নতুন জীবনের শুরু
বিয়ের পর তিথি আর আরিফ নতুন একটি ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করলো। বাসাটি খুব বড় ছিল না, কিন্তু সেই চার দেয়ালের মাঝেই তাদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো বাসা বাঁধতে শুরু করলো।
প্রতিদিন সকালে তিথি নাস্তা বানায়, আরিফ ডেস্কে বসে লেখে। সন্ধ্যায় দুজন একসাথে ছাদে বসে চা খায়। আরিফ তিথিকে নতুন কবিতা পড়ে শোনায়, আর তিথি মুগ্ধ হয়ে শুনে যায়।
তিথি মাঝে মাঝে ভাবে, এত শান্তি কি সত্যি সম্ভব? বৃষ্টির শব্দে, আর চায়ের কাপে যে ভালোবাসার ছোঁয়া আছে, সেটা যেন ছুঁয়ে যায় তার আত্মা।
২. সংসারের বাস্তবতা
কিন্তু সব গল্প কি শুধু মিষ্টির মত হয়?
কিছুদিন পর আরিফের লেখা নিয়ে চাপ বাড়তে থাকে। প্রকাশকের সময়, টার্গেট, আয় না হওয়া—এসব নিয়ে সে চিন্তিত থাকে। তিথি তার মতো করে সাহায্য করতে চায়, কিন্তু আরিফ হয়ে পড়ে চুপচাপ, রুক্ষ।
একদিন তিথি বললো,
“আরিফ, আমি যদি চাকরিটা ছেড়ে দেই, তুমি একা সামলাতে পারবে তো?”
আরিফ বিরক্ত হয়ে বললো,
“তুমি না বুঝলে ভালো, তিথি। আমি চাই না তুমি সব ছেড়ে দাও আমার জন্য।”
তিথি ব্যথা পায়। একসময় যেই ছেলেটা তার নীরব ভালোবাসার আশ্রয় ছিল, সে এখন যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছে।
৩. দূরত্ব বাড়ে
দিনের পর দিন কথা কমে আসে। চায়ের কাপ থাকে, ছাদ থাকে, কিন্তু কথা আর থাকে না।
তিথি বুঝতে পারে, ভালোবাসা একবার পেলেই শেষ নয়, তা ধরে রাখতে হয়—সহমর্মিতা, সময়, আর বোঝাপড়ার মাধ্যমে।
একদিন তিথি ডায়েরিতে লিখে রাখে:
“তুমি কাছে আছো, তবু বড় দূরে। আজও আমি তোমার অপেক্ষায়।”
৪. ভুল বোঝাবুঝির শেষ
এক সন্ধ্যায় ঝড় উঠেছে। বিদ্যুৎ নেই। আরিফ ডেস্কে বসে, তিথি জানালার ধারে। হঠাৎ আরিফ উঠে এসে তিথির পাশে বসে বলে,
“তিথি, আমি ভুল করেছি। আমি চেয়েছিলাম তোমাকে পৃথিবীর সব সুখ দিতে, কিন্তু বুঝিনি—তুমি শুধু আমাকে চেয়েছিলে, আমার সময়, আমার ভালোবাসা।”
তিথি চুপচাপ কাঁদতে থাকে।
আরিফ তার হাত ধরে বলে,
“আজ থেকে আবার শুরু করি?”
তিথি মাথা নাড়ে।
“আমরা কখনো থামিনি, আরিফ। মাঝখানে শুধু একটু হারিয়ে গিয়েছিলাম।”
৫. পুনরায় একসাথে
পরদিন সকালে আরিফ প্রথমবারের মত তিথিকে নিয়ে তার লেখার অনুষ্ঠানে যায়। মঞ্চে উঠে সে বলে,
“আমার জীবনের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য—তিথির জন্য। ভালোবাসা যদি শব্দ হয়, সে আমার ভাষা।”
তিথি দর্শকসারিতে বসে চোখ মুছে।
এই তো তার আরিফ, যে ভালোবাসে নিরবে, গভীরে—আর সে জানে, সে আজীবন এই ভালোবাসার অপেক্ষায় থাকতে রাজি।
