যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৩ মে, ২০২৫-এ সৌদি আরবের রিয়াদে কিং আবদুলআজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ ফোরামে এক ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতি পরামর্শ রাখেন যেন তারা নিজের শেকড় ভুলে না যায়, নিজের ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরেই সামনে এগিয়ে যায়। বিদেশী প্রেস্ক্রিপশনে নিজের সংস্কৃতি ধ্বংস করার মত আত্মঘাতী কাজ থেকেও সাবধান করে দেন তিনি।
তার বক্তব্যের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
"……..আজকের এই ঐতিহাসিক রাষ্ট্রীয় সফর যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মাঝে ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বজায় থাকা ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের সাড়ম্বর উদ্যাপন। ১৯৪৫ সালে যখন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট কিং সালমানের পিতা কিং আবদুল আজিজ-এর সঙ্গে ইউএসএস কুইন্সি জাহাজে সাক্ষাৎ করেন, তখন থেকেই মার্কিন-সৌদি সম্পর্ক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির একটি ভিত্তি হিসেবে গড়ে উঠেছে।
এই উপদ্বীপের অন্যান্য শহরগুলোতে — যেমন দুবাই, আবুধাবি, দোহার, মাসকাট — অবিশ্বাস্য রকমের রূপান্তর ঘটেছে। আমাদের চোখের সামনে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব অতীতের ক্লান্তিকর বিভেদ আর সংঘাতকে পেছনে ফেলে এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে যেখানে মধ্যপ্রাচ্যকে বিশৃঙ্খলার পরিবর্তে বাণিজ্যের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে; যেখানে সন্ত্রাস নয় বরং প্রযুক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে; এবং বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও মতাদর্শের মানুষ একত্রে শহর আর সভ্যতা নির্মাণ করে চলেছে — কিন্তু একে অপরকে ধ্বংস করে নয়, আমরা তা চাইও না।
বিশ্ববাসীর জন্য এটা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এই দুর্দান্ত পরিবর্তন কোনও পশ্চিমা হস্তক্ষেপকারীর মাধ্যমে হয়নি, বা আলিশান বিমানে চড়ে আসা কিছু মানুষের বক্তৃতা থেকেও আসেনি যে কীভাবে আপনারা জীবন যাপন করবেন কিংবা কীভাবে নিজের দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করবেন। না, রিয়াদ ও আবুধাবির এই ঝকঝকে বিস্ময়গুলো সৃষ্টি তথাকথিত নেশন-বিল্ডার, নব্য-রক্ষণশীল (নিওকন) কিংবা লিবারেল এনজিওদের দ্বারাও সৃষ্টি হয় নি — যারা কাবুল, বাগদাদ এবং আরও অনেক শহরের পিছনে উন্নয়নের নামে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেও ব্যর্থ হয়েছে।
বরং আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের জন্ম হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের হাতেই — যারা এখানেই জন্মেছেন, এখানেই বড় হয়েছেন এবং নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে নিজস্ব স্বপ্ন অনুসরণ করে নিজের পথ নিজেই নির্ধারণ করে নিয়েছেন। আপনারা যা করেছেন এটি সত্যিই অসাধারণ এক ব্যাপার।
তথাকথিত নেশন-বিল্ডাররা যতটা না গড়েছে, তার চেয়ে ধ্বংস করেছে বেশি। তারা এমন জটিল এক সমাজে হস্তক্ষেপ করেছে যার সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই ভালো ধারণা নেই। অথচ তারা আপনাদের জ্ঞান দিতে আসে কীভাবে কী করতে হবে যেখানে তাদের নিজেদেরই সেই জ্ঞান নেই।
নিজেদের ঐতিহ্যকে সমূলে উপড়ে ফেলার মাধ্যমে কখনো শান্তি, সমৃদ্ধি আর অগ্রগতি আসে নি, বরং আপনাদের জাতীয় ঐতিহ্যকে বরণ করে নেওয়ার মধ্য দিয়েই তা এসেছে। আমি সেই ঐতিহ্যের কথা বলছি, যাকে আপনারা এত ভালোবাসেন — এবং ভালোবাসেন বলেই তা আঁকড়ে ধরে শান্তি আর সমৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
আরবের চিরাচরিত ঐতিহ্য ধরে রেখেই আপনারা আধুনিক মিরাকল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এটাই সর্বোত্তম পন্থা।
