছরখানেক পর রাজু ফিরে আসে ছুটিতে। এসে দেখে, মুনিয়া অনেক বড় হয়ে গেছে। চুল লম্বা করেছে, এখন আর ভাইয়ের পেছনে ঘুরে বেড়ায় না, কিন্তু চোখে-মুখে সেই ভালোবাসা আগের মতোই। রাজু বুঝে নেয়—সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, কিন্তু ভাই-বোনের সম্পর্কটা কখনো বদলায় না।