সোহেল ছিল ছোট শহরের এক সাধারণ ছেলে। জন্ম এক দরিদ্র পরিবারে। বাবা ছিলেন রিকশাচালক, মা গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে সে ছিল একমাত্র ভাই। প্রতিদিন স্কুল শেষে তাকে বাবার রিকশার পেছনে বসে শহরের অলিগলি চষে বেড়াতে হতো, কারণ মা চাইতেন—ছেলেটা চোখে বড় স্বপ্ন রাখুক, কিন্তু পায়ে থাকুক মাটির টান।
সোহেলের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। সে গ্রামের স্কুলে প্রথম হতো, কিন্তু বই কেনার টাকার অভাবে পুরনো বই পড়ত। স্কুলের শিক্ষকরা তার মেধা দেখে অবাক হতেন। একদিন প্রধান শিক্ষক তাকে বললেন, “তোর চোখে যে জেদ দেখি, সেটা ঠিক রাখলে তুই অনেক দূর যাবি।”
এসএসসি পরীক্ষায় সোহেল জেলায় প্রথম হয়। খবরটি সংবাদপত্রে ছাপা হয়। গ্রামের সবাই তাকে দেখতে আসে। কিন্তু খুশির মাঝেও চিন্তা ছিল—এই ছেলে কলেজে যাবে কীভাবে? টাকা কোথায়? সেদিন তার মা সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আমার ছেলের পেছনে একবেলা না খেয়ে থাকলেও আমি পড়াশোনা বন্ধ হতে দেব না।”
সোহেল শহরে পড়তে যায়। টিউশনি করে খরচ চালায়, মাঝে মাঝে উপোসও করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে তার পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু সে হাল ছাড়েনি। রাত জেগে পড়াশোনা, দিনভর ক্লাস আর টিউশনি—এই ছিল তার জীবনচক্র।
অবশেষে, সে সরকারি বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসনে প্রথম হয়। তার নাম ছাপা হয় প্রথম পাতায়। যে ছেলে এক সময় মাটির ঘরে হারিকেন জ্বেলে পড়াশোনা করত, সে এখন জেলা প্রশাসক।
গ্রামে ফিরে মা-বাবার পায়ে হাত রেখে বলেছিল, “তোমাদের ত্যাগেই আমি আজকের সোহেল।
বাবা চোখ মুছে বলেছিলেন, “তুই আলোর পথিক, বাবা। তোর মতো হলে গরিব ঘরের ছেলেও আকাশ ছুঁতে পারে।”
এখন সোহেল নিজ গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে, নাম দিয়েছে "আলোপথিক একাডেমি"—যেখানে বই পায় বিনামূল্যে, স্বপ্ন পায় সাহসে ভরপুর।