ফ্রেডারিক নীৎশেকে নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির শেষ নেই। নারীবিদ্বেষী, না*জিউস্কানিদাতা, ক্ষমতালিপ্সু, পাগল, সাম্যবিরোধী, নৈরাশ্যবাদী বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু এসব অভিযোগ প্রকৃতপক্ষে কতটুকু সত্যতা বহন করে?
'জরথুস্ত্র বললেন' বইটি নিয়ে বাংলাদেশের বিদগ্ধ পাঠকমহলে আছে নানামুখি ব্যবচ্ছেদ-বিশ্লেষণ। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে ইরানের হারিয়ে যাওয়া সেই নবীকে ধারণ করে নীৎশে বলেছেন অনেক কথা, নির্মাণ করেছেন রহস্যের, নাকি জরথুস্ত্র নীৎশেকে দিয়ে বলিয়েছেন এসব?
আর্য সারথী তাঁর সহজিয়া ভাবনায় নীৎশেকে দেখেছেন এক ক্ষ্যাপাটে সন্ত হিসেবে। বেদ, উপনিষদ, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের এক হাল্কা রেফারেন্সের সংযোগে চেষ্টা করেছেন মিথবাস্টিঙের।
প্রায় সকল মহাপুরুষই বর্তমানের। কারণ তারা প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছেন। নীৎশের জরথুস্ত্রের মাধ্যমে পরম সত্যকে ধারণ করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টাকে বিভিন্ন উৎস থেকে আহরিত জ্ঞান দ্বারা সহজ কায়দায় বিশ্লেষণ করেছেন লেখক।
ইরানের দর্শনের সাথে ভারতের সম্পর্ক, সংযোগ, সমিল ঠিক কোথায় কোথায় তা সংক্ষেপে বলেছেন আর্য সারথী। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাঝে পার্থক্য কী তা নিয়েও আলাপ আছে এ গ্রন্থে।
আগ্রহী পাঠক বইটি পড়তে পড়তে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের এক ঝলকও পেয়ে যেতে পারেন। নীৎশের উপর হিন্দু দর্শনের প্রভাব, মানব থেকে মহামানবে উত্তরণের সেই 'উবারম্যানজ' তত্ত্ব না*জিরা কীভাবে ভুল বুঝেছিলো সেই ব্যাখ্যাসহ মানবজীবনের উপর বয়ে চলা চিরাচরিত দ্বন্দ্বের নিরসনের পথ দেখানোর প্রচেষ্টা এ বইয়ে দেখতে পাওয়া যায়।
নীৎশে ও জরথুস্ত্রের গুরুত্বটা পাঠকের কাছে পৌছে দেয়াটা আর্য সারথীর মাঝে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। তথাকথিত 'ভালো' ও 'মন্দ'এর গারদের উর্ধ্বে উঠে মহামানব হওয়ার নিরন্তর সাধনার কথা জরথুস্ত্র বলে গেছেন নীৎশেকে দিয়ে কিংবা নীৎশে বলিয়েছেন জরথুস্ত্রেকে দিয়ে কারণ লেখকের মতে,
"জরথুস্ত্র বাস্তব ও কল্পনার মধ্যবিন্দু।"
আমার কাছে মনে হয়েছে বইটিতে ফিরে আসা যায় বারবার।
বই রিভিউ
নাম : জরথুস্ত্র-নীৎশের সহজিয়া ভাবনা
লেখক : আর্য সারথী
প্রথম প্রকাশ : অমর একুশে বইমেলা ২০২৫
প্রকাশক : গ্রন্থিক প্রকাশন
প্রচ্ছদ : সব্যসাচী কারিগর
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ।
