আইরার কল্পনা
চান্দারপাহাড় গ্রামের সবাই জানে, আইরা একটু ‘ভিন্নরকম’। সে বলে—আকাশে একটা নীলডানা পাখি থাকে, যে শুধু তার সঙ্গেই কথা বলে। সবাই হাসে, বলে, "এ সব বাচ্চাদের গল্প।"
কিন্তু আইরা জানে, প্রতিরাতে সে পাখি পাহাড়ের চূড়ায় আসে। তার গান শোনে, যেটা কেবল সে-ই শুনতে পায়।
এক রাতে, মা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। অন্ধকারে, নির্জনে, সে ছুটে যায় পাহাড়ে—প্রার্থনা করে সেই অলৌকিক পাখির কাছে। তার চোখে কান্না, কণ্ঠে জোর…
"ও নীলডানা পাখি, যদি সত্যি থেকে থাকো, আমার মাকে বাঁচাও।"
পালকের আলো
ঝড় থেমে যায়। হাওয়ায় যেন নরম একটা সুর ভেসে আসে। আকাশজুড়ে আলো আর ছায়ার খেলা। হঠাৎ পাহাড়ের চূড়ায় দেখা যায় একটি বিশাল নীল পাখি, যার ডানাগুলো যেন আকাশেরই অংশ।
পাখিটি ধীরে ধীরে আইরার পাশে নেমে আসে। তার মুখে কোনো শব্দ নেই, শুধু চোখে এক গভীর কোমলতা। সে নিজের পালক থেকে একটি নীল পালক ছিঁড়ে আইরার হাতে দেয়।
আইরা ছুটে আসে ঘরে, পালকটা মায়ের বালিশের নিচে রাখে।
ভোরবেলা, মা উঠে বসে। সুস্থ, শান্ত। যেন কিছুই হয়নি।
পাহাড়ের ডাক
আইরার মা এখন পুরোপুরি সুস্থ। গ্রামজুড়ে গুজব ছড়ায়—“আকাশে কোনো পবিত্র প্রাণী বাস করে, হয়তো রক্ষাকর্তা।”
আইরাকে সবাই প্রশ্ন করে, কিন্তু সে কিছু বলে না। কেবল মাঝে মাঝে, একা একা পাহাড়ে যায়।
সেই রাতেই নীলডানা পাখি আবার আসে। এবার সে বলে—
"তুমি যদি চাও, আমি তোমাকে আমার রাজ্যে নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে হলে ত্যাগ করতে হবে ভয়, লোভ, আর নিজেকে।"
আইরার চোখ জ্বলে ওঠে। “আমি প্রস্তুত।”
নীল আকাশের নিচে
পরদিন রাতে আইরা পাহাড়চূড়ায় ওঠে। পাখিটি তাকে নিজের পিঠে বসায়। পাহাড়, নদী, বন সব পেরিয়ে তারা এক রহস্যময় জগতে পৌঁছে যায়—যেখানে মাটির রং নীল, আর গাছে ফুল ফোটে গান হয়ে।
এটি নীলডানা পাখির রাজ্য—যেখানে দুঃখ জমতে পারে না। এখানে কেবল তারাই থাকে, যারা সত্যিকারের বিশ্বাস আর মমতা বুকে নিয়ে আসে।
আইরা দেখে, সেখানে আরও কিছু প্রাণী আছে—যারা হয়তো একসময় মানুষ ছিল, এখন নতুন রূপে।
ফিরে আসা
আইরার জন্য এক কঠিন সিদ্ধান্তের সময় আসে। সে চাইলে এখানে থাকতে পারে চিরকাল। কিন্তু তার গ্রাম, তার মা—সব পিছনে পড়ে থাকবে।
নীলডানা পাখি বলে—“বেছে নাও। তুমি যদি ফিরে যাও, এই রাজ্যে আর ঢুকতে পারবে না।”
আইরা চিন্তা করে, চোখ বন্ধ করে, আবার খুলে বলে—“আমি ফিরে যাবো। কারণ ভালোবাসা পালকের চেয়েও বেশি মূল্যবান।”
পাখি মৃদু হেসে ডানায় বাতাস তোলে।
আইরা আবার ফিরে আসে চান্দারপাহাড়ে।
কিন্তু অনেক রাতে, চুপিচুপি, আকাশের দিকে তাকালে—আজও সে দেখে, নীল ডানা ঝলমল করে কোথাও, এক চুপচাপ পাহাড়চূড়ায়।