Posts

ফিকশন

বার্গার উপঢৌকনের নিশ্চয়তার নীতি

June 26, 2025

সাজিদ রহমান

140
View

হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি নিয়ে একটা মজার গল্প শুনেছিলাম।

কোয়ান্টাম ফিজিক্সের একটি মৌলিক নীতি হল, কোনো কণার অবস্থান (position) এবং ভরবেগ (momentum) একই সময়ে নির্ভুলভাবে জানা সম্ভব নয়। এই হল হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি।

গল্প শুনেছিলাম ওমেকার (Omeca Coaching centre) মিজান ভাইয়ের কাছে। মিজান ভাই সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই, তাদের জ্ঞাতার্থে সামান্য তথ্য দিই। সানরাইজ কোচিং এর যুগে তিনি ওমেকাকে সানরাইজের লেভেলে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপুর্ন মনে হয়েছে ওনার ফটোগ্রাফিক মেমরিকে। ৫ বছর পরেও একজনের সাথে দেখা হলে বলতে পারতেন, তুমি আবদুল কাদের, বাড়ি হবিগঞ্জ, বুয়েটে ২৮৭ তম হয়েছিলে, ঢাবিতে ১২১, মেডিকেলে রংপুর পেয়েছিলে। আমার মনে হয়েছে, হিজ মেমরি ওয়ার্ক্স এস জাকির নায়েক।

কোন এক বছরের রমজান ম্যাস। কোচিং এর ক্লাসে মিজান ভাই এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, হাইজেন বার্গের অনিশ্চয়তার নীতি কি? সেই ছেলে ভীষণ বার্গার পছন্দ করত। রোজার কারণে দিনের বেলায় বার্গার খেতে পারে না। মনে বড় কষ্ট। সেই কষ্ট থেকে সে উত্তর দেয়।

'রমজান মাসে বার্গার খাওয়া নিষেধ।'

এই গল্প শুনিয়ে মিজান ভাই হাসতে হাসতে বলেছিলেন, দুস্টমিরও লেভেল আছে। তোমার দুস্টমির মধ্যে যেন বুদ্ধির ছাপ থাকে।

২।

আজ সকালে মেয়ের স্কুলে ভর্তি। নুরনবীকে বললাম, আশেপাশে থাকেন। একটু পর নুরনবী ফোন দিয়েছে।

সার্জন গাড়ি ধরেছে। নন পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্কিং করে রেখেছে। মামলা দিবে।

বললাম, ফোনটা সার্জনকে দেন। অনুরোধ করে দেখি।

এতকাল করেছি জেলায় জেলায় চাকরি। এরকম ক্ষেত্রে অনুরোধ করলে ফেলতে পারতো না। মনে মনে হয়ত গালি দিত। তাও কাজ হতো।

এই শহরের ব্যাপার স্যাপারই আলাদা। এ এক কালো জাদুর মায়াবী শহর।

'মুই কি হনুরে, মোর বাপ চকিদার'।

এই বলে এখানে পার পেয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। আগে দেখেছি, উল্টা পথের পুলিশের বড় স্যারের গাড়িও আটকে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।

তবুও আশা ছাড়ি না। মনে মনে গুছিয়ে নেই, কি বলা যায়। গাইবান্ধার সিদ্দিক চোরা যেমন ধরা খেয়ে বলেছিল, স্যার আমার ভুল হয়েছে, মাফ করে দেন। ওরকমটাও বলা যাচ্ছে না। ভুল তো আমি করিনি।

নুর নবী ফোনে জানালো, সার্জন কথা বলবেন না।

-'কি আর করা। দেখেন কি করা যায়।'

এই বলে আমি ভর্তির কাজে মনোনিবেশ করলাম। একটু পর আবার ফোন।

-'স্যার, আপনার কাছে ১ হাজার টাকা হবে।'

-'হবে। নিয়ে যান।'

সে টাকা নিয়ে গেলো। গাড়ি সার্জনের হাজতে আটকা। মেয়ে ও তাঁর মা রিকশা করে আসলো। ভর্তির কাজ কর্ম শেষ। বের হবো। অফিসে যেতে হবে। নুর নবীকে ফোন দিলাম।

-'ঝামেলা মিটছে'?

-'জ্বী, স্যার'।

গিয়ে গাড়িতে উঠলাম। বাসায় ওদের নামিয়ে দিয়ে অফিসে যাবো।

-'মামলা দিছে'?

-'না'।

- 'টাকা নিছে'?

-'নেয় নি'?

আমি একটু আশ্চর্য হলাম। মামলা দিবে বলে আমার সাথে কথা বলল না। এখন শুনি মামলাও দেয় নি, টাকাও নেয়নি। কোন সুত্রে ফেলা যাচ্ছে না। আকবর আলী খান বাংলাদেশের অর্থনীতির যে রকমভেদ করে গেছেন, সেখানে পড়ছে না। হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সূত্রেও পড়ছে না।

-'তাহলে? কিভাবে ছুটলেন?'

-'সার্জন বললেন, বোতল নিয়ে গিয়ে পানি ভরায়ে নিয়ে আসো'। আনলাম। আমারে জিগায়, বাড়ি কোথায়? জেলার নাম শুনে বলে, ঐ বেডা, তুমিতো আমার এলাকার মানুষ। যাও, সাবধানে গাড়ি চালাইয়ো।'

-বাহ, বেশ তো।

মনে একটা তুলনা আসলো। ড্রাইভার ও সার্জন আমাদের এলাকার দিকের হলে ঘটনা এরকম হওয়ার চান্স ছিল খুব কম।

-'স্যার, এরপর একটা কাজ করছি'।

-'কি সেটা'?

-'সার্জন স্যারকে একটা বার্গার কিনে দিছি। নিবেই না। জোরাজোরি করে দিয়ে আসছি'।

-'হা হা । বেশ ভালো কাজ করেছেন'।

হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার বিপরীতে বার্গারের নিশ্চয়তার নীতি।

কি চমৎকার।

Comments

    Please login to post comment. Login