Posts

গল্প

"শেষ পত্র"

May 4, 2025

Nafis Jsjs

74
View

গ্রামের এক কোণায় এক বৃদ্ধ মানুষ বাস করতেন—নাম তার হরিপদ। বয়স আশির কাছাকাছি, চোখে কম দেখে, কানে কম শোনে, কিন্তু মনটা এখনো একদম তরুণ। প্রতিদিন বিকেলে তিনি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বাড়ির সামনে বসে থাকেন, পাখিদের ডাক শোনেন, আর অপেক্ষা করেন—কিসের জন্য, কেউ জানে না।


গাঁয়ের লোকেরা বলে, হরিপদর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে উনি একাই থাকেন। একটা ছেলে আছে শহরে, সে নাকি অনেক বড় চাকরি করে, কিন্তু বছর কয়েক হল তার খবরও নেই। কেউ কেউ আবার বলে, ছেলে বিদেশে গেছে, বুড়ো বাবার খোঁজ রাখার সময় কই!
একদিন ডাকপিয়ন এক খাম দিয়ে গেল হরিপদর হাতে। তিনি ধীরে ধীরে খামটা খুললেন, চোখে চশমা লাগিয়ে পড়া শুরু করলেন।

ছেলের লেখা পত্র—কতদিন পর! চিঠিতে লেখা—
 

"বাবা,
তুমি কেমন আছো জানি না, তবে মন থেকে প্রতিদিন তোমাকে মনে পড়ে। কাজের চাপে আসা হয়নি। মা'কে খুব মিস করি। ভাবছি এবার দেশে ফিরেই তোমার কাছে চলে আসব। তোমার সঙ্গে বসে বিকেলের চা খাবো, গল্প করবো।"
চিঠিটা পড়তে পড়তে হরিপদর চোখে জল চলে এল। বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। দীর্ঘদিন পর যেন কারো ভালোবাসা তার হৃদয়ে ছুঁয়ে গেল।
কয়েকদিন পর গ্রামের মানুষ দেখতে পেল—হরিপদ তার বারান্দায় আরও একটি চায়ের কাপ রাখছেন। প্রতিদিন বিকেলে তিনি দুই কাপ চা তৈরি করেন, এক কাপ নিজের জন্য, আরেকটা ছেলের জন্য। কেউ কেউ হাসে, কেউ আবার নীরবে দেখে যায়।
এক মাস কেটে গেল।

ছেলেকে দেখা যায় না, কিন্তু হরিপদর মুখে নতুন একটা আলোর ছোঁয়া। যেন আশাই তার জীবনের শেষ শক্তি।
একদিন বিকেলে সত্যিই একটি গাড়ি এসে থামে হরিপদর বাড়ির সামনে। গেট খুলে এক যুবক নামল। তার হাতে একটি ছোট ব্যাগ, চোখে জল। সে এসে হরিপদকে জড়িয়ে ধরল।
"বাবা, আমি ফিরে এসেছি। এবার আর কোথাও যাবো না।"

হরিপদ চোখ বন্ধ করে শুধু বললেন, "জানি, তুই আসবি। তোর জন্যই তো চা বানিয়ে রাখতাম রোজ।
সেদিন গ্রামের সবাই জানল—প্রতীক্ষারও একটা শক্তি আছে, ভালোবাসার মতো।

Comments

    Please login to post comment. Login