Posts

প্রবন্ধ

নিঃসঙ্গতা—একটি নীরব বিপ্লব

May 11, 2025

Md. Abdullah Al Mamun

176
View

নিঃসঙ্গতা শব্দটি শুনলেই অনেকেই চমকে ওঠে, যেন এ এক অভিশাপ। একাকিত্ব মানেই দুঃখ, নির্জনতা মানেই শূন্যতা—এই ধারণা সমাজ আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু নিঃসঙ্গতা কি শুধুই নেতিবাচক? না কি তার ভিতরেও লুকিয়ে আছে এক গোপন বিপ্লব?

আজকের পৃথিবীতে আমরা সবসময় সংযুক্ত—ফোনে, মেসেজে, ভিডিও কলে। অথচ এই "সংযুক্ততা"র ভিড়েই মানুষ হয়ে পড়ছে আরও একা। শহরের ভিড়ে হাঁটতে হাঁটতে কেউ যখন আচমকা থেমে যায়—কোনো কথা না বলে শুধু আকাশের দিকে চায়, তখন বোঝা যায়, কিছু অনুভূতি আর কোনো শব্দে প্রকাশ করা যায় না।

নিঃসঙ্গতা আমাদের অন্তরের দরজায় ধাক্কা দেয়। যখন বাইরের পৃথিবী থেমে যায়, তখন ভিতরের পৃথিবী জেগে ওঠে। আমরা নিজের সঙ্গে কথা বলতে শিখি। নিজেকে প্রশ্ন করি—“আমি কে? আমি কাকে খুঁজছি? আমার যা দরকার, তা কি আসলেই বাহিরে আছে, নাকি নিজের ভিতরেই লুকিয়ে?”

বিভিন্ন দার্শনিক, কবি, শিল্পী তাদের সেরা কাজটি করেছেন নিঃসঙ্গ মুহূর্তে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন—“নিঃসঙ্গতাই মহত্ত্বের অঙ্গ। যে মহৎ, সে নিঃসঙ্গ।” নিঃসঙ্গতা এক ধরণের আলো, যা কেবল সেই চোখেই পড়ে, যেটা বাইরের আলোর চেয়ে নিজের আলো খোঁজে।

অবশ্যই, দীর্ঘস্থায়ী একাকিত্ব মানসিক স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। কিন্তু এখানেই পার্থক্য—নিঃসঙ্গতা যদি হয় নিজের পছন্দে, নিজের খুঁজে-পাওয়া নিঃশব্দতা, তাহলে তা আর কষ্ট নয়, বরং এক ধরণের চেতনার উত্তরণ।

আমরা যদি প্রতিদিন একটু সময় নিই শুধু নিজের জন্য—টেলিভিশন বন্ধ করে, মোবাইল দূরে রেখে, নিজের সঙ্গে এক কাপ চা খাই কিংবা চুপচাপ আকাশ দেখি—তবে বুঝতে পারব, নিঃসঙ্গতা আসলে ভয় নয়, বরং সাহস।

এ এক বিপ্লব, নীরব, কিন্তু গভীর।

Comments

    Please login to post comment. Login