পোস্টস

কবিতা

নয়টি দুর্বল কবিতা

২৪ মে ২০২৪

ঈয়ন

দৃষ্টিপাঠ
নতশিরে নিজের
গভীরে নিবিষ্ট
যে দৃষ্টি প্রগাঢ়;
নমিত সে চাহনি
পড়ে নিতে পারো।
অবনত হয়—
নত হতে আরো;
মিশে যাওয়ার
অপেক্ষায় রয়;
দ্রবীভূত মন কারো।

জীবন্মৃত
যখন কিছু ভাবতে আর ইচ্ছে না করে
তখনও মনমরা দিনগুলো মনে পড়ে;
গ্লানিবিষে মরেছি কতবার বাঁচার তরে
বহু মানুষই এক জীবনে বারবার মরে!

মৃত্যু
বুকের ভিতর শুনেছি যার পদধ্বনি
ক্রমাগত আসছে কাছে প্রতিক্ষণই
সে ছাড়া কেই-বা এত কাছে আসে
সদাই যে ঘন্টা বাজায় শ্বাসে শ্বাসে
তাল-বেতালে মনে বাজে আগমনী
আনচান তার সুরটা খুব কাছে শুনি
ডানা মেলে দূরাকাশে আনমনা চোখ
আর কতটা সময় বাকি করতে পরখ
না থাকার মানে বোঝার অপেক্ষাতে
অজানার স্বর গাঢ় হয় রাত-প্রভাতে
যেন শেষ হতে চায় সুদীর্ঘ গান কোনো
কোথাও যা কেউ সত্যি গায়নি কখনো

আফটারলাইফ
সহস্র ছায়াপথ পেরিয়ে আসা সংকেতের মতো হারিয়ে যাচ্ছি। ঘুম ভাঙার পর নিজেকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। সেচ্ছায় নড়তেও পারছি না। অথচ বাতাসে ভাসছি। কিছুতেই কিছু পাচ্ছি না, হাত-পা-চোখ-মুখ, কিচ্ছু না। একসময় মনে হলো ঘুমের মধ্যই হয়তো মরে গেছি। ভাবনাটা আসতে না আসতে নিজেকে বেমালুম ভুলে গেলাম। আমি কে তা কোনোভাবেই আর মনে করতে পারলাম না। শুধু টের পাচ্ছিলাম, দ্রুত গলে যাচ্ছে মন; বিস্ময় বা বেদনায়!

চিত্রকল্প
টেনে রাখা ভারি পর্দার ফাঁক দিয়ে দিনের আলো খুব একটা পৌঁছায় না শয়ন কক্ষে। তবে দক্ষিণের দুই দালানের মাঝের ফোঁকর গলে ঈষৎ হওয়া আসে। যে কারণে সেদিকের বারান্দার দরজাটা সদা খোলাই থাকে, এখনো আছে। গত চারদিন ধরে এই ঘরে একা একাই নিজেকে পাহাড়া দিচ্ছি। একটু নড়িনি। অথচ অজস্র বার বেজে বেজে সব শক্তি খুইয়ে কোমায় চলে যাওয়া কথাযন্ত্রের কাঁচে ক্রমাগত নড়ছে কায়ার প্রতিবিম্ব। তামাম রক্ত এসে জমেছে দু’পায়ে। গত রাতে মূলাধার বেয়ে বের হওয়া বর্জ্যে নষ্ট হয়েছে পরিধেয় পোশাক। তার আগে নাক দিয়ে বেড়িয়ে গেছে মাথার সব। গোঁফেও মগজ লেগে আছে। প্রতিটি কোষে সক্রিয় হয়েছে সহস্র শূককীট। যেহেতু আর প্রতিবেশী বা বন্ধু-স্বজন ডাকার ক্ষমতা নাই, সেহেতু অপেক্ষায় আছি আরো পচে দুর্গন্ধ ছড়ানোর। নয়ত ঝুলেই থাকতে হবে যে। মেঝে থেকে ঠিক দু’হাত উপরে আমার বেগুনী দেহটা এখন ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো দুলছে। 

বধভেদ
কেবল কোরবানির ঈদেই নয়,
বছর জুড়ে গ্রাম থেকে শহরে
জবাই হতে আসে অজস্র প্রাণ।
যার মধ্যে গরু, ছাগল, এমনকি
মহিষেরাও নিমেষে মুক্তি পায়!
শুধু মানুষ কাটা হয় খুব ধীরে—
রসিয়ে রসিয়ে তাদের জান
নিংড়ে খায় বিবিধ বিজ্ঞান।

ঘ্রাণ
শীতগন্ধা ছাতিম ও হিজলের
বর্ষাতুর সুবাসের ব্যবচ্ছেদ
করতে করতে যখন মনে পড়ে
মৃত কুকুর বা বিড়ালের চেয়ে
জ্যান্ত মানুষ পঁচা গন্ধের তীব্রতা
কত বেশি তখন নিজের ঘ্রাণ
সহ্য করি কী করে তা—
বুঝে নিতে খুঁড়ে যাই মম
যাবতীয় টিকে থাকার কৌশল
তামাম ব্যস্ততায় টেনে ছেদ
থাকি অন্তরের অন্দরে তাকিয়ে

এজমালি
প্রতিটি মানুষের মন
লুকিয়ে রাখে যে বন
বিচিত্র রঙ ও পাহাড়
তার বিবর্ণতার ভার
বইতে পারে কি কেউ
সইতে পারে কে ঢেউ
নিরাকার সরলতার—
মৃদু মৌসুমী হাওয়া;
না চাইতেই পাওয়া
অবসাদের হিমবাহ
বা মা পাখির প্রদাহ—
ঘোচাতে পারে সে জন
যার ধীরায়নের ক্ষণ
জানে সব সত্তার সত্য
আদতে যা একীভূত
প্রেম দরিয়ার মতো
প্রবাহিত হর্ষ-বিষাদ;
পরমের চরম সাধ—
আশ্রিত সুবর্ণ ক্ষতও
সভ্যতার আয়ুর ঋণ;
সদাই তা খুঁড়ছে খাদ
সুচতুর— সার্বজনীন!

রোদন
বৃক্ষহীন পাথুরে উপত্যকায় বিকশিত
জন্মান্ধ কবির মাতাল মাদলের তালে
কেঁপে কেঁপে কেঁদে উঠলে নদী,
—সহস্র সেতার হয়ে বাজে
দুনিয়ার শেষ জলদস্যু মন;
আর ঠিক তখনই কোথাও
উদাসী সুরের বরষায়—
পলির মতো ভেসে যায় কথা,
নৈঃশব্দের বনে উড়ে যাওয়া
নামহীন রাতপাখির বুকেও
—খা খা করে ওঠে নীরব ক্রন্দন।..