📖 উপন্যাস: চিঠির আড়ালে অধ্যায় ২: চিঠির ছায়া

📖 উপন্যাস: চিঠির আড়ালে

অধ্যায় ২: চিঠির ছায়া

দেয়ালে টিকটিকির হাঁটার শব্দ আর ঘড়ির কাঁটার টিকটিক — এই দুইটাই ছিল রাতে আয়নুর ঘরের একমাত্র সঙ্গী। কিন্তু আজ রাতটা যেন অন্যরকম। বুকের ভেতর কেমন চাপা একটা কাঁপুনি নিয়ে আয়নু চুপচাপ বসে চিঠিটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকে।

চিঠির প্রতিটি শব্দ যেন মনে গেঁথে বসেছে। “তুমি যাকে খুঁজছো, সে তোমার খুব কাছেই আছে…” — কে সে?

পরদিন সকালে, মা হঠাৎ রান্নাঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে বলে ওঠেন, “এই পুরনো কাবার্ডটা না জানি কত বছরের! এখনো ফেলে দেইনি কেন জানি!”

আয়নু চুপচাপ তাকায় সেই কাবার্ডটার দিকে — ওই তো, এখান থেকেই তো চিঠিটা পেয়েছিল। মনে হয়, ওটা শুধু কাঠ নয়, একটা গোপন কক্ষ। সেদিন সন্ধ্যায় আয়নু আবার যায় রান্নাঘরের দিকে, কাবার্ডটা দেখে। অদ্ভুতভাবে একটা কাঠের খোপ খোলা হয়ে ছিল — যেটা আগে সে কখনো খেয়াল করেনি।

ভেতরে হাত দিতেই ঠাণ্ডা একটা ধাতব জিনিস স্পর্শ করে… একটা প্রাচীন চাবি!

আয়নুর কাঁপা কাঁপা হাতে চাবিটা ধরে — কিন্তু সেটা কোন দরজার চাবি?

🌫️ সেই রাতেই ঘটে প্রথম অদ্ভুত ঘটনা…

রাত ৩টার সময় আয়নুর হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। জানালার বাইরে কুয়াশা। কিন্তু আশ্চর্য… উঠোনে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে! ছায়ার মতো, কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে আয়নুর ঘরের দিকেই তাকিয়ে আছে। সে না চাইতেই আয়নুর মুখ দিয়ে শব্দ বেরিয়ে আসে — “কে…?”

কিন্তু উত্তর মেলে না।

পরদিন সকালে মা বলেন, “আয়নু, আজ সকালে উঠোনে কে ছিল রে? যেন কাউকে চলে যেতে দেখলাম।”

আয়নুর শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে যায়।

স্কুল থেকে ফেরার সময় গ্রামের পুরনো লাইব্রেরির পাশে হঠাৎ চোখে পড়ে দেয়ালে আঁকা একটা ছবি — কল্পনা হতে পারে, কিন্তু ছবিটা যেন অনেকটা চিঠিতে লেখা সেই ছায়ামূর্তির মতোই।

এক বুড়ো লোক সেখানে এসে বলল, “এই ছবিটা বছর দশেক আগে একজন মেয়েই এঁকেছিল… তার নামও ছিল আয়নু…”

আয়নু হতবাক। “কিন্তু আমি তো এই প্রথম এখানে এসেছি…”

লোকটা চুপ। তারপর নিচু গলায় বলল, “জীবনের অনেক কিছু মনে পড়ে না রে মা… কিন্তু কিছু কিছু কথা লেখা থাকে অন্যভাবে… সময়ের চিঠির পাতায়…”

আয়নুর হাত দিয়ে চাবিটা নিচে পড়ে যায়।

Writter : MD Forhad

সেই রাতে আয়নু যখন পুরনো কাবার্ডের নিচের অংশে খোঁজ নেয়, একটা ছোট বাক্স পায়। তাতে পাওয়া যায় আরেকটি চিঠি।

এইবার চিঠিতে লেখা:

“তুমি শুধু মেয়ে নও… তুমি একজন গোপন পাহারাদার… যে অতীত জানে, কিন্তু মনে নেই। তুমি ঠিক পথে আছো — কিন্তু ভয় পেও না, কারণ দ্বিতীয় ছায়া আজ রাতেই আসবে…

📖 উপন্যাস: চিঠির আড়ালে

অধ্যায় ৩: ছায়ার পিছু পিছু

writter : MD Forhad

রাতের সেই চিঠিটা পড়ার পর আয়নু আর ঘুমাতে পারেনি। চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটাই লাইন—

“দ্বিতীয় ছায়া আজ রাতেই আসবে…”

কিন্তু পরদিন সকালে তার মনোযোগ একদম অন্য জায়গায় চলে যায়। গ্রামের হাটে মা'র সাথে যেতে হয়েছিল — কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, দূর থেকে একটা পরিচিত হুডি পরা ছেলেকে দেখে তার বুক ধড়াস করে ওঠে। চেহারাটা দেখা যাচ্ছিল না, তবু কোথা থেকে যেন চেনা লাগে। ছেলেটি এক ঝলকে তাকিয়ে চলে গেলো — যেন কিছুই হয়নি।

আয়নুর মনে হলো, সে মানুষটা তাকে ইচ্ছা করেই দেখলো, আবার এড়িয়েও গেলো।

আয়নু মাকে বলল, “আমি একটু সামনে গিয়ে দেখি তো…”

মা ভাবলো, দোকানপাট দেখবে। কিন্তু আয়নু আসলে ছেলেটির পিছু নিলো।

হাট ছাড়িয়ে ছেলেটি হাঁটতে লাগলো গ্রামের পুরনো পথ ধরে, যেটা লোকজন এখন খুব কমই ব্যবহার করে। আয়নু সাবধানে দূর থেকে ফলো করছিল, কিন্তু হঠাৎ ছেলেটি থেমে গেল। কোনো কিছু না বলেই মাথা ঘুরিয়ে পিছন দিকে তাকালো।

দুই চোখে চোখ পড়লো।

এক মুহূর্তে ছেলেটি পালিয়ে গেল জঙ্গলের দিকে — আর আয়নু ভাবলো, “এটা কী আমার কল্পনা, না পুরনো সেই…?”

জঙ্গলের পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আয়নু পুরনো স্কুল বিল্ডিংয়ের ধ্বংসাবশেষের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এই স্কুলটা ৮ বছর আগে আগুন লেগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আয়নুর মনে পড়ে, ওখানেই পড়তো তার ছেলেবেলার সবচেয়ে কাছের বন্ধু — ইজান। ইজান… যে অদ্ভুতভাবে একদিন হারিয়ে গিয়েছিল।

সেই পুরনো বিল্ডিংয়ের ভেতর হঠাৎ তার কানে আসে একটা সুর — কোনো এক সময় তারা দুজনেই গাইতো সেই সুরটা, “একটি পাতা ঝরার গল্প…”

শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় আয়নুর। এটা তো কেউ জানে না, কেবল ইজান!

সে চারপাশ খুঁজতে খুঁজতে একটি খাম পায় — অ র্ধেক পোড়া, কিন্তু ভেতরে লেখা এখনো পরিষ্কার:

“আয়নু, তুই এখনো হারাসনি। আমি আজও দেখি তোকে দূর থেকে। কিন্তু তুই ভুলে গেছিস… সব ভুলে গেছিস। আমায় চিনবি কিভাবে? আমি এখন ছায়া…”

রাতে ফিরে আয়নু বিছানায় শুয়ে শুধু একটা কথাই ভাবে:

"ইজান কি বেঁচে আছে? নাকি এটা কারও সাজানো খেলা? নাকি আমারই কল্পনা?"

ঘুম আসছিল না। আর তখনই জানালার পাশে ঠক ঠক শব্দ…

আয়নু উঠে গিয়ে পর্দা সরায় — কিন্তু কেউ নেই।

কেবল জানালায় লেখা একটি শব্দ, ঠান্ডা শিশিরে আঁকা—

"দেখা হবে...

comming next part,,,