কাওরান বাজারে ঢুকে পড়েছি। মুরগীর আড়তে। ৬ টা কক অর্ডার দিয়েছি।
সকালে একজন গুরুত্বপুর্ন কর্তার সাথে মিটিং ছিল। গতকাল সেই মিটিং ফিক্সড হয়েছে। দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পৌঁছে গেছি।
তখন কর্তার সহকারী জানালেন, আজকে মিটিং হচ্ছে না।
বাসায় বাজার নেই। গতকাল কোন রকমে চলে গেছে। আজকে বাজার না করলেই নয়। অনেক দিন ফ্রিজ নষ্ট ছিল। অবশেষে ঠিক করা গেছে। কিন্তু বাজার করা হয়নি। বর্তমানে আমার সাম্রাজ্যে আমি অধিপতি, আমিই প্রজা। রিয়েল ওয়ান ম্যান শো।
নুর নবীকে বললাম, কাওরান বাজারে চলেন। মনে মনে বলি, বাহির তো এলোমেলোই, অন্তত ঘর সামলাই। আর আপনারা তো জানেন, ঘর সামলানো চাট্টি খানা কথা নয়।
এই সময়ে এক ট্রেন জার্নির কথা মনে পড়লো। ঠিক জার্নির কথা নয়, মনে পড়লো ট্রেনের টয়লেটের কথা। পার্বতীপুর থেকে ঢাকা যাচ্ছি। লম্বা জার্নি। এক সময় বাথরুম পেলো, গেলাম সারতে।
ট্রেনে ইয়ে করা বেশ কঠিন। ট্রেন কখনও ডানে বামে দুলতে থাকে, কখনও সামনে পিছনে। কখনও কখনও উপর নিচ দোল দোল দুলুনিও দেয়।
সেন্ট্রাল আইভরি কোস্টে জাউলি নামে একধরনের নাচের তাল আছে। খুব কঠিন। এই দেশের ট্রেনের বাথরুমে বসে ঠিকঠাক মত সারতে যে তাল মিলাতে হয়, সেটা আন্তর্জাতিক তাল কর্তৃপক্ষ জানে না। জানলে এতদিনে অন্তত নতুন একটা নাচের তালের জন্ম হতে পারতো।
অনেক কসরত করে সারলাম। এর মানে দাঁড়ায়, আমাদের ট্রেনিং দিলে জাউলি পাশ করতে পারবো। বের হবো। একটা লেখায় চোখ আটকে গেলো।
'আপনি যতই বীর পুরুষ হোন, এখানে আসলে পাছার কাপড় খুলতেই হবে।'
হাসি আর ধরে রাখতে পারলাম না। জীবনে বহু দেয়াল লিখন পড়েছি, এত হাস্যরস কেউ উৎপাদন করতে পারেনি। নোবেল কমিটির উচিৎ এই পাছার কাপড় খোলার উদ্ভাবককে খুঁজে বের করা। নোবেল কমিটি তা না করে খুঁজে পেয়েছে ট্রাম্পরে। দেখুন নোবেল কমিটির কাণ্ড। ট্রেনের বাথরুমে বাথরুমে মার খেয়ে যাচ্ছে উদ্ভাবন। বর্তমানে মানবতার এই হাল। ছাগল দিয়েই হাল চাষ চলছে।
ট্রেনের টয়লেট নিয়ে আরও কিছু জোকস জানি। আপনারা চাইলে সেখান থেকে একটা শুনাতে পারি।
ট্রেনের টয়লেট থেকে ঘন ঘন বদনা চুরি হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ শেকল দিয়ে বাঁধার সিদ্ধান্ত নিল।
এক লোক টয়লেট সারার পর দেখে, বদনা শেকল দিয়ে বাধা। কোনভাবে সেটাকে কাছে নিয়ে পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। টয়লেটের ভিতরে অভিযোগ নাম্বার আছে। সেখানে বসেই কমপ্লেইন দিলেন।
'শিকল এত ছোট, বদনা আমার পাছা পর্যন্ত আসে না। এটা আপনারা কি করলেন?'
'বদনা না আসুক, আপনি ও আপনার পাছা তো সেই পর্যন্ত যেতে পারেন।'
বেশ তাড়াতাড়িই রিপ্লাই এলো। এরপর কি হয়েছে সেটা অবশ্য জানা নেই।
ভাইয়েরা, অতীত নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করে লাভ নেই। গন্ধ ছড়ানো শুরু করবে। ট্রেনের টয়লেট থেকে কাওরান বাজারে নেমে পড়ি। মানে আমি তো কাওরান বাজারেই ছিলাম। আপনারাও আসেন।
৬ টা কক অর্ডার দিয়েছিলাম।
কি মনে করে সেই কর্তাকে ফোন দিলাম। তিনি ফোন ধরলেন। আলাপও হলো। তিনি তাঁর অপারগতার কথা বললেন। যাক কি আর করা।
কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। ছোট বেলায় কারক পড়েছিলাম। কোন কারক, এখন আর মনে করতে পারছি না।
তবে কারাওকে-তে বেসুরো সূরের লোকজনের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আমি নিজেও হাই ক্লাস বেসুরো হলেও কারাওকের কাছে যাইনি। সব ছাগল দিয়ে হাল চাষের কি দরকার। কিছু ছাগল কাঁঠাল পাতা খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকুক। তা না হলে পরিবেশের ইকোসিস্টেম নস্যাৎ হয়ে যাবে।
মুরগির আড়তে মাছের বাজার বসেছে। দুনিয়ার হাউকাউ। এর মধ্যে আমার কি দরকার ছিল কর্তাকে ফোন দেয়ার। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি না হয় দিয়েছি। কর্তা না ধরলেও পারতেন। তিনিও ফোন ধরলেন। আর এদিকে মুরগির আড়তে মাছের বাজার বসেছে। এর মাঝেও দোকানদারকে বললাম, আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই করো ভাই।
কর্তার কথা বুঝতেছি না। একটু সরে গেলাম। এর মাঝে মুরগীর দোকানদার জিজ্ঞেস করলো, মুরগী হাতে না মেশিনে ছিলবে। এর মাঝে টুকরির উৎপাত। লাগবে নাকি?
আমার কানে কর্তার ফোন। আমি মুরগীর দোকানদারকে হাতের ঈশারা দিলাম। আমি আরও একটু ফাকে গেলাম।কর্তার সাথে আলাপ হলো। কথা শেষ করার আগেই তার ছিলাছিলি শেষ। মানে ব্রয়লারের স্টাইলে মেশিনে ড্রেসিং করে দিয়েছে।
এইবার আমার হুশ হইলো। কক তো হাতে ছিলতে হবে।
দোকানদার বলল, এখন আর কিছুই করার নেই।
বউকে ফোন দিলাম।
'শোন, মিটিং ক্যান্সেল হইছে। কাওরান বাজার এসেছি। মাছ, মুরগী বাদে আর কি লাগবে?'
আমি খুব লয়াল স্বামী। যা যা বলবে সব নিয়ে যাবো। কণ্ঠে সেটা বোঝানোর জোর চেষ্টা চলছে।
'তেল নিয়ে এসো।'
বউ এর কণ্ঠ শুনতে পাই।
'আচ্ছা কক হাতে ছিলতে হয় না মেশিনে?'
আমি জানি হাতে ছিলতে হয়।
দেশে কি আর দেশী মুরগী আছে? সবই তো হয় কক না হয় ব্রয়লার। আর ওসব খেয়ে খেয়ে পুরা জাতিও হয় ব্রয়লারের মত ঝিমায়, না হয় অরিজিনাল দেশী হওয়ার ভাণ করে বেড়ায়।
বউয়ের উত্তরের অপেক্ষায় থাকি। কি কইতে কি কয়। আমিও প্রস্তুত।
-'না, হাতে ছিলতে হবে।'
-' এদিকে ভুলে মেশিনে ড্রেসিং করে ফালাইছে।'
-'ওভাবে তো বাচ্চারা খাবে না। আমাকে এখন কষ্ট করে ছিলতে হবে।'
যাক। বউয়ের মন বেশ উদার মনে হচ্ছে আজ।
তারপরেও একটা আশঙ্কা আছে। ছিলতে গিয়ে ঝামেলায় পড়লে, তার আঁচ এদিকেও গড়াতে পারে।