দুপুরে ক্যান্টিনে খেতে বসলে মনে হয় 'ফুড কনফারেন্স' এ আছি।
যদিও আবুল মনসুর আহমেদের 'ফুড কনফারেন্স' এর সাথে এর কোন মিল নেই। ভবনে প্রজাতন্ত্রের কত কর্মচারি, দরকার ছাড়া কে কার রুমে যায়। ক্যান্টিনে খেতে আসলে অনেকের সাথেদেখা হয়। টুকটাক আলাপও হয়।
সিনিয়রের সাথে একই টেবিলে বসি। কোন দিন খাওয়া শেষে শুনি তিনি বিল দিয়ে দিয়েছেন। আরেকদিন জুনিয়রের সাথে বসেছি। পরে ভালো কোথাও খাওয়ানোর উছিলায় বিল দিয়ে দেয়।ঢাকার বাইরে থেকে এসে বিল দেয়। মুখে যদিও বলি, বিল দিয়েন না/দিও ন, তবুও খুব জোর করে দিলে মন্দ লাগে না। এরপর কোন কোন দিন আমি দিই। তবে অনেকেই বলেছে ক্যান্টিনের আদি নিয়মই হল, হিজ হিজ হুজ হুজ। মন্দ নয়।
খেতে বসলে আলাপ হয়। এরকম একজনের সাথে আলাপ হচ্ছে। সে অনেক দিন ফিল্ডে কাজ করেছে। সম্প্রতি ঢাকায় পোস্টিং হয়েছে। খুব কর্মব্যস্ত জীবনে হঠাৎ করে ব্যস্ততা কমে আসে। চারপাশ কেমন সুনশান নীরবতায় ঢেকে যায়। অথচ একটা সময় ছিল। দিন নেই, রাত নেই। সাক্ষাৎ, ফোন। অভাব, অভিযোগ। এখন কারও কিছুরই অভাব নেই। কারও কিছুরই দরকার নেই।
মনে পড়ে। পুরাণ কথা। পরীক্ষা এলেই সিনেমা দেখার প্রতি, টুয়েন্টি নাইন খেলার প্রতি, পড়াশুনা বাদে অন্য যা কিছু আছে তার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যেত বহু গুণ। মনে হত পরীক্ষা শেষ হলে চুটিয়ে সিনেমা দেখবো, ৩ ঘণ্টা ফুটবল খেলবো। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হলে কিছুই করা হত না। করবোই বা কি করে! কোন কিছুই তো ভালো লাগে না। মনের এসব কথা চেপে গেলাম।
সেই কলিগকে জিজ্ঞেস করলাম, কমল হাসানের পুষ্পক দেখেছো? সে জানায় আল্লুঅর্জুনের পুস্পা দেখেছে। এখন আল্লুদের যুগ। পোলাপাইন চিনলে শ্রুতি হাসানকে চিনতে পারে, তার মেগা বস বাপকে চিনবে না, এটাই স্বাভাবিক। যা হোক। কমল হাসানের পুষ্পক সিনেমায় তিনি এক ধনীর জীবন ছিনতাই করে ফেলেন। কিন্তু সেই জীবনে গিয়ে তার ভালো লাগে না। কারণ আজীবন বস্তির কোলাহলে ঘুমিয়ে যার অভ্যাস, নির্জন পরিবেশে একদম ঘুম আসে না। শেষে
কমল হাসান টেপ রেকর্ডারে বস্তির সাউন্ড ধারণ করে ঘুমের আয়োজন করে।
তাঁকে বললাম, তুমিও সেই পথ বেছে নিতে পারো। যেখানে ব্যস্ততা আছে, সেখানে ঝাঁপ দিতে পারো। একাকীত্ব কোথায় পালিয়ে যাবে!! দিশা পাবে না।
এরপর দুইজনই হাসলাম।
এরপর কোন এক সময় হিসেব করে দেখলাম, এই গল্প তার একার নয়। অনেকের। এমনকি আমারও হতে পারে।