Posts

উপন্যাস

চিঠির আড়ালে

May 30, 2025

Md Forhad

55
View

অধ্যায় ১: আয়নুর পৃথিবী

দুপুরটা ছিল অদ্ভুত রকমের নীরব। গ্রামের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো দোতলা বাড়িটায় যেন সময় থমকে গিয়েছিল। রান্নাঘরের পেছনের উঠোনে বসে ছিল আয়নু, চোখেমুখে নির্লিপ্তি আর মনে একটা গভীর ভার।

পায়ের কাছে শুকনো পাতাগুলো এলোমেলো ছড়িয়ে ছিল। বাতাস মাঝে মাঝে এগুলো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, যেমনটা জীবনে ঘটে — কিছু স্মৃতি, কিছু সম্পর্ক হঠাৎ হারিয়ে যায়, বোঝাও যায় না ঠিক কোথায়।
আর আয়নু? সে এমন এক সম্পর্কের মাঝেই বড় হয়েছে, যেখানে ভালোবাসা ছিল, কিন্তু অসম ছিল সেটা। যেন তার প্রতি মায়ের ভালোবাসা বরফের মতো — ছুঁয়ে দেখা যায়, কিন্তু গলে না।

মা আজও তার ছোট ভাই রায়হানকে নিয়ে ব্যস্ত।
“তোর জামাটা শুকালো রে রায়হান! এসো গায়ে দেই,” বলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মা আদর করে ছেলেকে জামা পরিয়ে দিচ্ছে।

আয়নু চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। সেও তো এই বাড়িরই সন্তান। কিন্তু তার জন্য এমন আদর কবে এসেছিল, মনে পড়ে না।

রায়হান এখন শহরের কলেজে পড়ে। তার আলাদা ঘর, আলাদা থালা, মাছের বড় টুকরোটা সবসময় তার জন্য। আয়নু চুপ করে সব দেখে, সয়ে যায়, কারণ সে শিখে গেছে — মেয়েরা নালিশ করে না।

একটা সময় ছিল, যখন আয়নুও আদর চেয়েছিল। কাঁদলে মায়ের কোলে মুখ লুকোতে চাইত। কিন্তু তখন মা বলত, “তুমি বড় মেয়ে, সব কিছু শক্ত হয়ে নিতে শেখো।” আর আজ বড় হয়েও সে ছোট ভাইয়ের পাশে ছোট হয়ে থাকে — মায়ের চোখে।

সেদিন দুপুরে রান্নাঘরের পুরনো তাক পরিষ্কার করতে গিয়ে, আয়নুর হাত পড়ে একটা ধুলোমাখা কাঠের বাক্সে। সে ভাবছিল ফেলে দেবে। কিন্তু হঠাৎ চোখে পড়ল এক টুকরো চিঠি—একটা হলদে কাগজ, নীচু গলায় কেউ যেন তার নাম চিৎকার করে ডাকছে ভিতর থেকে।

চিঠির ওপরে লেখা:

“তুমি যাকে খুঁজছো, সে তোমার অনেক কাছেই আছে... কিন্তু তুমি চিনতে পারবে কি?”

আয়নুর চোখ কেঁপে উঠল। তার চারপাশের সব শব্দ যেন থেমে গেল। মায়ের গলার আওয়াজ, হাঁসের ডাক, বাতাসের শোঁ শোঁ — সব কিছু স্তব্ধ।

সে ধীরে ধীরে কাগজটা খুলল। ভেতরে মাত্র কয়েকটি লাইন:

“তুমি ভাবো তুমি একা।
অথচ কোনো এক জায়গায় কেউ তোমাকে দেখছে, জানছে, বুঝছে।
একদিন সে আসবে,
তোমার জীবন বদলে দেবে।
কিন্তু তার আগে,
তোমাকে জানতে হবে সত্যটা —
ভালোবাসা কেবল মুখের শব্দ নয়, এটা চোখে ধরা পড়ে না,
মনে টের পাওয়া যায়।
নিজের চারপাশটা দেখো,
যে ভালোবাসে, সে হয়তো তোমার কাছেই আছে।”
by: md forhad

আয়নুর বুকের ভেতর অজানা কাঁপুনি। কার লেখা এই চিঠি? কেউ তার জীবনের কষ্টগুলো জানে?
সে উঠে দাঁড়ায়। বাড়িটার দিকে তাকায় নতুন চোখে — যেন কোথাও কেউ লুকিয়ে আছে, যে তাকে দেখছে। কে সে?

তারপর… সেই রাতেই ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা।

আয়নু যখন ঘুমাচ্ছিল, হঠাৎ জানালায় একটা আওয়াজ হয়। জানালার ফাঁক দিয়ে সে দেখতে পায় একজন ছায়ামূর্তি। কিন্তু সে ভয় পায় না…
কারণ সেই ছায়া কাউকে মনে করায়।
তার ছোটবেলার স্মৃতি — যেখানে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরেছিল, মাথায় হাত রেখেছিল।

সে জানে না কেন, কিন্তু তার মনে হলো…
সেই “কে” সে… একদিন আবার ফিরে আসবে।

Comments

    Please login to post comment. Login