📖 অধ্যায় ৫: ‌নির্জন কুয়া ও পরিচয়ের বিস্ফোরণ

📖 অধ্যায় ৫: ‌নির্জন কুয়া ও পরিচয়ের বিস্ফোরণ


 

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। আয়নু ছায়ার মতো বেরিয়ে পড়লো… একা। পেছনে ফিরে তাকানোর সাহস তার ছিল না, আর সামনে কুয়োর পথটা যেন অসীম অন্ধকারে ডুবে ছিল।

জীর্ণ স্কুল ভবনের পেছনে সেই কুয়োর কাছে পৌঁছাতেই তার গা ঘেমে উঠলো।

হঠাৎ—

একটা ঠান্ডা কণ্ঠ ভেসে আসে...

“তুই আসবি জানতাম… এবার শুন, আয়নু নয়, তোর নাম ছিল আরিয়া।”

কণ্ঠটা সেই কালো কোর্ট পরা লোকটার। সে সামনে আসে না— ছায়ার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে।

"তোর মা-বাবা তোকে নিজের মেয়ে বলে বড় করলেও, আসলে তুই ছিলি একটা ভয়ংকর সত্যের সাক্ষী।

তোকে বাঁচাতে গিয়েই ইজান মরেছিল… কিংবা বলা যায়, মরার অভিনয় করেছিল।”

আয়নুর চোখ ছানাবড়া।

“ইজান তো আমার ভাই না?”

"ভুল। ইজান ছিল তোর ছায়া… আর একমাত্র মানুষ যে জানতো তুই কে।”

কালো কোর্টের লোকটা আয়নুর হাতে তুলে দেয় একটা ছোট পেনড্রাইভ আর একটা ছবি। ছবিটায় একটা ছোট্ট মেয়ে— তার মুখটা অবিকল আয়নুর মতো, কিন্তু নাম লেখা:

"Aria R." জন্ম তারিখ, ঠিক ২২ বছর আগে, কিন্তু বাবা-মার নাম অজানা।

পেনড্রাইভে ছিল কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ।

একটিতে দেখা যায়, এক মহিলা— একজন সমাজকর্মী— আয়নুর বয়স যখন ৫, তখন তাকে নিয়ে এক ধনী পরিবারে দিয়ে যাচ্ছেন।

তাদের কথা স্পষ্ট শোনা যায়:

“তাকে তোমরা নিজের মেয়ে হিসেবে বড় করো। সত্যি কোনোদিন প্রকাশ পাবে না।”

আয়নুর মাথায় তখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তার মানে এতদিন ধরে সে যাদের নিজের বলে জানতো, তারা কি শুধুই প্রতারক?

“কিন্তু কেন? কেন আমার জীবনটা এমন?”

ছায়ার কণ্ঠ ভেসে আসে আবার—

"কারণ, তুই শুধু একজন সাধারণ মেয়ে না… তুই সেই সত্যের উত্তরাধিকারী, যা সমাজের মুখোশ খুলে দিতে পারে।”

এই ঘটনার পর থেকে আয়নু লক্ষ্য করে— কেউ যেন সবসময় ওর আশেপাশে আছে।

রাত হলে ছাদ থেকে কারা যেন নিচে তাকায়। ঘরের বাইরে রাখা জিনিসপত্র নড়ে যায়। তবে তার সঙ্গে অদ্ভুত এক নিরাপত্তাবোধও কাজ করে।

একদিন আয়নু লুকিয়ে দেখে— দূরে দাঁড়িয়ে একজন লোক, যার মুখ ঢাকা, কিন্তু চোখ দুটো… চোখ দুটো ইজানের মতোই।

শেষরাতে আয়নু ঘরে ফিরে দেখে, মা তার ঘরে বসে কাঁদছে।

“তুই সব জেনে গেছিস, তাই না?”

মা কাঁদতে কাঁদতে বলে—

“তুই আমাদের মেয়ে না… কিন্তু আমরা তোকে ভালোবেসেছিলাম। তবে সত্যিটা আমরা বলিনি।

কারণ, সত্য জানলেই তুই ফিরতে চাইবি, ওদের কাছে… ওরা তোকে ব্যবহার করত।”

“ওরা মানে কারা?”— আয়নুর গলা কেঁপে ওঠে।

“সমাজ… যারা তোকে এক প্রজেক্ট বানাতে চেয়েছিল।”

আয়নু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে তাকায়। সেই চোখে এখন আতঙ্ক নেই। আছে একটা সিদ্ধান্ত।

“আমি এখন আয়নু না… আমি আরিয়া। আর আমি এবার ফিরব, সত্যটা নিয়ে।”