পোস্টস

প্রবন্ধ

মহানবী (সাঃ) এর মহানুভবতার ঘটনা

২৪ মে ২০২৪

জালাল উদ্দিন লস্কর

মূল লেখক জালাল উদ্দিন লস্কর

মহানবী (সাঃ) এর মহানুবভতার উদাহরণ এবং আজকের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা : জালাল উদ্দিন লস্কর 

 

১৪০০ বছর ধরে রক্ষিত খ্রিস্টান সন্ন্যাসীদের প্রতি নবীজির অঙ্গীকারনামা-

৬২৮ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট ক্যাথরিন গির্জার একজন প্রতিনিধি মহানবী (সা.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুরক্ষা প্রদানের অনুরোধ করেন। মহানবী (সা.) ওই প্রতিনিধিকে তার সম্প্রদায়ের বিশেষাধিকারের সংবলিত একটি অঙ্গীকারনামা প্রদান করেন। সেন্ট ক্যাথরিন গির্জা মিসরের সিনাই উপত্যকার পাদদেশে অবস্থিত। বেশ পুরনো হওয়ায় এটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষিত স্থান।

সেন্ট ক্যাথরিন গির্জায় প্রায় ১৪০০ বছর ধরে ধরে রক্ষিত আছে বহু প্রাচীন দলিল ও নথিপত্র। ধারণা করা হয়, ভ্যাটিকানের পর সেন্ট ক্যাথরিন প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত। সেখানেই আছে ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে লেখা সন্ন্যাসীদের উদ্দেশে লেখা মহানবী (সা.)-এর একটি চিঠির অনুলিপি। ঐতিহাসিক ওই অঙ্গীকারনামায় মহানবী (সা.) খ্রিস্টানদের বিশেষাধিকারের সনদ প্রদান করেছেন এবং মুসলিম সমাজে বসবাসকারী খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন। ঐতিহাসিক সেই অঙ্গীকারনামার অনুবাদ নিচে তুলে ধরা হলো-

‘এটি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা তাদের প্রতি, যারা চুক্তির অংশ হিসেবে খ্রিস্টবাদ ধারণ করে; তারা কাছের হোক বা দূরের আমরা তাদের সঙ্গে আছি। প্রকৃতপক্ষে আমি, দাসরা, সাহায্যকারী ও আমার অনুসারীরা তাদের রক্ষা করবে। কেননা খ্রিস্টানরা আমার নাগরিক। আল্লাহর কসম! আমি এমন সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে, যা তারা অপছন্দ করে। তাদের ওপর বিশেষ কোনো বিধি-নিষেধ থাকবে না। তাদের বিচারকদের চাকরিচ্যুত করা হবে না এবং তাদের সন্ন্যাসীদের গির্জাগুলো থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না’।

কেউ তাদের ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করবে না, ক্ষতিগ্রস্ত করবে না অথবা মুসলিমদের জন্য তা থেকে কোনো কিছু ছিনিয়ে আনবে না। কেউ এমনটি করলে সে আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করল এবং তার নবীর অবাধ্য হলো। নিশ্চয়ই তারা আমার মিত্র এবং তারা যেসব বিষয় ঘৃণা করে আমি তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা সনদ দিচ্ছি। কেউ তাদের ভ্রমণে বা যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করবে না; বরং মুসলিমরা তাদের জন্য যুদ্ধ করবে। কোনো খ্রিস্টান নারীর অনুমতি ছাড়া কোনো মুসলিম তাকে বিয়ে করতে পারবে না। (বিয়ের পর) প্রার্থনার জন্য তাকে চার্চে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না। খ্রিস্টানদের চার্চের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে। কেউ চার্চ সংস্কার বা তার পবিত্রতা রক্ষায় বাধা দেবে না। কোনো মুসলিম কিয়ামত পর্যন্ত এই অঙ্গীকারনামার অবাধ্য হবে না।’

পৃথিবীতে ভালোবাসা সবচেয়ে দামী--

৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর মুসলিমবাহিনী মক্কার নিকটস্থ বনু জুযায়মা গোত্রে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, সাহাবী খালিদ বিন ওয়ালিদ এর অধিনায়ক ছিলেন; মুসলিমগন সেখানে ছোটখাট একটি গণহত্যা সংঘটিত করে; এই হত্যাযজ্ঞে অজ্ঞাতনামা এক মজনু যুবকও নিহত হয়! 

 

ইসলামের ইতিহাস মতে: এই যুবকটির দুই হাত তার ঘাড়ের সাথে রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। সে মৃত্যুর ঠিক আগে মুসলিমদের অশ্বারোহী বাহিনীর সৈনিক, সাহাবি ইবনে আবু হাদরাদকে অনুরোধ করে: তিনি যেন তাকে সম্মুখে অগ্রসরমান ধৃত নারীদের কাছে নিয়ে যান; সেখানে তার কিছু প্রয়োজন আছে! প্রয়োজন শেষে তারা তাকে নিয়ে যা ইচ্ছা করতে পারে; ইবনে আবু হাদরাদ ছিলেন এই মজনু যুবকটির সমবয়সী। তিনি তাকে ধৃত নারীদের সামনে উপস্থিত করেন। 

যুবকটি সেখানে এক নারীর সামনে গিয়ে বলে: ‘আসলামি হুবাইশা আ’লা নফদেল আইশা’ এর অর্থ হলো: ‘আমার জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তুমি শান্তিতে থাকো, হে হুবাইশ।’ এরপর যুবকটি আরো কিছু পংক্তি কবিতা উচ্চারণ করে; এসব শুনে সেই তরুণী, যার নাম হুবাইশ, উত্তর দেয়: ‘হ্যাঁ, আমি তো তোমাকে আমার জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছি!’

এটুকু শোনার পর মজনু যুবকটি স্থির হয়, এরপর এই সাহসী যুবকটি মুসলমান সৈনিকদের কাছে ফিরে গিয়ে বলে: এবার তোমাদের যা ইচ্ছা করতে পারো। সাহাবী ইবনে আবু হাদরাদ যুবকটির দিকে এগিয়ে এসে তরবারি দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেয়। এর পরের ঘটনার বর্ণনা এসেছে এভাবে: ‘মেয়েটি দৌড়ে এসে নিহত যুবকটির উপর উপুড় হয়ে পড়লো, মৃতদেহটি চুম্বন করতে করতে কয়েকবার আর্তচিৎকার দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো’।

অজ্ঞাতনামা যুবকটি বনু জুযায়মা গোত্রের কেউ ছিল না। অভিযানের সময় সে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, হয়তো মেয়েটির সাথে দেখা করার জন্য, এবং একারণেই সে বন্দী হয়েছিল। তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হলে সে শুরুতেই তা প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীতে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যখন সাহাবীদের কাছে এই ঘটনাটি শুনতে পান, দুঃখিত হয়ে তিনি মন্তব্য করেন: ‘তোমাদের মধ্যে কি একজন দয়ার্দ্র হৃদয়ের লোকও নেই?’

বহু বর্ণনাকারীর সূত্রে এটি উল্লেখ করা হয়েছে ইবনে কাসিরের ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে।

উপরে বর্ণিত দুটো ঘটনা মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জীবনের অসংখ্য অজস্র মহানুভবতার  ছোট্ট দুটি উদাহরণ মাত্র।যা থেকে আমরা আমাদের প্রিয় নবীর চারিত্রিক মাধুর্য ও উদারতা সম্পর্কে জানতে পারি এবং উম্মতের মুহাম্মদ হিসাবে এখান থেকে আমাদের শেখার এবং বুঝার অনেক কিছুই রয়েছে।কিন্তু আমরা হয়তো সর্বোতভাবেই নবীর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও অনেক অনেক পিছিয়েই আছি।আমরা প্রিয় নবী(সাঃ) ধন সম্পদ স্ত্রী পুত্র কন্যা এবং সর্বোপরি জীবনের অধিক ভালোবাসতে না পারলে প্রকৃত মুমিন হতে পারবো না এটা যেমন জানি ঠিক তেমনি তার আদর্শ অনুসরন করতে না পারলে সেই ভালোবাসা পূর্নতা পাবে না সেটাও জানি।তদুপরি আমরা এ বিষয়টিতে যোজন যোজন পিছিয়েই আছি।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীতে আমাদের শিক্ষা হউক আমরা যেন দয়াল নবী(সাঃ) কে পূর্ন রূপে ভালোবাসতে পারি এবং তার জীবনাদর্শে আমাদের জীবনের পাথেয় করে ইহকাল ও পরকালে প্রভুত্ব কল্যানের অধিকারী হতে পারি।

মহান আল্লাহ আমাদের সেই সক্ষমতা দান করুন।