প্রহর কত চলে?
~ তৃতীয়, ছায়ার নিশ্চিদ্র আলিঙ্গনে।
ঘড়ির উত্তর কী?
~ দু’টো।
আমি কীসের আকাঙ্ক্ষায় জেগে?
~ সুখের, যা হৃদয়ে অধরা।
সুখ কোথায় পলায়ন করেছে?
~ তার সঙ্গে, দূর অতীতের পথে।
সে কোথায় লুকিয়ে?
~ প্রাচীরের ওধারে, আবছায়া অস্পৃশ্য।
কীসের প্রাচীর?
~ অভিমানের, যা হৃদয়ে জমাট।
কেমন অভিমান?
~ বরফের দুর্গের ন্যায়।
কোন হৃদয়াবেগের আঁচ,
ধরাতে পারে বিগলন তায়?
~ নিখাদ প্রণয়ের, যা নীহারধূপ ছড়ায়।
অভিমানী হংসী, কেন উড়িস মেঘান্তরে?
নীড়ের পদ্মছায়া ফেলে দূর নদীর তীরে?
মানের তুষার জমে হৃদয়ে তোর,
কেন সে জমাট দুর্গে অভিমানের ঘোর?
নীড়, তিলে তিলে গড়া, পদ্মসৌরভে,
প্রতি পালকের স্পর্শে মুখরিত জলরভে।
তবু তুই, বিমুখী হংসী, ছেড়ে গেলি তায়,
কোন দ্বন্দ্বে হৃদয় তোর ভুলে নীড়ের মায়?
নীড় কী বলে, মায়াবিনী হংসী, নীরবে অপেক্ষায়?
তার শাখায় জলধর বুনে কুয়াশ্রয়ের কায়।
“ফিরে আয়, অভিমানী, এ বিষণ্ণ পদ্মতীরে,
শুভ্র পাখনের স্পন্দনে জাগুক সরিতার গান স্থিরে।”
মানের প্রাচীর, হিমের দুর্গ, কঠিন যে হোক,
অনুরাগের আঁচে বিগলিত হয়, মানস্রোতে শোক।
নীড়ের ডাক, অম্বরস্রোতে, ভেসে আসে কল্লোলপথে,
তবু হংসী, কেন থামিস না অভিমানের রথে?
বিমুখী হংসী, কেন তোর হৃদয়ে পদ্মাশ্রু ঝরে?
কুয়াশ্রয়ের প্রাচীর কেন ভাঙে না নদীর তরে?
প্রতি পালকে জড়ানো স্মৃতি, নীড়ের জলময় গান,
তবু কেন ঝঞ্ঝাস্রোতে জর্জরিত তোর প্রাণ?
মানের তুষারধারা জমে, কঠিন হয় ক্ষত,
প্রেমের অগ্নিস্রোত কি পারে গলাতে সে জড়ত?
উড়িস তুই মেঘান্তরে, বনের গভীর ঘোরে,
কিন্তু নীড়ের ডাক বাজে, নদীপথে অবিরাম ঝড়ে।
তিমিরান্তের কিনারে, হংসী, দেখ জ্যোতির ঝলক,
জলধর ভেদ করে জাগে আসক্তির অমর ফলক।
নীড়ের ডাক, ঝঞ্ঝাস্রোতে, ছুটে আসে বনপথে,
ফিরে আয়, অভিমান ভুলে, জ্যোতিস্রোতের স্রোতে।
অভিমানের তুষারধারা গলে, বিগলিত হয় মান,
প্রীতির উত্তপ্ত নদীতে জাগে হৃদয়ের প্রাণ।
হংসী, তুই থামা এবার, মেঘান্তরের ভ্রান্তি ত্যাগ,
নীড়ের পদ্মাশ্রয়ে মিলুক তোর চিরন্তন রাগ।
কোন ঝড়ে ফিরে আসে হংসী, নীড়ের পদ্মকোলে?
অভিমানের কুয়াশ্রয় ভেঙে, সুখ ফিরে জলতলে!
অম্বুদীপ জ্বলে উঠে, মেঘের গর্জন ছিন্ন করে,
হৃদয়ের সান্নিধ্যে মিলে, পদ্মাশ্রু গলে তরে।
প্রহর যাপিয়ে যায়, বনের ছায়া মুছে যায় ভোরে,
নীড়ের শাখায় হংসী, গান বাজে নদীস্রোতে।
অভিমানের দ্বন্দ্ব শেষে, প্রেমের বিগলিত ঝর্ণায়,
হংসী ও নীড় মিলে, পদ্মের আশ্রয়ে ডুবে যায়।