Posts

গল্প

তোমার অপেক্ষায়

May 12, 2025

Nafis Jsjs

106
View

রোদঝলমলে একটা দুপুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, চারদিকে কোলাহল, আড্ডা আর হাসির রোল। ঠিক সেই ব্যস্ততার মাঝখানে এক কোণে একা বসে আছে আরেফিন। হাতে ধরা পুরোনো একটা বই, পাতাগুলোর মাঝখানে শুকিয়ে রাখা গোলাপের পাঁপড়ি। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে সে শুধু বই পড়ছে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে অপেক্ষা করছে—একজনের জন্য, যে এখন তার জীবনে নেই, কিন্তু মন থেকে কখনো হারায়নি।

তিন বছর আগে লাইব্রেরির সামনে প্রথম দেখা হয়েছিল মেঘলার সাথে। আরেফিন তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ওর হাত থেকে বই ফেলে দিয়েছিল। বই তুলতে গিয়ে চোখাচোখি—একটা মুহূর্ত, আর সেখানেই যেন সময় থমকে গিয়েছিল। মেঘলার চোখে ছিল একরাশ নির্ভরতা, আর হালকা এক হাসি, যা যেন আরেফিনের ভেতরটা আলোকিত করে দিয়েছিল।

সেই দিনের পর থেকে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গাঢ় হতে লাগল। একসাথে ক্লাসে যাওয়া, বই নিয়ে তর্ক, টিএসসিতে বিকেলের আড্ডা—সবকিছুতেই যেন মেঘলা ছিল এক আলাদা আলো। কিন্তু কখনো কেউ কাউকে বলা হয়নি ভালোবাসার কথা। যেন দুজনেই চেয়েছিল সময়টা আরো একটু ধীরে বয়ে যাক।

একদিন হঠাৎ মেঘলা জানাল—সে কানাডা যাচ্ছে মাস্টার্স করতে। খবরটা শুনে আরেফিনের বুকের ভেতর কেমন যেন ঝাঁপটা দিয়ে উঠল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। শুধু বলেছিল, “ভালো থেকো।”

মেঘলা চলে গেল। দূরত্ব বাড়ল, কিন্তু সম্পর্কের এক অদৃশ্য সুতোর টানটা রয়ে গেল। প্রতি বছর মেঘলা আরেফিনকে তার জন্মদিনে একটা ছোট্ট চিঠি পাঠাত—“ভালো থেকো, ফিরে আসব।” আরেফিন প্রতিবার সেই চিঠি পড়ত, আবার পুরোনো বইটার মাঝে রেখে দিত।

আজ তিন বছর পর, সেই টিএসসির চত্বরে হঠাৎ এক ছায়া এসে পড়ে আরেফিনের সামনে। চোখ তুলে দেখে—মেঘলা দাঁড়িয়ে। তার হাতে সেই পুরোনো বই, চোখে জল।

“আমি ফিরে এসেছি,” মেঘলা বলল নিচু গলায়।

আরেফিন কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি জানতাম তুমি ফিরবে।

 আমি অপেক্ষা করেছিলাম—তোমার জন্য।”

দুজনে দাঁড়িয়ে থাকে, শহরের কোলাহলের মাঝে। চারপাশে জীবন চলে নিজের গতিতে, কিন্তু তাদের জীবনের গল্প যেন তখনই নতুন করে শুরু হয়।

ভালোবাসা কখনো শব্দে মাপে না নিজেকে। কখনো বলা হয় না, শুধু অনুভব করা হয়। 

আর কিছু ভালোবাসা অপেক্ষার মাঝেই সবচেয়ে সুন্দর থাকে।

Comments

    Please login to post comment. Login