প্রতিদিন ভোরবেলা, সূর্য ওঠার আগেই, নীলা এক কাপ গরম চা হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। তার চোখ যায় দূরের আকাশে, পাখিদের ডানায় ভেসে বেড়ানো আলো-ছায়ার খেলার দিকে। বারান্দাটাই যেন তার নিঃশব্দ অনুভবের ক্যানভাস—যেখানে সে প্রতিটি সকালে আঁকে একটাই মুখ... আরিফের।
আরিফ, নীলার জীবনের সবচেয়ে মধুর অধ্যায়। ভালোবাসার পরশে মোড়া সেই মানুষটি, যে হঠাৎ করেই জীবন থেকে হারিয়ে গেল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায়—তিন বছর আগে। সময় থেমে গিয়েছিল সেদিন, আর নীলা রয়ে গেছে সেই থেমে থাকা মুহূর্তের মধ্যে।
তবে সব হারানোর মাঝেও তার একমাত্র সান্ত্বনা ছিল আরিফের লেখা শেষ চিঠিখানি—একটা ছোট, হাতের লেখা চিঠি, যেখানে ভালোবাসার শব্দগুলো আজও জীবন্ত।
"নীলা, যদি কোনোদিন আমি না থাকি, জানবে আমি তোমার চারপাশেই আছি—হয়তো বাতাস হয়ে তোমার চুল ছুঁয়ে দিচ্ছি, হয়তো আকাশের তারা হয়ে তোমার চোখে জ্বলছি। হাসবে তুমি, কারণ তোমার হাসি আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস।"
– আরিফ
চিঠিটি নীলা যতবার পড়ে, মনে হয় আরিফ যেন ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে, তার গলার নিচে নরম স্বরে কথা বলছে। সে কখনো অঝোরে কাঁদে না, চোখের জল জমে, কিন্তু সেই চিঠির শব্দগুলিই যেন তাকে ধরে রাখে—ভাঙতে দেয় না।
প্রতিটি দিন সে নতুন করে বাঁচে, আরিফের স্মৃতির আলোয়। আজও যখন পাখিরা গান গায়, হালকা বাতাস তার মুখে এসে পড়ে—তখন সে চোখ বন্ধ করে বলে,
"তুমি আছো, আমি জানি... হয়তো দূরে, কিন্তু ঠিক আমার হৃদয়ের মধ্যে।"

চিঠির ভালোবাসা যেমন ছিল চিরন্তন, তেমনি নীলার প্রতীক্ষাও আজো থামেনি। হয়তো জীবনের পথে সে একা, কিন্তু তার হৃদয়ে ভালোবাসার চিহ্ন আজও অমলিন।