📖 উপন্যাস: চিঠির আড়ালে অধ্যায় 7: অজানা দরজার ওপারে

📖 উপন্যাস: চিঠির আড়ালে
                                                                                                           অধ্যায় 7: অজানা দরজার ওপারে

পেছনের কুয়া পেরিয়ে আরও গভীরে নামতেই আয়নুর চারপাশে হালকা কুয়াশার মতো ধোঁয়া জমে উঠল। পায়ে পায়ে নামতে নামতে সে থমকে দাঁড়াল—সামনে ছড়িয়ে আছে এক গোপন সুড়ঙ্গপথ। দেয়ালে খোদাই করা রয়েছে বিচিত্র কিছু প্রতীক—যেন অজানা কোনো সভ্যতার চিহ্ন। আয়নুর বুক ধকধক করছে। হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেন একটা ছায়া হেলে পড়ে—কালো কোর্ট পরা সেই লোকটা।

লোকটা কিছু বলেনি। শুধু একটা ছোট্ট চিরকুট এগিয়ে দিল তার দিকে।

চিরকুটে লেখা—

“তুমি আয়নু নও। প্রকৃত নামের পেছনেই লুকিয়ে রয়েছে সত্য। ‘JANTRA’ থেকে পালানোর সময় এসেছে। আর সময় নেই।”

আয়নুর কাঁধ ভারি হয়ে এল। তার মনে হলো যেন এই মুহূর্তেই মাথার ভেতরে কেউ একের পর এক দরজা খুলে দিচ্ছে। হঠাৎ করে কিছু পুরনো স্মৃতি ফিরে এলো—ছোটবেলায় একটা ঘরে বন্দি থাকার টুকরো টুকরো চিত্র, বাবার চোখের ভীতু চাউনি, আর মায়ের কান্না চেপে রাখা শব্দ।

সে মুখ তুলতেই লোকটা অদৃশ্য। কিন্তু তার চোখে-মুখে স্পষ্ট লেখা—সত্য থেকে আর পলায়ন নয়।

Project JANTRA:

সেই রাতে সে নিজের ঘরে ফিরে এসে ইন্টারনেটে খোঁজ শুরু করল “Project JANTRA” নিয়ে। কিন্তু কিছুই পেল না—কোনো তথ্য নেই, কোনো ইতিহাস নেই। যেন এটা একটা কাল্পনিক জিনিস।

তবে হঠাৎ করেই তার মেইলে একটা অচেনা ঠিকানা থেকে একটা ভিডিও আসে।

ভিডিও খুলতেই ভেসে উঠল কিছু ঘোলাটে ফুটেজ— একটা ঘরের ভেতরে কয়েকজন কিশোরী বসে আছে একরকমের পেশেন্ট গাউন পরে। তারা কারো সাথেই কথা বলছে না, শুধু একভাবে তাকিয়ে আছে ক্যামেরার দিকে। আর পিছনের কাচের জানালার ওপারে দেখা যাচ্ছে—

ইজান।

কিন্তু ইজান যে আয়নুর ভাই, এটা তখনই বোঝা যেত না। মুখে মুখোশ, চোখে ভয়। তবে কণ্ঠস্বরে আয়নুর গা শিউরে উঠল।

"আরিয়া, তুই যদি শুনিস, জানিস—ওরা তোকে বলবে তুই আয়নু। কিন্তু ওটাই তাদের মিথ্যে খেলা। তুই জানিস না, তোর অস্তিত্বটা কাকে ভয় পাইয়ে দেয়। সত্যির খোঁজ চালিয়ে যা, আমি পাশে আছি।"

আরিয়া?

আয়নু তখন চুপ করে বসে ছিল বিছানায়। কান্না এসে গলা আটকে দিচ্ছিল। তার নাম তাহলে আয়নু নয়? আরিয়া?

পরদিন সকালে আয়নু তার মায়ের ঘরে গিয়ে দেখে, মা আয়নুর শৈশবের অ্যালবাম পুড়িয়ে ফেলছে। আয়নু কিছু না বলেই হাত থেকে ছবিগুলো ছিনিয়ে নেয়। সেখানে একটা ছবির পেছনে লেখা— “আরিয়া (প্রোজেক্ট কোড 09A)”

সব কিছু যেন আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ছে তার চারপাশে।

তবে সে থামবে না।

বাবা-মা কিছু লুকিয়েছে, সমাজের এই 'প্রজেক্ট' কিছু ভয়াবহ পরিকল্পনা করছে, আর ইজান—সে বেঁচে আছে। আর অন্ধকারে থেকে, এখনও তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।

রাতে আয়নু গোপনে বের হয়, হাতে একটা পুরনো চিঠি, আর বুকভরা প্রশ্ন। সে চলে যায় সেই কুয়ার পেছনের সুড়ঙ্গপথে। দেয়ালের ছায়ায় আবার দাঁড়িয়ে থাকে সেই কালো কোর্ট পরা লোকটা।

এইবার লোকটা বলে ওঠে:

"তুমি যা জানতে চলেছো, তার পরিণতি ভয়ংকর। প্রস্তুত তো?"

আয়নু জবাব দেয়: