Posts

ভ্রমণ

পিকিং থেকে ওয়েনজু: চীন ভ্রমণের স্মৃতিকথা (পর্ব ১)

June 22, 2025

রাশিক তাহির

154
View

১. ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার গল্প 

জুনের ৯ তারিখে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের রাত ১০.১০- এর টিকিট কেটেছিলাম আমরা। গন্তব্য– বেইজিংয়। ঐতিহাসিকভাবে শহরটি পিকিং নামেও পরিচিত। ৫ ঘন্টার ফ্লাইটে রাতের ডিনার পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে ভয়াবহ অনিশ্চয়তায় ভুগছিলাম আমি আর বাবা। টিকিটে মিল হিসেবে লেখা ছিল 'রিফ্রেশমেন্ট'। অন্যদিকে বিমানের বোর্ডিং শুরু হয় ফ্লাইটের প্রায় ৪০ মিনিট পূর্বে। ইমিগ্রেশনের মত একটা জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও সময় লাগে অনেকক্ষণ। তাই বাসা থেকেও বের হতে হয় অনেক আগেই। দেশের বাইরে যারা প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন, তারা প্রায় সকলেই এই বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত। এসব কিছু বিবেচনা করেই আমাদের মাথায় 'কতক্ষণ যে না খেয়ে থাকতে হবে'– এমন সন্দেহের ভূত চাপে।

তাই হাতে বেশ সময় নিয়েই বের হয়েছিলাম আমরা। ভেবেছিলাম বিমানবন্দরে পৌঁছে লাউঞ্জ থেকে কিছু খেয়ে নিবো। এছাড়াও বন্দর থেকে কার্ড এনডোর্সমেন্ট ও ডাটা রোমিং করে নেওয়ার মত কিছু কাজও বাকি ছিল। সব মিলিয়ে হাতে ঘন্টা তিনেক সময় থাকলে প্রতিটি কাজ-ই সম্পন্ন করা সম্ভব।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে বেশিক্ষণ সময় লাগে না। বাসা থেকে বের হলাম সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। কিন্তু লাভ হলো না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট। একইদিনে এবং প্রায় একই সময়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুস লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। তাই টোল প্লাজার কর্মীরা টোল না নিয়েই গাড়িগুলো দাঁড় করিয়ে রেখেছে। প্রধান উপদেষ্টা পার হয়ে গেলে টোল নিয়ে গাড়ি ছাড়বে। আমি বহু আগে থেকে-ই ভিআইপি মুভমেন্টের ঘোর বিরোধী। বাংলাদেশের জনগণের অর্থে তৈরি রাস্তা দিয়ে জনগণের অর্থে কেনা একাধিক সরকারি গাড়িতে করে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রধান নাকি জনগনকে-ই রাস্তায় আটকে রেখে নিজেরা নির্বিঘ্নে চলাচল করবে।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলের ভিআইপি মুভমেন্টগুলোও অত্যন্ত ভয়াবহ ছিল। তার এবং তার মন্ত্রীদের চলাচলের জন্য এমবুল্যান্স পর্যন্ত আটকে রাখতো পুলিশ। অবশ্য শেখ হাসিনার সরকার যেহেতু জনগণের নির্বাচিত সরকার ছিল না, তাই সে জনবিরোধী এই ভিআইপি মুভমেন্ট করবে– সেটাই স্বাভাবিক। পরক্ষণেই একটা স্মৃতিচারণ করলাম। হাসিনার পতন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিন পরেই ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার গাড়িবহরের একটি ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ড. ইউনুস রাষ্ট্রীয় সিকিউরিটি প্রটোকল ব্যবহার করলেও সে তার গাড়িবহর নিয়ে জ্যামে দাঁড়িয়ে আছেন। কোন ভিআইপি মুভমেন্ট করছেন না। এই ভিডিও নিয়ে কতই না রোমান্টিসিজম হয়েছিল সে সময়ে।

যাই হোক। আমি ভাবলাম চীনে গিয়ে আমি এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করবো। চীনেও কী আমাদের মত ভিআইপি মুভমেন্ট হয়? আমি যদি এই স্বল্প সময়ে ভিআইপি মুভমেন্ট নাও দেখতে পাই, চীনা কারো কাছ থেকে এই বিষয়ে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো।

বিমানবন্দরে গিয়ে পৌঁছাতে আমাদের দেরী হলো। বোর্ডিং পাস নেওয়া, ইমিগ্রেশন পার করা, কার্ড এনফোর্সমেন্ট আর ডাটা রোমিং করতে করতে আরো সময় গেলো। এদিকে এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশি কর্মকর্তারা আমাদেরকে ক্রমাগত তাড়া দিতে থাকলো। আমরা লাউঞ্জে বসলাম ঠিক-ই, কিন্তু ভালোভাবে খেতে পারলাম না। সময়ের অভাবে। লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে প্লেনে বোর্ডিংয়ের আগের সিকিউরিটি পোস্টে গেলাম। নিজেদের নিরাপদ যাত্রী হিসেবে প্রমাণ করে উঠে গেলাম প্লেনে।

এবারের বিদেশ যাত্রায় আমার সফরসঙ্গী হলেন প্রতিবারের মতই আমার মা-বাবা। নতুন করে সফরসঙ্গী হিসেবে পেলাম বাবার চাচাতো ভাই মামুন, অর্থাৎ আমার চাচা, তার স্ত্রী রোজি চাচী, তাদের পুত্র ফারদুন এবং কন্যা জুহাকে। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ১০.১০ বাজতেই প্লেন রানওয়ের দিকে ছোটা শুরু করলো। তারপরের দশ মিনিটেই চিলের মত উড়ে গেলো আকাশে। এক ব্যাখ্যাতীত উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হলো চীন যাত্রা। প্রতি ঘন্টায় ৩৩০ কিলোমিটার বেগে চল্লিশ হাজার ফুট উচ্চতায় ছুটে চললাম নতুন কিছুর দিকে– চীনের অজানা জ্ঞান-দর্শন, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং সমাজের দিকে।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kazi Eshita 4 months ago

    কতক্ষন পর টোল দিয়ে ছাড়া পেয়েছিলেন?