১৯৯০ সাল। ভরা বর্ষাকাল। টানা তিনদিন ধরে আকাশ যেন কান্না থামাতে পারছে না। এমন এক রাতে, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যার কাঁপা কাঁপা আলোয় রাজীব সাইকেল চেপে ফিরছিল গ্রামের পথে। চারপাশ নিঃশব্দ। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল প্রাচীন উঁচু দেয়াল যেন কোনো পুরনো রহস্য গোপন করে রেখেছে।
এই পথটা সে সাধারণত এড়িয়ে চলত। কারণ দেয়ালের পেছনে অবস্থিত পরিত্যক্ত বিদ্যালয় আর তার পাশের ভগ্ন বাংলো নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়। তবে সেই রাতে বিকল্প কোনো পথ খোলা ছিল না।
বৃষ্টি আরও ঘন হয়ে এলো। রাজীব আশ্রয়ের খোঁজে বিদ্যালয়ের বারান্দায় গিয়ে উঠল। বাতাসে স্যাঁতসেঁতে ঘ্রাণ আর ভেজা কাঠের গন্ধ। হঠাৎ, কোথা থেকে যেন এক শিশুর কণ্ঠ—“আমাকে খুঁজে পেয়েছো?”
রাজীব চমকে তাকাল, কেউ নেই। আবার সেই কণ্ঠ—এবার ঘনিয়ে আসে পিছন থেকে।
সে ছুটে বেরিয়ে পড়ল, সাইকেল ছেড়ে। নীরব রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বাংলোর দিকে টান অনুভব করল অজানা কারণে। দরজাটা খুলেই ছিল। ভেতরে ঢুকতেই সব আলো নিভে গেল।
এক মুহূর্তে চারপাশ ধুধু অন্ধকার। নিঃশ্বাসের শব্দ, জল পড়ার টপটপ ধ্বনি আর সেই শিশুর হাসি মিলে এক ভয়ানক দুঃস্বপ্নের জন্ম দিলো।
তিন দিন পর, রাজীবের সাইকেল পাওয়া গেল বিদ্যালয়ের বারান্দায়। সে আর ফিরে আসেনি।