Posts

উপন্যাস

সন্ধ্যাতলার বাগান

May 11, 2025

Md. Abdullah Al Mamun

135
View

শহর থেকে সন্ধ্যাতলায়

মায়ার বয়স বারো। বাবা-মা দুজনেই বিদেশে কাজ করতেন। করোনার পর তারা ফিরে এল না। তাই মায়াকে পাঠানো হলো মায়ের মামার পাহাড়ি গ্রামে—সন্ধ্যাতলা

মায়া সবার সঙ্গে কথা বলে না। সবকিছুতেই তার বিরক্তি। গ্রামটা একঘেয়ে লাগে—চুপচাপ, ধুলো আর পাখির শব্দে ভরা।

তবে মামার পুরনো বাড়িটা অদ্ভুত। তার বারান্দা থেকে দূরে একদিকে উঁচু প্রাচীর দেখা যায়, আর মাঝে মাঝে যেন হাওয়া গায়ে লাগে না—একটা থমথমে গন্ধ থাকে।

তালা দেওয়া ফটক

এক দুপুরে বৃষ্টি নামছিল। মায়া বাড়ির পেছনের দিকে ঘুরছিল, হঠাৎই সে দেখে—এক প্রাচীরের পাশে লুকিয়ে থাকা পুরনো একটা লোহার দরজা। জংধরা তালা, তার ওপর লতা গেঁথে গেছে। কিন্তু আশেপাশে কোনো চাবির খোঁজ নেই।

সেদিন রাতে এক বৃদ্ধা কাজের মহিলা বলে ফেলেন—“ওদিকে যেও না, সেখানে অনেক বছর আগে এক মেয়ে মারা গিয়েছিল। তখন থেকেই তালা দেওয়া।”

মায়ার ভিতরে কৌতূহল চেপে ধরে।

চাবির খোঁজ

পরদিন থেকেই মায়া শুরু করে খোঁজা। পাথরের নিচে, পুরনো বাক্সে, দেওয়ালের ফাটলে। তিনদিন পর সে খুঁজে পায় ছোট একটা রুপোর চাবি—কাঠের এক বেদির নিচে।

সন্ধ্যার পর সে ফটকে যায়। তালা খুলে যায় এক মৃদু শব্দে। ভেতরে এক বিস্ময়ের রাজ্য—বুনো ঘাস, লতা, শুকনো গাছ, অথচ যেন কিছু একটা শ্বাস নিচ্ছে সেখানে।

বাগান মৃত নয়, কেবল ঘুমিয়ে আছে।

জাদুর প্রথম আলো

মায়া প্রতিদিন গোপনে বাগানে যায়। মাটি খুঁড়ে ফুল রোপণ করে, শুকনো পাতায় পানি দেয়। ধীরে ধীরে গাছেরা সাড়া দেয়। একদিন বৃষ্টি শেষে সে দেখতে পায়—দুটি হলুদ ফুল ফুটে উঠেছে।

একদিন, হঠাৎ এক কিশোর তার পেছনে এসে দাঁড়ায়—"তুমি এখানে কী করছো?"

সে রুহান, মামার প্রতিবেশীর ছেলে। খুব কম কথা বলে, সবসময় হুইলচেয়ারে বসে থাকে। কিন্তু সেই বাগানে সে দাঁড়িয়ে ছিল!

তাদের বন্ধুত্ব তৈরি হয়—দুই নিঃসঙ্গ হৃদয় এক বাগানে একসঙ্গে বাঁচে।

ফিরে পাওয়া জীবন

বাগান ধীরে ধীরে জেগে ওঠে। রুহান হাঁটতে শেখে। মায়ার হাসি ফিরে আসে। মামা অবাক হয়ে দেখেন, সেই দুমুখো মেয়ে হঠাৎ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

গ্রামে গুজব ছড়ায়—সন্ধ্যাতলার বাগানে আবার প্রাণ এসেছে।

মায়া জানে, এই বাগান জাদুময় নয়—এটা বিশ্বাস আর যত্নে সাড়া দেয়। মানুষ যেমন ভালোবাসায় বদলায়, তেমনি প্রকৃতি বদলায় যত্নে।

শেষ বিকেলের আলোয় তারা দুইজন পাশাপাশি বসে থাকে, বাগানের গোলাপের মাঝখানে।

Comments

    Please login to post comment. Login