অধ্যায়-১: রহস্যের শুরু
শীতের সকালের হালকা কুয়াশা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। স্কুলের মাঠে কয়েকজন ছাত্র ক্রিকেট খেলছে, আর কিছু ছাত্র-ছাত্রী বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষে তাদের প্রজেক্ট সাজাতে ব্যস্ত। রুদ্র চুপচাপ বসে আছে লাইব্রেরির কোণার টেবিলে। সামনে খোলা একটা পুরোনো ডায়েরি, পাশে কফির কাপ। সে খেয়াল করছে — মিতুল আজ স্কুলে আসেনি।
মিতুল শুধু রুদ্রর ক্লাসমেট না, ওর খুব ভালো বন্ধু। সর্বদা চঞ্চল, বিজ্ঞানে অদ্ভুত রকম আগ্রহ, আর যুক্তির ধারালো বুদ্ধি – এইসব গুণেই সবাই তাকে চিনে। কিন্তু আজ তার এই অনুপস্থিতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না রুদ্র। কারণ, আজ মিতুলেরই সবচেয়ে বড় দিনের মধ্যে একটি – বিজ্ঞান মেলায় তার “মস্তিষ্ক-নিয়ন্ত্রিত রোবট” প্রজেক্ট উপস্থাপন করার কথা ছিল।
ঘণ্টা তিনটে বাজতে না বাজতেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে—"মিতুল নিখোঁজ!" কেউ বলছে সে পালিয়ে গেছে, কেউ বলছে সে কোনো সমস্যায় পড়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হলেও পুলিশে এখনো জানানো হয়নি।
রুদ্র তৎক্ষণাৎ ছুটে যায় মিতুলের ডেস্কে। তার চোখে পড়ে, একটি কাগজ পড়ে আছে মিতুলের খাতার নিচে। খুব সতর্কভাবে কাগজটি তুলে নেয় সে। সেখানে লেখা—
"তুমি যদি সত্য জানতে চাও, তবে আলো নয়, ছায়া খুঁজো..."
আর নিচে কিছু অদ্ভুত সাংকেতিক চিহ্ন—
#X3R-7L9...*VR.88
রুদ্র বুঝতে পারে, এটা সাধারণ চিঠি না। সে দ্রুত তীর্থকে ডাকে—তীর্থ তার সব কেসে পাশে থাকে, সাহসী আর বুদ্ধিমান। তীর্থ এসে বলল, "চল, আগে মিতুলের বাড়ি ঘুরে আসি।"
মিতুলের বাড়িতে পৌঁছে দেখে তার মা কাঁদছেন। বাবা অফিসে। মিতুল গতকাল রাত থেকেই নিখোঁজ। তার ঘরটি যতটা সম্ভব গোছানো, কিন্তু বিছানার নিচে কিছু অদ্ভুত যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। রুদ্র অনুমান করে, মিতুল কিছু এক্সপেরিমেন্ট করছিল, কিন্তু সেটা কেন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল?
রুদ্র সেই সাংকেতিক চিহ্ন নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। তার ল্যাপটপে কিভাবে এই কোড ভাঙা যায় তা নিয়ে কাজ শুরু করে। কয়েকঘণ্টা পর সে আবিষ্কার করে, ওই কোডটি আসলে GPS কনভার্ট করা কোড, যা ইঙ্গিত করছে স্কুলের পুরাতন বিজ্ঞান গবেষণাগারের একটি নির্দিষ্ট রুমের দিকে।
রুদ্র বলে, "তীর্থ, এই রহস্যে মিতুল নিজেই ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু রেখে গেছে। সে চায় আমরা তাকে খুঁজে বের করি।"
তীর্থ চোখ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, "তবে কি কেউ ওকে জোর করে নিয়ে গেছে?"
রুদ্র চুপ করে রইল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, "হয়তো না। হয়তো মিতুল নিজেই এমন কিছু আবিষ্কার করেছিল যেটা খুব বিপজ্জনক। হয়তো সে সেটা গোপন রাখার চেষ্টা করছিল… আর হয়তো সেই কারণেই সে এখন কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছে।"
তীর্থ ফিসফিস করে বলল, "রুদ্র, তুমি কি ভাবছো এটা কেবল নিখোঁজ নয়... এটা একটা ষড়যন্ত্র?"
রুদ্র মাথা নাড়ল, "ঠিক তাই। এই রহস্যের গভীরে কিছু আছে… ছায়ার গভীরে…।"