এলাকায় নতুন। জুতার তলা ক্ষয় হওয়ার আগে মুচির অবস্থান জানা জরুরী। মুচির সন্ধানে বের হয়েছি। আসলে একটা জুতার সংস্কার দরকার। হৈমন্তী গল্পের অপু হৈমন্তীরে পাইয়া যেমন বলেছিল, পাইলাম, আমি তাহারে পাইলাম। ওরকম বলার মত কিছু নয় বটে। অবশেষে মুচির খোঁজ মিললো। এদিকে আকাশ কেঁদে কেটে একাকার। ঝরো ঝরো করে তর্কালংকারের ধারাপাত পড়ছে যেন। রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। সাথে সাফিন। রিকশা দাড় করিয়ে দৌড়ে গিয়ে জুতা বুঝিয়ে দিয়ে রানিং এর উপর চলে আসি।
ফেরার সময় দেখি সে ফুইটা গেছে। মানে ঝাঁপ বন্ধ। যদিও মুচির ঝাঁপের বদলে থাকে বাক্স। সেই বাক্স বন্ধ, আমার জুতা জোড়া সেখানে বন্দি।
পরের দিন যেতে পারলাম না। গেলাম তারও পরের দিন। বাক্সের উপর বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে মন লাগিয়ে কথা বলছে একজন। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঈশারা দিলাম। পাত্তাই দিচ্ছে না। ভাব দেখে মনে হচ্ছে দুনিয়া ভেসে গেলেও তার কিছু আসে যায় না। আমার হাতে কাপড়ের ব্যাগ। টাউন হল থেকে সাইজ করে আনলাম। সেটা দিয়ে টোকা মারা শুরু করলাম। আজব লোক। এরপরেও সে নিরুত্তর।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পণ্ডিতেরা এই বৃষ্টির নাম দিয়েছে ইলশেগুড়ি। ইলশেগুড়িতে আমি চচ্চড়ি ভাজা হচ্ছি। যাক অবশেষে জনাবের আলাপ শেষ।
-আপনি এখানে কাজ করেন? আমি জিজ্ঞেস করি।
-না, আমি তো এমনি বসে আছি। জনাবের উত্তর।
মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। ভদ্র লোকরে মুচি ভেবে বসে আছি। সোনারে ইমিটিশেনের মাল মনে করেছি। সরি মরি কইয়া পাশে দাঁড়াইলাম।
ওপাশে তালের বিচি বিক্রি করছে আরেক জন। তালের বিচি প্রমাণ দিচ্ছে ভাদ্র মাস আসছে। এই সময় মানুষের মাথা গরম থেকেও হট হয়ে যায়।
বিচি বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম, মুচি কই?
-আছিই তো। পাশে বসে থাকা আরেকজন আওয়াজ দিলো। তার আওয়াজ শুনে মনে হল ক্লাসে বন্ধুর হয়ে রোল কলে ইয়েস স্যার বলছে। না, সেই আসল লোক।
-কি চান? আমারে উল্টা জিজ্ঞেস করে।
-আরে মিয়া, এখানে বসে আছেন? আর আমি খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি।
সেদিন দৌড়ের উপর রানিং এ থাকায় তাঁকে দেখে চিনতে পারিনি। তার বেলাও একই ঘটনা ঘটেছে। সেও আমাকে চিনতে পারেনি। হিসেব বরাবর। কি দায় পড়েছে তার? আমারে চিনে রাখা লাগবে? আমি কোন হরিদাস পাল!!
-আরে ভাই, জুতা দিয়ে গেছিলাম? আর নিজের দোকান ছেড়ে বিচির দোকানে কি করেন? আর আমি এদিকে বাক্সে বসা লোকরে মুচি ডাইকা মাইর খাওয়ার যোগাড়! তাজমহলে ভুলে এক ইন্ডিয়ানকে বাংলাদেশী বলে ঝাড়ি খাইছিলাম। লেদার ইন্জিনিয়ারকে যদি মুচি বলে বসি, মাফ তিনি করবেন কি! নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
-ঠিকই আছে, ওই বেডারে কইলাম, এতক্ষণ ওখানে বসা যাবে না। কথাই শুনছে না। এলাকার নতুন পাণ্ডা মনে হয়। হের উপর রাগ কইরা তো ওইদিক গেছি গা।
ঠিক ঐ সময় সেই লোককে আমাদের দিকেই আসতে দেখি। সাথে আরও একজন। মনে হালকা আশংকা জাগল। একটু সময়ের জন্য দুইজনই চুপ করে যাই। দুইজনের ব্রেনই একই সময় একই সিগনাল পাঠাইছে, বোঝা যায়।
না, ওরা আমাদের দিকে আসে না। অন্যদিকে চলে যায়।
এইবার মুচির বাক্সের উপর বসে পড়ি। মুচিরে বলি দ্রুত কাজ শেষ করতে