Posts

উপন্যাস

ছায়ার রাজত্ব

May 20, 2025

bidisha porosh noor

64
View

রাত তখন প্রায় সাড়ে তিনটা। শহরটা নীরব, এতটাই নীরব যে, ইট-পাথরের বুক চিরে হঠাৎ কুকুরের ডাকেও শরীর শিউরে ওঠে। ল্যাম্পপোস্টের আলো এসে পড়ছে ফাঁকা রাস্তায়, ঝাপসা কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা যেন কোনও মায়ার রাজত্ব। এই শহরের কেউ জানে না, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের অচেনা রাতটা পরিচিত এক দুঃস্বপ্নে বদলে যাবে।

নতুন একটা SUV ঢুকল শহরের এক প্রান্ত দিয়ে, গাড়ির জানালাটা আধা খোলা। গাড়ির ভেতরে বসে থাকা ছেলেটার চোখ যেন কুয়াশার থেকেও গাঢ়। সে কিছু বলে না, মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই — অথচ তার চারপাশ যেন কথা বলে। গাড়ির ড্রাইভার তাকিয়ে আছে রিয়ারভিউ মিররে, মুখে আতঙ্কের ছাপ।

— “স্যার, পৌঁছে গেছি। সামনে ভিলা।”

কোনো কথা বলল না ছেলেটা। গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়ল। কালো কোটের কলারটা সে একটু তুলে নিল, যেন কুয়াশার ভেতরেও নিজেকে আড়াল করতে চায়। চোখে সানগ্লাস, যদিও এখনো ভোর হয়নি। তার এই অদ্ভুত উপস্থিতি, সেই শান্ত অথচ কঠিন চোখের চাহনি— এক মুহূর্তে বুঝিয়ে দেয়, এই মানুষটার শরীরের রক্ত নরম নয়।

ভিলার নাম “Aurum Noire”— কালো আর সোনার মিশেলে সাজানো বিশাল এক রাজপ্রাসাদ। বাইরের গেট খুলতেই ছেলেটা ঢুকে গেল। বাড়ির এক প্রান্তে থাকা দারোয়ান নিচু গলায় বলে উঠল—

— “ঈশ্বর বাঁচাক আমাদের…”

কারণ সে জানে, এই শহরে “রাহীর ইন্তেজার” মানে মৃত্যুর শাস্তি অথবা জীবনের নিয়তি বদলে ফেলা।

কেটে পড়া সময়, অন্য এক শহর

নুসরাত ইসলাম ইভা — নামটা যতটা সাধারণ, ততটাই অস্বাভাবিক তার গল্প। সে এই শহরের সবচেয়ে ছোট্ট, নিঃসঙ্গ এক পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পোস্টেড হয়েছে গত দু’মাস। একজন নারী সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে তার জায়গা পাওয়াটা সহজ ছিল না। কিন্তু ইভা সহজ কিছু চায়ওনি কখনো। ছোটবেলা থেকেই বাবার নিখোঁজ হওয়া, মায়ের ছায়া হয়ে থাকা একটা সংসার, আর নিজের চোখে দেখা শহরের অন্ধকার — এই সব কিছু মিলেই তাকে বানিয়ে ফেলেছে এক খণ্ড আগুন।

সকাল ৬টা বাজতেই সে ইউনিফর্ম পরে আয়নার সামনে দাঁড়াল। নিজের চোখের দিকে তাকাল। ক্লান্তি, ঘুমহীনতা, আর মাথার ভেতর যেন হাজারটা প্রশ্ন। তার ডেস্কে রাখা একটা কেসফাইলের ওপরে লেখা— Case No: 1068 - Missing Girls in Sector 9
Status: Unsolved
Last updated: 7 months ago.

এই কেসটাই ইভার মাথার ভেতর গেঁথে আছে। শহরের সেই সব মেয়েরা যাদের খোঁজ কেউ রাখে না। পুলিশের নথিপত্রে শুধু সংখ্যা হয়ে পড়ে থাকে তারা। কিন্তু ইভার কাছে তারা ‘নাম’, তারা ‘চোখের জল’, তারা ‘বেঁচে থাকার অধিকার’।

আজ সকালটা অন্যরকম লাগছে তার কাছে। অজানা এক অস্বস্তি বুকের ভেতর খচখচ করছে। কফির কাপে চুমুক দিতে গিয়ে থেমে গেল। মনে হলো, কেউ তাকে দেখছে। চমকে ফিরে তাকাল জানালার দিকে। কেউ নেই। কিন্তু ইভা জানে, কেউ ছিল।

আবার ফিরে আসা — Aurum Noire

রাহীর কণ্ঠে কোনো শব্দ নেই। কিন্তু তার চোখে আজ অন্য রকম ঝড়। তার দেহরক্ষীরা সবাই জানে, সে যখন নীরব থাকে — তখনই সবচেয়ে বেশি বিপদ। Aurum Noire-এর সেক্রেট সুইটে ঢুকে সে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল। দেয়ালে একটা বড় পেইন্টিং— এক মেয়ের মুখ, চোখদুটি ঢাকা।

সে খুব আস্তে করে বলল—

— “তুই কোথায় হারিয়ে গেলি, অদৃশ্য আত্মা?”

তার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে নামটা জ্বলজ্বল করছে: CEO ALIF RAYHAN

রাহীর মুখের কোণায় একটা অস্পষ্ট হাসি ফুটে উঠল। ফোন ধরেই বলল—

— “শিকারে নামার সময় হয়ে গেছে।”

শেষ দৃশ্য — অন্ধকার সিঁড়ি, গোপন গুহা

সেই মুহূর্তে শহরের এক প্রান্তে, Sector 9-এর এক পরিত্যক্ত গুদামে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে এক মেয়ে। তার মুখে সেলোটেপ, চোখে আতঙ্ক আর চারপাশে রক্তের গন্ধ। একটা দরজা খুলে গেল। ভিতরে ঢুকল এক ছায়ামূর্তি।

সে ফিসফিস করে বলল—

— “শুরুটা এখানেই হবে। ‘ছায়ার রাজত্ব’-এর একমাত্র উত্তরাধিকারী ফিরে এসেছে…”

To be continued...

Comments

    Please login to post comment. Login