পর্ব - ১
দেখা সেই প্রথমবার

শহরের কোলাহল থেকে খানিকটা দূরে, ছোট্ট এক লাইব্রেরির দরজা ধীরে ধীরে খুলে গেল। জানালার ফাঁক গলে রোদ এসে পড়েছে কাঠের পুরোনো ডেস্কটার ওপর। বইয়ের গন্ধে ভরা ঘরটা যেন সময় থেমে আছে বহু বছর ধরেই।
রাফি, সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা এক তরুণ, সদ্য শহরে ফিরেছে গ্রামে থাকা দাদীর অসুস্থতার কারণে। শখ ছিল বই পড়া, আর গোপনে কবিতা লেখা। আজ অনেকদিন পর পুরনো সেই লাইব্রেরিতে ঢুকল সে—যেখানে একসময় তার শৈশব কেটেছে।
তখনই…

কোণার একটা টেবিলে একটা মেয়ে বসে, ঘন চুল মুখে ছড়িয়ে, চোখ দুটো বইয়ে ডুবে আছে। সাদা সালোয়ার, মাথায় হালকা নীল ওড়না—মেয়েটার ভঙ্গিতে যেন একধরনের শান্ত ঝড় বইছে।
রাফির চোখ আটকে গেল।
সে জানে না কেন, মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করল… যেন কেউ চেনা, যেন কোনো কবিতার পঙ্ক্তি ভুলে যাওয়া।
একটু সাহস করে এগিয়ে গিয়ে বলল,
"এই বইটা কি শেষ করেছেন?"
(তার হাতের ইশারায় মেয়েটার সামনে রাখা বইয়ের দিকে দেখাল সে)
মেয়েটি চোখ তুলে তাকাল—চোখে গভীরতা, ঠোঁটে হালকা হাসি।
"না, শুরুই করলাম আজ। তবে আপনি চাইলে পড়ার পরে দিতে পারি।"
তার গলায় ছিল নরম অথচ আত্মবিশ্বাসী সুর।
রাফি একটু হেসে বলল,
"তাহলে আমি অপেক্ষা করব। শুধু বইটার জন্য না… হয়তো আপনার গল্পটা জানার জন্যও।"
মেয়েটি এবার একটু চমকে হেসে ফেলল।
"আপনি সব পাঠকের মতো না, দেখছি।"
রাফি বলল,
"সব পাঠক কি এক রকম হয়? কেউ কেউ শুধু চোখ দিয়ে পড়ে, কেউ পড়ে মন দিয়ে।"
সেই মুহূর্তেই লাইব্রেরির পুরোনো দেয়াল যেন কিছু মনে রেখে দিল।
একটা নতুন গল্প শুরু হলো সেদিন—
একটা নীল ওড়না, একটা পুরোনো লাইব্রেরি, আর একজন কবি হৃদয়ের ছেলে…
চলবে….