[পৃথিবীতে এক ব্যাক্যের উপন্যাস খুব বেশি লেখা হয় নি। লেখক পাঠক দুজনের জন্যই বিষয়টা ক্লান্তিকর হয়ে যায়, মনে হয়, এই জন্যে। কিন্তু বহুমিল হ্রাবাল যেই ভাবে লিখতেন, যেটা তিনি বলছেন পাবেনিঙ বা ইংরেজিতে পালাভেরিং, সেটার জন্যে এই কৌশলটিকেই মোক্ষম মনে হয়। এইটা অনেকটা চিল করতে করতে আড্ডা দেয়ার মতো। মূল গল্প বলার কোনো চাপ নাই লেখকের। বরঞ্চ তিনি খালি কথা ঘুরান। ড্যানসিং লেসেন্সেও এই বিষয়টা দেখা যায়। কিন্তু ওর মধ্যে দিয়েই যাদের আসল বিষয়টা বুঝার সেইসব পাঠক বা আড্ডার বিজ্ঞ বন্ধুরা ঠিকই বুঝে ফেলেন।]

বান্ধবীরা, তোমাদের দেখার জন্যে এখানে যেমন আসি, ওভাবে চার্চেও যেতাম এককালে আমার সুন্দরীদের দর্শন পাওয়ার জন্য, মানে, ঠিক চার্চে না, আমি আসলে চার্চে-যায়-ধরণের লোক না, বরঙ গীর্জাটার পাশ দিয়ে পিচ্চি আরেকটা যে দোকান ছিল, খুবই ছোট একটা জায়গা, যেখান থেকে এ্যাল্টম্যান নামের এক লোক আমেরিকার ভদ্রলোকদের ফেলে দেয়া সেলাই মেশিন, দুই স্প্রিঙের ভিক্ট্রোলা- গ্রামোফোন, আর মিনিম্যাক্সের আগুন নিভানোর যন্ত্র বেচত, সেই এ্যাল্টম্যান লোকটার দ্বীতিয় একটা ব্যাবসাও ছিল যে তিনি অত্র অঞ্চলের সমস্ত বার আর পানশালায় সুন্দরী সরবরাহ করতেন, আর সেই কমবয়সী মেয়েরা ঘুমাত সবাই এ্যাল্টম্যানের পেছনের ঘরটায়, বা গ্রীষ্মের দিনে বাগানে ওরা তাঁবু ফেলত, আর চার্চের পাদ্রীদের নেতা -ডীন যিনি, উনি স্বাস্থ্য রক্ষার তাগিদে তার দৈনন্দিন হাঁটাটি এ্যাল্টম্যানের এই বেড়া ঘেঁষেই হাঁটতেন, তখন ঐ মেয়েগুলিরও এমন দেখানি স্বভাব, ওরা উচ্চনাদে একটা ভিক্ট্রোলা চালিয়ে দিয়ে গান গেত, সিগারেট টানত, আর অতি সামান্য বসনে মোটামুটি উদোম হয়ে রোদ পোহাত, ওদের ফরসা চামড়ায় তামাটে ভাব আনতে চায় আরকি, কি ভয়ঙ্কর-কি সুন্দর দৃশ্য ছিল গো, যেন স্বর্গ দেখতাম চোখের সামনে, এই তুচ্ছ মর্ত্যে রচিত হয়েছে বেহেশতের বাগান, যে কারণে ডীনকেও বাধ্য হয়ে প্রতিদিন এই বেড়া ঘেঁষে হাঁটতে আসতে হয়, ঐটা গেল একটা আর সাথে ওনার যে বাজে ভাগ্য দলের পাদ্রীগুলিকে নিয়ে, একটা আপন কাজিনকে নিয়ে কানাডা পালিয়ে গেল, আরেকটা চেকোসলোভাক চার্চে গিয়ে নিজের মাহযাবই পাল্টে ফেলল, আর অন্য একজন তো ধর্মের নিষেধ তোয়াক্কাই করল না, ঐ বেড়া টপকে একদিন ঢুকে পড়ল এ্যাল্টম্যানের বাগানে, প্রগাঢ় প্রেম হয়ে গেল তার সুন্দরীদের এক জনের সাথে, তারপর প্রেমে ব্যার্থ হয়ে নিজেই নিজেকে গুলি করে বসল, রিভলবার বা ব্রাউনিং কোন একটা দিয়ে, শেষে গিয়ে সবার ওরকমই হয়, আমরাও ছোটবেলায় এরকম বন্দুক একটা ধার করে এনেছিলাম আর কনার টোনসের মত বেড়ার দিকে তাক করে ফুটালাম একবার, কিন্তু বন্দুকটা অনেকগুলা ছোট ছোট যন্ত্র মিলে তৈরী, আর আমার ভাই সমস্তটাকে আলাদা করে ফেলে আর তো জোড়া লাগাতে পারে না, এমন একটা বাজে অবস্থা মনে হচ্ছিল নিজেদেরকে গুলি করে মেরে ফেলি, কিন্তু সেটা করা হল না কারণ বন্দুকই জোড়া লাগাতে পারি নাই, আর সেটা খারাপও হয় নি এখন চিন্তা করে দেখলে কারণ নাইলে তো আর হত না কোনদিন মেয়েদের দেখার জন্য গীর্জায় যাওয়া, আমি যেতামও এমনভাবে যে পুরাই ‘কিলার’, ব্যাংকের ক্লার্কদের মত দাগ টানা ট্রাওজার, আর পন্ডিত ভদ্রলোকদের মত বসতাম একটা মিনিম্যাক্স-কেসের ওপর, সূর্য তার সমস্ত আগুন ঢেলে দিত আকাশ থেকে, আর বেদিং-স্যুট পরে চাদর বিছিয়ে মেয়েরা রোদে গড়াগড়ি করত যেন ওরা কোন সূর্যপূ্জারী গোষ্ঠীর লোক, ছয়জন তারা, আকাশের দিকে মুখ করে সোজা শুয়ে আছে, দু’হাত মাথার নীচে, মাথায় পরচুলাও পরা, স্থির চেয়ে আছে ওপরে মেঘেদের পানে, নিজেদের শরীরগুলি সঁপে দিয়েছে পুরুষদের দৃষ্টির কাছে, আর যেহেতু আমি মোজার্টের মত কোমল হৃদয়ের লোক এবং ইউরোপীয় রেনেসাঁর একজন অনুরাগী তাই কুমিরের মত চোখে ওদেরকে দেখতাম, মানে একচোখে দেখছি রাস্তায় ডীন আসলেন কি না, অপর চোখে ভাসছে ওদের আড়াআড়ি পা, দোদুল্যমান হাঁটু, ওহ কি শিহরণ যে শিরদাড়ায় বয়ে যেত, ক’জন মানুষের এমন ভাগ্য হয় এতজন সুন্দরীকে একসাথে দেখার? বাদশা আর সুলতানরা বাদে, যাইহোক, আমি মেয়েগুলিকে আমার গল্প বলতাম, কত ধরণের সব স্বপ্ন তখন দেখতাম সেগুলির কাহিনী, যেমন এক স্বপ্নে দেখলাম একজন রুটিওয়ালা চুলায় একটা রুটি ঢোকাচ্ছে, এরকম দেখার মানে হল লটারি জেতা, দুঃখজনক যে আমার কোন টিকিট ছিল না, স্বপ্নে রুটির দোকান দেখা একটা নিশীকালীন আনন্দ, কিন্তু তাতে আর কি লাভ হয়? হাভলিক কি খ্রিষ্ট কেউই তো হাসলেন না, বরঙ বলা যায় তারা কাঁদলেন, কারণ কেউ যখন কোন মহান ধারণার প্রতিনিধিত্ব করেন তখন তো আর ফাউল করে বেড়ালে চলে না, দ্যাখো হ্যাভিলেকের কি ভীষণ মেধা ছিল, হীরের টুকরো একটা, প্রফেসররা মাথায় তুলে নাচল, চেষ্টা করল ওকে বড় ধর্মযাজক বানাতে, কিন্তু না, ও বেছে নিল ন্যায় বিচার, এই একটু কফি, আর মানুষদের জন্য নিবেদিত একটা জীবন, জুতিয়ে দূর করলে অশিক্ষার ভূত, কারণ একমাত্র ছাগলরাই ভাবে সামনে ভাল দিন আসবে বা ভবিষ্যত নিয়ে আশ্বস্ত হয়ে বসে থাকে, বুঝলে বান্ধবীরা, ভরসা কিন্তু নিজের ওপরই রাখতে হয়, মানে যেমন মানুখের কথাই ধর, ওর ভাবল ওর বাপ জেলখানার মালিক তা হলে তো হয়েই গেছে, কি আর লাগে, ও কাজের কাজ কিছুই করত না, সারাদিন মদ খায়, উল্টোপাল্টা অভ্যাস তৈরী করে, যেসবের ফলশ্রুতিতে ঝগড়াঝাটি হট্টগোল মারামারি সেই রাজাধিরাজদের দিনগুলিতে যেমন হত সামাজিক গণতন্ত্রবাদী আর মুক্তিচিন্তক আর যাজকের ভেতর যে এই দুনিয়া কি বানরদের থেকে শুরু হল নাকী ঈশ্বর কাদামাটি পিটিয়ে আদম বানালেন আর ওর ভেতরে কলকব্জা থেকে বানালেন ইভ, এখন দ্যাখো তোমরা, উনি তো ইভকেও কাদামাটি থেকেই বানাতে পারতেন, সস্তায় কাজ হয়ে যেত, যদিও ঝগড়া করা লোকরা কেউই জানে না আসলে ঘটেছিলটা কি, পৃথিবীর ছিল নক্ষত্রের মত ধূ ধূ প্রাণহীন মরুভূমি, কিন্তু মানুষ তো ম্যাগপাইদের মত কিচির মিচির করেই যায়- তাদের কিছুই যায় আসে না, আমার ধর একজনকে খুব মনে ধরল, সে ধরা যাক একজন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা, কিন্তু যা হবার নয় তাতো হবেই না, উল্টো খারাপ দিকে যেতে পারে, ইয়া মাবূদ! যুবরাজের বলে সিফিলিস ছিল আর ঐ ভেটেসেরা মহিলাটা গুলি করল ওকে, কিন্তু পরে আবার ভেটসেরাও গুলি খেল গাড়োয়ানের হাতে, যদিও যেকোন কমবয়সী মেয়েকেই দেখবা বলবে যে ওর জীবনের পুরুষটা যদি একটা ছ্যাচড়া মাগীমার্কা লোক হয় তো বেঁচে থাকার চেয়ে জ্যান্ত কবর নেয়াই ভাল, আমিও তাই পৃথিবীর সবচেয়ে অভিজাত আরমিতে চাকরী নিতে গিয়ে আমাদের মেডিকেল অফিসারকে বললাম যে, ‘ডাক্তার, আমার হার্ট খুব দুর্বল’, কিন্তু উনি শুনে বললেন, ‘আরে আমার হার্টও তো দুর্বল রে ব্যাটা, আর তোর মত আর কয়েশ হাজার পাইলেই তো আমরা গোটা দুনিয়া দখল করে নিতে পারতাম’, আর তারপর উনি আমাদের সর্বোচ্চ বিভাগ দিলেন, তাই আমিও আমি একটা হিরো হয়ে গেলাম, মনে খুব আনন্দ নিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম, তখন উনি ডেকে পাঠালেন, বললেন যে, তোর হাতে তো সময় আছে, আমার বউটাকে একটু স্টেশানে দিয়ে আয়, সেই মহিলাও খুব সুন্দর, মানে ডাক্তারের বউ, একদম ‘ম্যারেঙ্কা জেগলেরোভা’র মত দেখতে, আর মারিয়া থেরেসার মত লম্বা, আর কাপড়চোপড়েও একদম রানী একটা, তাই সে দেখা প্রথম প্রশ্নটাই জিজ্ঞেস করল আমাকে দেখে যে, “এ্যাই তোমার বিয়ে হইসে?”,আর তারপর সব শেষ হওয়ার পর সে আমাকে একটা বকশিশের মত দিতে চাইল, ছয় ক্রুজার, কিন্তু আমি নেই না, একেই বলে মর্দাঙ্গি, হ্যাভিলেক বা যিশু খ্রিস্ট হলেও নিতেন না,
(চলবে--)
ড্যান্সিং লেসন্স ফর দি এ্যাসভান্সড ইন এজ : বহুমিল হ্রাবাল
চেক থেকে ইংরেজী : মাইকেল হেনরী হেইম
ইংরেজী থেকে বাংলা : সালেহ মুহাম্মাদ